রাজধানীতে রীতিমতো বয়স্কর হয়ে উঠেছে ছিনতাইকারী চক্র। ঢাকাসহ সারা দেশে একের পর এক প্রকাশ্যেই ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। এসব ঘটনায় সর্বস্ব খোয়ানোর পাশাপাশি হতাহতও হচ্ছেন অনেকে। ছুরি, চাপাতি কিংবা আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে এমনকি প্রাণও হারাচ্ছেন অনেকে। যদিও রাজধানীতে ছিনতাই ও ছিনতাইকারীদের হাতে মৃত্যুর ঘটনা নতুন কিছু নয়। মানুষের কষ্টে উপার্জন করা নগদ টাকা, মোবাইল ফোন,স্বর্ণালঙ্কারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র নানা ভয়-ভীতি দেখিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা। এসব ঘটনাগুলো জনমনে আতঙ্ক বাড়িয়ে দিয়েছে। শুধু সাধারণ জনগণ নয়, পুলিশ সদস্যরাও এদের হাত থেকে রেহাই পাঁচ্ছে না। পুলিশের ভাষ্য মতে, ছিনতাইকারীরা বেশিরভাগ সময়ে ফাঁকা রাস্তা বেছে নেয়। তারা প্রায়ই ভোরবেলায় রেল ও বাস স্টেশনে ছিনতাই করে থাকে। মানুষের নির্বিঘ্নে পথচলার অধিকার কেড়ে নিচ্ছে ছিনতাইকারীরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে কিছুদিন ছিনতাই কমলেও আবার বাড়তে থাকে এ ধরনের অপরাধ। পুলিশের পরিসংখ্যান বলছে, রাজধানীতে ২০২১ সালে ছিনতাইয়ের মামলা ছিল মোট ৬৩ টি। বেশিরভাগই ছিল বড় ধরনের ছিনতাই। তার পর থেকে বর্তমানে ছিনতাইয়ের ঘটনার সংখ্যা আরও কয়েকগুণ বেড়েছে বলে জানান। বড় কোনো ঘটনা না ঘটলে নজরে আসে না। এর মধ্যে সাধারণ মানুষের পুলিশ রেকর্ড না করার প্রবণতাও বাড়ছে। ফলে অপরাধীরা থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। যারা পেশাদার ছিনতাইকারী তারা এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে পুলিশের পোশাক পরে অপরাধ করছে। এরা বিভিন্ন সময় মতিঝিল ব্যাংক পাড়া, উত্তরা এয়ারপোর্ট, কুড়িল বিশ্বরোড, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, সংকর ও অভিজাত এলাকাসহ রাজধানীর প্রবেশ মুখে সক্রিয় থাকে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটা স্পটে ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ বেশি ঘটে, যেমন: উত্তরা এয়ারপোর্ট, আজমপুর বাস-স্ট্যান্ড ও ৩০০ ফুট, মতিঝিল ব্যাংক পাড়া, ফার্মগেট, কাওরানবাজার, সায়দাবাদ, যাত্রাবাড়ী। রাস্তায় চলার পথে চেইনসহ স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল ছিনিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। অনেক সময় ছিনতাইকারীরা ধরা পড়ে এবং আইনের আওতায় দেওয়া হলে পুলিশ তাদের অনেকেরই অতীতে অপরাধের কোনো রেকর্ড নেই বলে জানান। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা, অপরাধ ও সমাজ বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করছেন, বেকারত্ব আর অভাবের তাড়নায় অনেকে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতির মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তাদের মতে, নিত্য-পণ্যসহ সব ধরনের জিনিসপত্রের দাম ও যাতায়াত খরচ বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে ও বাধ্য হয়ে অনেকেই সন্তানের হাত খরচ দেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে অনেক পরিবারের কিশোর-তরুণ চুরি ও ছিনতাইয়ে জড়াচ্ছে। তাই এসব বিষয়ে কঠোর আইন প্রয়োগ করেও কোনো লাভ নেই তারা মনে করন। কারণ এ সংকট যতক্ষণ পর্যন্ত কাটিয়ে উঠা সম্ভব না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এ অপরাধ প্রবণতা বাড়তেই থাকবে। তাই আশা করা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে পুলিশের টহল বা চেকপোস্ট বাড়ানোর পাশাপাশি সুনির্দিষ্ট ঘটনা ধরে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা গেলে। জননিরাপত্তার স্বার্থে ছিনতাইকারীদের দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও তৎপর হলে। ছিনতাই রোধে অবশ্যই ছিনতাইকারীদের ধরে শাস্তি নিশ্চিত করলে। ছিনতাইকারীদের জামিনে বেরিয়ে এসে তারা যেন আবার এসব অপরাধে জড়াতে না পারে তা নিশ্চিত করতে পারলে হয়তো ছিনতাইকারীদের কবল থেকে রেহাই পাওয়া যেতে পারে।