দেশে তথ্য গোপন করে বিদেশে টাকা পাঁচার করে সম্পদ গড়ার যেন এক মহোৎসব চলছে। দুর্নীতিবাজ রাজনৈতিক নেতা, আমলা, ব্যবসায়ীরা বিদেশে টাকা পাঁচার করে সম্পদ গড়ছেন। দুবাইয়ে ৪৫৯ বাংলাদেশির হাজার প্রপার্টি শিরোনামে একটি দৈনিক চলতি জানুয়ারি মাসের ১০ তারিখে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সুবীর নন্দী দাসসহ সুপ্রিম কোর্টের দু’জন আইনজীবী বিদেশী ব্যাংগুলো, বিশেষ করে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের অনেক নাগরিক ও কোম্পানির জমা রাখা (পাঁচার করা) অর্থ উদ্ধারে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ চেয়ে রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি শেষে ওই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি হাই-কোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। এ রিটের ধারাবাহিকতায় আইনজীবী সুবীর নন্দী দাস ১২ জানুয়ারি একটি আবেদন করেন। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাই কোর্ট সম্পদ ক্রেতা বাংলাদেশীদের ব্যাপারে অনুসন্ধান করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। দুনীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ ফাইন্যন্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর প্রতি নিদেশ দেওয়া হয়েছে। রুলে বিদ্যমান আইনে বিধান ভঙ্গ করে যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান মানিলন্ডারিং করে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে বেআইনি ভাবে এপার্টমেন্ট ও বাড়ি বা অন্য কোনো সম্পদ কিনেছেন,তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা কেন বেআইনি হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। বেআইনি ভাবে বাড়ি, ফ্ল্যাট ও অন্য কোনো সম্পত্তি ক্রয়কারী এবং মানিলন্ডারিংয়ে জড়িত ব্যক্তির বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। অনুসন্ধান কার্যক্রমের অগ্রগতি জানিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে উপরোল্লিখিত চার সংস্থাকে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এদিকে ক্ষমতাশীল আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মোঃ আবদুল সোবহান মিয়া (গোলাপ) তার নির্বাচনী হলফ নামায় যুক্তরাষ্ট্রে থাকা বাড়ি, ফ্ল্যাটের কথা উল্লেখ করেন নি। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব বহাল থাকা অবস্থায় নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন বলে খবর প্রকাশ করেছে, অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের বৈশি^ক নেটওয়ার্ক ‘অর্গানাইজড ক্রাইম এ- করাপশন রিপোটিং প্রজেক্ট’ বা ও সিসিআরপি। সংস্থানটি গত ১৩ জানুয়ারি তাদের ওয়েভ সাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে আবদুল সোবহান গোলাপের ন’টি প্রপার্টি বা সম্পত্তি (ফ্ল্যাট বা বাড়ি) রয়েছে। ২০১৪ সালের পর তিনি এসব সম্পত্তি কিনেছেন। যার মূল্য ৪০ লাখ মার্কিন ডলারের বেশি। ডলারের বর্তমান বিনিময় মূল্য অনুযায়ী প্রায় ৪২ কোটি টাকা। কিন্তু ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সময় তিনি ইসি তে জমা দেওয়া হলফ নামায় এসব সম্পদের কথা উল্লেখ করেন নি। এ ব্যাপারে আবদুল সোবহান গোলাপ এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেন নি। এ ব্যাপারে আবদুল সোবহান গোলাপ এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেন নি। কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের মধ্যে বিষয়টি ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। দল যাতে বিব্রতকর অবস্থায় না পড়ে সেজন্য তারই উচিত বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তি করা। অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ব্যক্তিদের তৎপরতা আরও বাড়াতে হবে এবং দেশ থেকে যাতে অর্থ পাঁচার না হতে পারে তার যথার্থত ব্যবস্থা নিতে হবে। আর যে গুলো পাঁচার হয়েছে, সেগুলো ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থাসহ সংশ্লিষ্টদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। আমরা আশা করবো হাইকোর্টের বেধে দেওয়া ৩০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থা দুবাইয়ের ৪৫৯ বাংলাদেশির সম্পদের তথ্য বিবরণী জমা দিতে পারবেন।