দেশের রাজধানীর ঢাকায় প্রায় স্কুলের সামনেই দেখা যায় আশপাশে কাঁচাবাজার ও কলকারখানা অবস্থিত। স্কুলের পাশ দিয়ে যানবাহন চলাচলে ধুলা ঢুকছে বিদ্যালয়ের ভেতর। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, যানবাহন থেকে নির্গত গ্যাস ও অতি ক্ষুদ্র বস্তুকণা শ্রেণীকক্ষে আটকে থাকছে। আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ কমিউনিকেশন-এ আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ কমিউনিকেশন-এর গবেষণায় বলা হয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডব্লিউএইচওর মানমাত্রা হচ্ছে প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ৪৫ মাইক্রোগ্রাম পিএম ১০ থাকতে হবে, পিএম ২.৫ থাকবে ১৫ মাইক্রোগ্রাম। এর চেয়ে বেশি থাকলে তা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। শ্রেণীকক্ষে হেজারডাস বা আপদ পর্যায়ের গ্যাস ও মারাত্মক ক্ষতিকর পর্যায়ের দূষিত বায়ু পাওয়া গেছে। ফলে স্বাভাবিক নিশ্বাস নিতে পারছেনা অনেক শিশু। শিশুরা দিনের ১৭ শতাংশ সময় কাটায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। যে কারণে শ্রেণীকক্ষ ও খেলার মাঠের পরিবেশ সাধারণভাবে নিরাপদ থাকার কথা। কিন্তু রাজধানী ঢাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রাঙ্গণ দূষিত বায়ু ও বিষাক্ত গ্যাসে ভরে উঠছে। আমাদের দেশে স্কুলগুলোর বেশির ভাগই প্রধান সড়ক ও বাণিজ্যিক এলাকার গলির মধ্যে। যে কারণে বাতাস প্রবাহের জায়গা কম। আবার দূষিত বাতাস সহজে স্কুলে প্রবেশ করে আর বের হতে পারে না। যার শিকার হচ্ছে শিশুরা। সম্প্রতি এক গবেষণায় শ্রেণীকক্ষে থাকা ২৫০ জন শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার স্বাভাবিক ক্ষমতা পরীক্ষা করা হয়। নিশ্বাস পরিমাপ করার বিশেষ যন্ত্র ফ্লো মিটার দিয়ে করা ওই পরীক্ষায় ৪০ শতাংশ শিশু স্বাভাবিকভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারেনি। আর বেশির ভাগ শিশুর বায়ুদূষণ-জনিত কোনো না কোনো সমস্যা পাওয়া গেছে।পঞ্চম থেকে সপ্তম শ্রেণিতে পড়া এবং ৯ থেকে ১২ বছর বয়সী এসব শিশুর মধ্যে দৈবচয়নের ভিত্তিতে জরিপটি করা হয়। তাতে দেখা যায়, তারা ঠাণ্ডা, কাশি, সর্দি, জ্বর, মাথাব্যথাসহ নানা সমস্যায় ভুগছে। দূষিত বায়ু ও গ্যাসের কারণে তাদের ফুসফুস ঠিকমতো কাজ করছে না বলে গবেষণায় মনে করা হয়। একজন শ্রেণীকক্ষ ও বিদ্যালয়ের আঙিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারী সকলের সচেতনতা দরকার। সাম্প্রতিক সময়ে ঠাণ্ডাজনিত রোগ, ডেঙ্গু, চিকন-গুনিয়া ও করোনার মত ভয়াবহ ভাইরাস আমাদের এমন শিক্ষাই দিয়ে গেছে। নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে। এজন্য শিক্ষকদের শ্রেণীকক্ষে থিক্ষার্থীদের পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে সচেতনতামূলক শিক্ষা দিতে হবে। পরিচ্ছন্ন কর্মীদের সবসময় শ্রেণীকক্ষ, খেলার মাঠ ও অন্যান্য সব কিছু সর্বদা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। শ্রেণীকক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রাখতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হতেও নির্দেশনা দেয়া রয়েছে। অনেক বিদ্যালয়ে দেখা যায় দরজার পাশাপাশি কক্ষগুলোতে ভ্যানটিলেশনের জন্য পর্যাপ্ত জানালা নেই। এতে অতি ক্ষুদ্র বস্তুকণা বাতাসের সঙ্গে শ্রেণীকক্ষে টুকছে ঠিকই কিন্তু বের হতে পারছে না আটকে থাকছে। সুতরাং প্রতিটি স্কুলেই শ্রেণীকক্ষে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভ্যানটিলেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশুরা থাকবে নিরাপদ ও সুস্থ।