নিত্য পণ্যের মূল্য লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। মূল্য বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছে। শবে বরাতে আর এক দফা মূল্য বৃদ্ধির আশঙ্কা। সাধারণ মানুষের দাবী বাজার মনিটরিং জোরদার না করলে রোজার মাসে কষ্ট আরো দ্বিগুণ হবে।
যশোরের ঝিকরগাছার বাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে নিত্য পণ্যের মূল্য। এর ফলে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। দিনমজুর সাধারণ মানুষ এবং মধ্যবিত্ত মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। চাকরিজীবীরাও আয়ের সাথে ব্যয়ের যোগান দিতে পারছেন না। গত এক সপ্তাহে কাঁচাবাজার, মসলা এবং মাংসের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে।
সরেজমিনে রোববার সাপ্তাহিক হাটের দিনে দেখা গেছে- সাত থেকে দশ দিনের ব্যবধানে তরিতরকারির দাম ৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি কেজি কলা ১৫ টাকা থেকে ২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে, ১০ টাকার টমেটো ২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে, ২০ টাকার বেগুন ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, ৪০ টাকার মেটে আলু ৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে, ১৫ টাকার সিম ৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে, ২০ টাকার ডাটা ৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে, প্রতি পিস ১৫ টাকার লাউ ২৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে, সাহস বেড়েছে কাঁচা মরিচে। ৮০ টাকার মরিচ ১৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ৪০ টাকার বরবটি ৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ১৫ টাকার গোল আলু ২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা তরকারি ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, তরকারির মূল্য বৃদ্ধির কারণে ক্রেতাদের সবজি ক্রয়ের পরিমাণ কমেছে, যে ক্রেতা ১ কেজি সবজি কিনতেন তিনি এখন ৫০০ গ্রাম সবজি কিনছেন। সবজি কিনতে আসা ক্রেতা রুস্তম আলী বলেন, কয়দিন আগে সবজির দাম কম ছিল এখন আবার বেড়ে গিয়েছে।
অন্যদিকে মুদি দোকানের দ্রব্যের দামও প্রতি কেজিতে প্রচুর বৃদ্ধি পেয়েছে। ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে মসুরের ডাল ৯০ টাকা থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, ছোলার ডাল ৮০ টাকা থেকে ৯০ টাকা বিক্রি হচ্ছে, মুগের ডাল ১১০ টাকা থেকে ১২৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে, জিরা ৪৬০ টাকা থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, লবণ ৩২ টাকা থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, এলাচ ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে, লবঙ্গ ১ হাজার ১০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে, দারুচিনি ৩২০ টাকা থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, চিনি ১০০ টাকা থেকে ১১৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে, ৮০ টাকার ছোলা ৮৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে, বিভিন্ন ধরনের ডিটারজেন্ট পাউডার প্রতি কেজি ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে, সাবানেও একই অবস্থা। মুদির মাল কিনতে আসা ক্রেতা আশরাফ হোসেন জানান, মসলার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তরকারিতে এখন মসলা খাচ্ছি না বলেই চলে। প্রয়োজনের তুলনায় এখন অনেক কম মসলা কিনছি। মুদি দোকান ব্যবসায়ী সন্দীপ কুমার মোদক বলেন, ক্রেতাগন এখন প্রয়োজনের তুলনায় কম পণ্য কিনছেন। বাজার মূল্য বৃদ্ধির কারণেই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
মাংসের বাজারেও দেখা দিয়েছে চরম দুর্দশা। সাত থেকে দশ দিনের মধ্যে প্রতি কেজি বিভিন্ন ধরনের মুরগির মাংস দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ৫০ থেকে ৮০ টাকা। দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে পল্টি মুরগি ২০০ টাকা থেকে ২৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে কাট অফ পল্টি মুরগির মাংস ২৬০ টাকা থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে সোনালি মুরগি ২৮০ টাকা থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাটা পোল্টির মাংস কিনতে আসা ভ্যান চালক শহিদুল জানান, পোল্টি গোস্তের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন ২ কেজির জায়গায় এক কেজি কিনছি। আয় ইনকামও কমে গিয়েছে। তিনি আরো বলেন সামনের শবেবরাতের মাংস কিনে খেতে পারবে কিনা বলতে পারছিনা। সাড়ে তিনশ টাকায় কাটা পোল্টির মাংস কিনতে হতে পারে। পোল্টির মাংস বিক্রেতা হাফিজুর রহমান জানান, মাংস ক্রেতারা তাদের পূর্বের চাহিদার তুলনায় এখন অনেক কম মাংস কিনছেন।
একই অবস্থা গরুর মাংসের বাজারে।বিগত সাত থেকে ১০ দিনে সেখানে প্রতি কেজিতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে আগামী শবে বরাতের বাজারে প্রতি কেজি মাংসের দাম সাড়ে সাতশ টাকায় দাঁড়াতে পারে। এখন প্রতি কেজি মাংস ৬৬০ টাকা থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হার বাদে মানুষের কেজি সাড়ে ৭০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে - এমনটাই জানালেন মাংস ব্যবসায়ী কিতাব আলী। গরুর মাংস কিনতে আসা আবদুস সালাম জানান আগামী শবেবরাতের মাংসের দাম আরো ৫০ টাকা বেড়ে যাবে। অর্থাৎ সাধারণ মাংস ৭০০ টাকার জায়গায় সাড়ে ৭০০ টাকা কিনতে হতে পারে।
খাসির মাংস এখন অনেকে খেতে ভুলেই গিয়েছেন। প্রতি কেজি খাসির মাংস গত ১০ দিনে ৯০০ টাকা থেকে এখন ১ হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতা দীপক কুমার ঘোষ জানান, খাসির মাংসের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন আমাদের সম্প্রদায়ের মানুষ সোনালী মুরগি এবং পোল্টি মুরগির দিকে ঝুঁকে পড়েছেন।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কথা জানতে চাওয়া হলে বাঁকড়া ডিগ্রী কলেজের গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক প্রশান্ত কুমার পাল জানান, আগে টিউশনি করতাম না, পণ্য মূল্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এখন টিউশনি করা ধরেছি। আরেকটি কথা হলো- ডলারের মূল্য বিবেচনা করলে দেশের সকল চাকরিজীবী মানুষের বেতন কমে গিয়েছে। এ কারণে চাকরিজীবীরাই খুব অস্বস্তিতে রয়েছেন। এজন্য বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারকে কঠোর অবস্থানে থাকতে হবে। সরকারি চাকরিজীবী এমদাদুল হক জানান, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। রোববার বিকেলে ভারপ্রাপ্ত ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সহকারি কমিশনার (ভূমি) কে এম মামুনুর রশিদ জানান - রোজার আগে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।