ঝিনাইদহের শৈলকুপার ডাকুয়া নদী ও খালের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে। ভূমিদস্যুদের দখলে চলে গেছে। শুধু মানচিত্রে ঠায় পেয়েছে সরকারী খাল ও নদীটি। সরকারী নদী ও খাল রক্ষায় সরকার ও প্রধানমন্ত্রী সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিলেও শৈলকুপায় বাস্তবে এই নদী ও খালের এখন কোন অস্তিত্ব নেই ! যে ডাকুয়া কে কেন্দ্র করে উপজেলার কাঁচেরকোল ইউনিয়ন ও আশপাশে সমৃদ্ধ জনপদ গড়ে ওঠে, যে ডাকুয়া নদীই এখন মৃত। ডাকুয়া নদী ও খাল ভূমিদস্যুদের হাত থেকে পুনঃ উদ্ধারের দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী। সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার ৫নং কাঁচের কোল ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে ডাকুয়া খাল উত্তর মির্জাপুর থেকে বৃত্তিপাড়া পর্যন্ত ২ কি. মি. এলাকাজুড়ে থাকলেও এখন এর কোন নমুনা পাওয়া যাইনি। এটি উত্তর মির্জাপুর মৌজার ৭৩৪ দাগে গিয়ে পড়েছে। ম্যাপে ছাড়া বাস্তবে ডাকুয়া নদীর কোন অস্তিত্ব নেই। দখলদাররা বিভিন্ন ফসলাদী চাষাবাদ করছে, গাছ-গাছালি সহ দোকান-পাট ও পাকা স্থাপনাও তৈরী করেছে পুরা এলাকা জুড়ে। আবার কোথাও কোথাও সম্পূর্ণ ভরাট করে বিলীন করে দেয়া হয়েছে এর অস্তিত্ব। সিএস রেকর্ডে ডাকুয়া নদীর শাখা প্রশাখা সরকারী খাল হিসাবে থাকলেও তবে বর্তমানে খালের জায়গা প্লট আকারে বিভিন্ন ব্যক্তি নামে রেকর্ড হওয়ায় অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ছে খালটি। জানা যায়,ডাকুয়া’র বিস্তৃতি এতটাই বড় ও চওড়া ছিল যা স্থানীয়রা নদী হিসাবে থাকলেও বাস্তবে এর শাখা-প্রশাখা ব্যক্তি নামে নামে রেকর্ড করে দিয়েছে সরকারের অসাধু কর্মকর্তারাই। ডাকুয়ার বেশ কয়েকটি শাখা-প্রশাখা ছিল যা নদীর মতোই প্রবাহমান ও ভরা যৌবন ছিল। এই নদী ও খাল কে ঘিরে কৃষি, চাষাবাদ হতো মাঠের পর মাঠ। জেলেরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত, গড়ে ওঠে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের বসতি। স্বাধীনতার আগে এই খাল কে কেন্দ্র করে স্থানীয় মানুষ তাদের জীবিকা নির্বাহ সহ যাবতীয় কাজ করত সরকারী বিশাল খালের উপর নির্ভর করে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, স্বাধীনতার পর নানা সময় ও আর এস জরিপে উত্তর মির্জাপুর অংশে খালের ৮১ ও ৫৬৮ নং দাগ বিভিন্ন ব্যক্তি নামে রেকর্ড হয়েছে। সেটেলমেন্ট ও ভ’মি অফিসের দুর্ণীতিগ্রস্থ অসাধু কর্মকর্তারা এসব সরকারী খালের জায়গা বিলীন করে দিয়েছে। ডাকুয়া নদী ও খালের বর্তমান কিছু অংশের রেকর্ডমূলে মালিক বাবলু জোয়ার্দ্দার বলেন, আমার বাপ দাদাদের আমল থেকে এই জমি আমরা ভোগদখল করছি। এটা সরকারী খাল বা নদীর জায়গা নয়। স্থানীয় বাসিন্দা শামীম বিন সাত্তার জানান, বাবাদের কাছে শুনেছি এখানে ডাকুয়া নামে বড় নদী ছিল। এখন সবকিছুর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে।ইচ্ছামত দখলদাররা নদী দখল করে নিয়েছে। সরকারী খালের আরএস রেকর্ড বাতিল সহ অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। ডাকুয়া খাল ও নদী রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভূমি অফিস বরাবর বেশ কয়েক বার চিঠি দিয়েও কোন ফল পাচ্ছি না।
কাচেরকোল ইউপি চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন জোয়ার্দ্দার বলেন,ডাকুয়া নদী ভূমিদস্যুরা দখল করে নিয়েছে, বর্তমান এর কোন অস্তিত্ব নেই।দখলদারদের কাছ থেকে ডাকুয়া নদী ফিরিয়ে আনা এখন সময়ের দাবী।
শৈলকুপার সহকারী কমিশনার (ভূমি) বনি আমিন অবশ্য সরকারী খাল ও নদীর জায়গা উদ্ধারে তৎপর হয়েছেন। তিনি এসব জায়গা উদ্ধারে দ্রুত পদক্ষেপের আশ^াস দিয়েছেন।