ফয়সালাবাদ মুস্তাফাবিয়া আলিম মাদ্রাসায় অধ্যক্ষ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্বরত মাওলানা আবুল কালাম সামছুদ্দিন। ইতঃপূর্বে নিকটাত্বীসহ প্রতিবেশীদের তিনি একই প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর ব্যবস্থা করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়েছেন। আবার নিকটাত্বীয়সহ প্রতিবেশী ও পরিচিতদের তারই কর্মস্থলে যোগদানের সুযোগ দিয়ে রুটি-রুজির ব্যবস্থা করে আবদ্ধ করেছেন কৃতজ্ঞতার বন্ধনে। চাকুরীজীবনের শেষ সময়ে এসে অধ্যক্ষ এবার তার নিজ কন্যাকে তারই প্রতিষ্ঠানে অফিস সহায়ক পদে সংযুক্ত করতে রীতিমত উঠেপড়ে লেগেছেন। দুরভিসন্ধি বাস্তবায়নে কখনও তিনি অতি সন্তর্পনে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্নের কুট-কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছেন। আবার কখনওবা লোক জানাজানি হওয়াতে মেয়ের চাকুরী নিশ্চিতে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি/সদস্যদের ‘ম্যানেজ’ করারও চেষ্টা করছেন। এদিকে প্রয়োজনে নিয়োগ বোর্ডের প্রশ্নকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের ‘সন্তোষ্ট’ করার অভিপ্রায়ও ব্যক্ত করেছেন ক্ষমতাধর এ প্রতিষ্ঠান প্রধান।
জানা যায় গত ১২ আগস্ট ঈশ^রীপুর ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী ফয়সালাবাদ মাদ্রাসায় নিরাপত্তা প্রহরী, আয়াসহ তিনটি পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। কৌঁসুলি অধ্যক্ষ একই দিনে অপর তিনটি পদে নিয়োগের আনুষ্ঠানিকতা চুড়ান্ত করলেও নিজ মেয়ের বিষয়টি প্রচারনার বাইরে রাখাতে বেমালুম চেপে যান। একপর্যায়ে চতুর অধ্যক্ষ মাত্র নয় দিনের ব্যবধানে ২১ আগস্ট শুধুমাত্র অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদের জন্য পৃথক একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। কঠোর গোপনীয়তায় মেয়েকে ওই পদে নিয়োগ দিতে তিনি বিজ্ঞপ্তির যাবতীয পত্রিকা বাজার থেকে তুলে নেন। এমনকি মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ছাড়া অন্যান্যের কাছে বিষয়টি গোপন রাখার পাশাপাশি তিনি নোটিশ বোর্ডে ঐ বিজ্ঞপ্তির কোন কপি সংযুক্ত করেনি। এ ছাড়া অন্যের উপর নির্ভরতার কারণে বিষয়টি জানাজানি হওয়ার শংকায় আবুল কালাম সামছুদ্দিন নিজে ব্যাংকে যেয়ে মেয়ে মাইমুনা, আপন ভাইয়ের মেয়েরসহ কোরাম পুরণের স্বার্থে তৃতীয় অপরজনের নামে তিনটি ব্যাংক ড্রাফট করে। এ সময় গোপনীয়তা রক্ষার জন্য তিনি নিজে ব্যাংকড্রাফট করার পাশাপাশি সেখানে নিজেই স্বাক্ষর করেন এবং ব্যক্তিগত মুটোফোন নম্বর সংযক্ত করেন। তবে বিজ্ঞপ্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের রাতে অধ্যক্ষের যাবতীয় জালিয়াতির বিষয়টি এলাকাবাসীর মধ্যে প্রচার হলে কৌশলে সে যাত্রায় বিজ্ঞপ্তি বাতিল করে নুতনভাবে গত ২৬ ডিসেম্বর ঐ একটি পদের জন্য পুনরায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
অভিযোগ উঠেছ্ েঅধ্যক্ষের কুট-কৌশল লোক জানাজানির কারণে এবার তিনি মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতিসহ অন্যান্যের কাছে ধর্না দিচ্ছেন। এমনকি অধ্যক্ষের পদে থাকার সুযোগ নিয়ে তিনি নিয়োগ বোর্ডের প্রধানসহ প্রশ্নকর্তা নির্বাচনের সুযোগকে কাজে লাগানোর চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন।
মোসলেম আলী নামের স্থানীয় এক গ্রামবাসী জানান মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতিসহ অভিভাবক ও দাতা সদস্যকে ‘ম্যানেজ’ করতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন অধ্যক্ষ। নিজের চাকুরী শেষ হওয়ার আগে তিনি তার মেয়ে মাইমুনাকে একই মাদ্রাসায় নিয়োগ দিতে উঠেপড়ে লেগেছে। ইতঃপূর্বে অসংখ্য নিয়োগ দিয়ে হাতিয়ে নেয়া লাখ লাখ টাকা অন্যান্যের সাথে ভাগবাটোয়ারার পর এবার তিনি সহযোগীতার বিনিময়স্বরুপ একই প্রতিষ্ঠানে নিজ কন্যার চাকুরীর নিশ্চিয়তা চান।
আবু জাফর গাজী নামের স্থানীয় একজনের দাবি ওই অধ্যক্ষ গত ১২ আগষ্টের নিয়োগ বোর্ডে উত্তীর্ন করার শর্তে মাদ্রাসার জন্য ভূমিদাতার পরিবারের সদস্য তানভীরের থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন। বয়স কম হওয়ার পরও চাকুরীর নিশ্চয়তা দিয়েও শেষ পর্যন্ত নিয়োগ বোর্ডকে হাতিয়ার করে চুড়ান্ত পর্যায়ে যেয়ে তানভীরকে আটকে দিয়ে বেশী টাকার বিনিময়ে নিজ প্রতিবেশীকে মনোননীত করেন ঐ অধ্যক্ষ। এ সময় নিয়োগ বোর্ড বয়স কম হওয়ায় তানভীরের আবেদন বাতিল করেছে বলে তিনি দাবি করলেও অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে ওই অধ্যক্ষের নির্দেশে তাকে প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ে উত্তীর্ন করা হয়েছিল।
স্থানীয়রা আরও অভিযোগ করেছেন আবুল কালাম সামছুদ্দিন যেকোন মুল্যে নিজ মেয়েকে তার প্রতিষ্ঠানে চাকুরী দেয়ার নানামুখী অপতৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। তার প্রায় দুই দশকের অধ্যক্ষ জীবনে সম্পন্ন হওয়া নিয়োগসহ তার সহায় সম্পদের বিষয়ে দুদকের তদন্তের দাবি জানান তারা।
এসব বিষয়ে অধ্যক্ষ আবুল কালাম সামছুদ্দিন জানান, একবার মাত্র তিনজন আবেদন করলেও বিশেষ কারণে আবারও বিজ্ঞপ্তি দিতে হয়েছিল। নিয়োগ বোর্ডে মনোনীত হলে তার মেয়ের নিয়োগ পেতে আপত্তি তোলার সুযোগ থাকবে না। তবে তিনি নিয়োর্গ বোর্ড এর সদস্যদের সাথে মেয়ের উত্তীর্ন হওয়া নিয়ে যোগাযোগ করার বিষয়ে জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে যান।