আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি। ১৯৫২ সালের এ দিনে (৮ফালগুন, ১৩৫৮, বৃহস্পতিবার ) বাংলাকে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলি বর্ষণে অনেক তরুণ শহীদ হন। তাদের অন্যতম হলেন, রফিক,জব্বার, শফিউর,সালাম বরকত সহ অনেকেই। তাই এদিনটি শহীদ দিবস হিসেবে চিহিৃত হয়ে আছে। তবে ১৭ নভেম্বর ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। বিশ্বের যত ভাষাভাষী মানুষ আছে তারাসহ অবহেলিত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী আছে, তাদের মাতৃভাষা সংরক্ষণের উদ্যোগ নেবার অনুপ্রেরণা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। শুধু তাই নয়, ঐতিহাসিক ভাবে অমর একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতিসত্তা ও ভাষাভিত্তিক স্বাতন্ত্র্য রক্ষাসহ সব গণতান্ত্রিক সংগ্রাম ও আন্দোলনের উৎস ও প্রেরণা। অথচ আজ বাঙ্গালির স্বতন্ত্র ভূখণ্ড বাংলাদেশের স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দি পেরিয়ে এলেও সব ক্ষেত্রে এখনো বাংলা চালু হয় নি। সড়কে বা বিপণী বিতানের সাইন বোর্ডে ইংরেজি, অফিস আদালতে ইংরেজির ব্যবহার দেখা যায়। আইনি প্রতিশব্দের মতো ঠুনকো অজুহাতে উচ্চ আদালতের রায়ও ইংরেজিতে লিখছেন বিচারপতিরা। তবে কতিপয় বিচারক বাংলায় রায় দিয়ে ভাষা শহীদের প্রতি যথার্থ সম্মান প্রদর্শন করেছেন। সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে ১৯৮৭ সালে বাংলাভাষা প্রচলন আইন করা হলেও দেওয়ানি ও ফৌজদারি কার্যবিধিতে অধস্তন আদালতের ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষা ব্যবহারের কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। হাই কোর্ট বিধিমালা ১৯৭৩ সংশোধনের মাধ্যমে হাই কোর্ট ও আপিল বিভাগের বাংলাও ইংরেজি দু’ভাষা ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। ১৯৮৭ সালে বাংলাভাষা প্রচলন আইন হওয়ার পর আদালত পাড়ায় হৈচৈই পড়ে গিয়েছিল। আইনটি চ্যালেঞ্জ করে রিট করা হয়। ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে রায়ে ইংরেজি ভাষা ব্যবহারে কোনো বাধা থাকেনি। আশ্চর্যজনক হলেও ওই রিটের বিরুদ্ধে সরকার আপিল করে নি। যে বাংলাভাষার জন্য মানুষ রক্ত দিয়েছে, সেই ভাষাকে সম্মান দেওয়ার জন্য আইনটিকে ধরে ওই রিটের বিরুদ্ধে আপিল হওয়া উচিৎ। আসলে বাংলাভাষা সর্বস্বরে চালু করতে রাজনৈতিক স্বদিচ্ছা জরুরি। বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার, একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হওয়ার জন্য বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগ রয়েছে। তাই আমরা আশা করবো বাংলাভাষা সব স্তরে চালু করতে তিনি উদ্যোগী হবেন। একুশে ফেব্রুয়ারি দিনটি এখন শুধুই আমাদের নয়, এটা গোটা বিশ্ববাসীর। কাজেই এর আবেদন যথার্থ ভাবেই আমাদের মাঝে প্রতিবিম্বিত হতে হবে। আমার ভাষা, আমার সংস্কৃতি, আমার গর্ব। তাই একুশে প্রথম প্রহর থেকেই পুরো বাঙ্গালি জাঁতি কৃতজ্ঞ চিত্তে ভাষা শহীদের স্মরণে হৃদয়ের সবটুকু আবেগ ঢেলে শ্রদ্ধা জানায়।