বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তন এককভাবে মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। হুমকি মোকাবিলায় জরুরি উদ্যোগ নেওয়ার সময় এসেছে। বাংলাদেশ বর্তমানে প্রায় ১৬ কোটি মানুষের দেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ। এখানকার জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ শিশু। লোকালয়ের শিশুদের ঝুঁকি বড়দের চেয়ে বেশি। গরম ও অন্যান্য জলবায়ু সংক্রান্ত সমস্যার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার সক্ষমতা বড়দের তুলনায় তাদের কম। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হওয়ায় তাদের ডায়রিয়া ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। পুষ্টিহীনতায় ভোগারও ঝুঁকি থাকে এসব শিশুদের। বিশ্বব্যাংকের গবেষণা বলছে, স্বাস্থ্যের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের নতুন প্রমাণ পাওয়া গেছে। ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে। একই কারণে দেশের মানুষের মধ্যে বিষাদ ও উদ্বেগ বাড়ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের মানুষ বর্ষার চেয়ে শুষ্ক মৌসুমে বেশি বিষাদগ্রস্ত থাকে। কম পরিমাণে তাপমাত্রা বৃদ্ধির অর্থ হচ্ছে বিষাদগ্রস্ততার আশঙ্কা কমে যাওয়া। গবেষণায় বলা হচ্ছে, শুষ্ক মৌসুমের তুলনায় দেশের মানুষ বর্ষা মৌসুমে বেশি উদ্বেগে থাকে। গড় আর্দ্রতা বাড়লে শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ উদ্বেগ বেড়ে যায়। আর গড় তাপমাত্রা বাড়লে উদ্বেগ বাড়ে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মশা বা মশার মতো কীটপতঙ্গের বসবাসের উপযোগী পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে ২৪ দশমিক ৫ রোগ হয় কীটপতঙ্গের কারণে। শুষ্ক মৌসুমে এই হার ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ। কীটপতঙ্গ-বাহিত রোগের প্রকোপ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় ঢাকা ও চট্টগ্রামে বেশি দেখা গেছে। অন্যদিকে বর্ষার চেয়ে শুষ্ক মৌসুমে পানিবাহিত রোগ বেশি হয়। শ্বাসকষ্টজনিত রোগও শুষ্ক মৌসুমে কিছু বেশি থাকে। গবেষকেরা বলছেন, আর্দ্রতা ও গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে পানিবাহিত রোগ বৃদ্ধির সম্পর্ক আছে। দেশের অন্য এলাকার তুলনায় ঢাকা ও চট্টগ্রামে শুষ্ক মৌসুমে শ্বাসতন্ত্রের রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। এর কারণ সম্ভবত এই দুই এলাকায় বায়ু দূষণ বেশি। সরকার জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় বিপুল অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছে তবে বিনিয়োগের সঙ্গে আরও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, আর্থিক পরিকল্পনা, তদারকি, রিপোর্টিং ও কার্যকর নীতি হতে হবে। সরকারের সাথে সাথে দেশের জনগণকেও এই জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে ধারনা রাখতে হবে এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।