ঢাকাসহ সারা দেশে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। এসব ঘটনায় সর্বস্ব খোয়ানোর পাশাপাশি হতাহতও হচ্ছেন অনেকে। মানুষের কষ্টে উপার্জন করা নগদ টাকা, মোবাইল ফোন, স্বর্ণালঙ্কারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা। পুলিশের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৮ সালে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ছিনতাই মামলা হয়েছে ৭৮টি। ২০১৯ সালে ১১৯টি। আর ২০২০ সালে সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭৬টি। তবে ভুক্তভোগীদের মতে, ছিনতাইয়ের প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি। ঢাকার সিএমএম আদালতের জিআর খাতার তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত ১০ বছরে শাহবাগ, রমনা, মতিঝিল, বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী, ডেমরাসহ ১৫টি থানা এলাকায় ছিনতাই হয় অপেক্ষাকৃত বেশি। ছিনতাইকারীদের অধিকাংশই মাদকাসক্ত। যখন তাদের মাদকের প্রয়োজন পড়ে, তখন তারা টাকার জন্য চুরি-ছিনতাই থেকে শুরু করে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। মাদকাসক্তির সঙ্গে অপরাধের একটি বড় যোগসূত্র রয়েছে। মাদকাসক্তি এক ধরনের মানসিক রোগ। মাদকের প্রতি নির্ভরশীলতা তৈরি হওয়ার কারণে ব্যক্তির স্বাভাবিক চিন্তাশক্তি থাকে না, বরং মাদকই তাকে নিয়ন্ত্রণ করে। যখন তার মাদকের প্রয়োজন পড়ে, তখন সে টাকার জন্য চুরি-ছিনতাই থেকে শুরু করে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। ঠিক তেমনি এসব ঘটনা ঘটাতে গিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করতেও দ্বিধাবোধ করেনা ছিনতাইকারীরা। সাম্প্রতিক সময়ে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে হতাহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে অহরহ। তবে আহতদের অনেকেই আইনি ঝামেলায় পড়তে চান না, ফলে পুলিশের কাছেও যান না। হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে যান। ছিনতাইকারীরা বেশিরভাগ সময় ফাঁকা রাস্তাকেই বেছে নেয়। যেসব রাস্তায় যানজট হয় সেগুলো তারা এড়িয়ে চলে। তারা প্রায়ই ভোরবেলায় রেল ও বাস স্টেশনে যাতায়াতকারী যাত্রী ও অফিসগামীদের অনুসরণ করে ছিনতাই করে থাকে। তাই দেখা যায় রাস্তা খালি থাকার কারণে রাতে এবং ভোরবেলা ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি হয়ে থাকে। ছিনতাইকারীদের মূল টার্গেটে থাকে পথচারী নারী ও ব্যবসায়ীরা। রিকশাযাত্রী কোনো নারীকে পেলেই তারা মোটরসাইকেল ও অটোরিকশা থেকে টান দিয়ে ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে পালায়। ছিনতাইকারীদের কিছু গ্রুপ টার্গেটভিত্তিক কাজ করে। মাদকের চালান আটকাতে না পারলে মাদকাসক্তদের ছিনতাই থেকে ফেরানো অসম্ভব। কারণ যখই মাদকাসক্তরা নেশাদ্রব্য গ্রহণের ইচ্ছে পোষণ করে তখনই তাদের প্রয়োজন হয় টাকার। আর এই টাকার প্রয়োজন মিটাতে তারা এইসব ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়ে থাকে। আবার অনেক সময় দেখা যায় ছিনতাইকারীদের অনেকেই ভালো পরিবারের সন্তান। সঙ্গদোষে মাদকাসক্তে পরিণত হয়ে তারা ছিনতাইয়ের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। ছিনতাইকারীদের আঘাতে যখন-তখন প্রাণ হারাচ্ছে নিরীহ মানুষ। আবার অনেকে আহত হয়ে বয়ে বেড়াচ্ছে দুর্বিষহ জীবন। ছিনতাইকারীদের প্রতিরোধে পুলিশের তৎপরতা বাড়িয়ে জনগণের জানমালের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। ছিনতাইয়ের ঘটনা যেন আর না বাড়ে, এমন প্রত্যাশা আমাদের সবার। জনমনে আতঙ্ক কাটাতে ছিনতাইকারীদের সমূলে নির্মূল করা অতীব জরুরী।