মানুষের মৌলিক মানবাধিকারের মধ্যে ভোক্তা অধিকার অন্যতম। যদিও দেশে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে বেশকিছু আইন রয়েছে কিন্তু নিজেদের অধিকার ও আইন সম্পর্কে অসচেতনতার কারণে প্রতিনিয়ত প্রতারণার শিকার হতে হচ্ছে। ২০০৯ সালে যখন ভোক্তা অধিকার আইন জারি হয়, তখন ই-কমার্স বা অনলাইনে বেচাকেনা তেমন ছিল না। তবে সাম্প্রতিক কালে অনলাইনে কেনাবেচা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ক্রেতার স্বার্থ সুরক্ষার কোনো নীতিমালা না থাকায় বিক্রেতা বা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ইচ্ছেমত শর্ত আরোপ করে চলেছে, যে কারণে ক্রেতা বা সেবাগ্রহীতারা প্রতারিত হলেও প্রতিকার পাঁচ্ছেন না। ভোক্তারা সব শক্তির উৎস হয়েও আজকাল অসাধু ব্যবসায়ী চাতুর্যপূর্ণ বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট করে ক্রেতাকে ঠকাচ্ছে। ওজনে কম, নিম্নমানের পণ্য দেওয়া, মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য দেওয়া বা মূল্য অনুযায়ী সেবা না দেওয়া নানাভাবে প্রতারিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নেওয়া যায়। অথচ এটা অনেকেই জানে না বা জানলেও তা করছে না। রমজান মাস ইবাদতের মাস। পৃথিবীর বিভিন্ন মুসলিম দেশে রমজান মাস উপলক্ষে দ্রব্যমূল্য কমানো হলেও আমাদের দেশে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে রমজান মাসকে উপলক্ষ করে সবজি, ফলমূল এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের গতি হয় ঊর্ধ্ব। ভোক্তা হিসেবে পরিতাপের বিষয়, সত্যিই আমরা অবৈধ সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে অসহায় জীবনযাপন করছি। সরকার ভোজ্যতেলের মূল্য নির্ধারণ করে দিলেও ভোক্তাদের অতিরিক্ত দামে তা ক্রয় করতে বাধ্য করছেন। এ অবস্থায় নিম্ন-মধ্যবিত্ত আয়ের লোকজন টিসিবির ট্রাকের পেছনে ছুটেও কাঙ্গক্ষিত পণ্য লাভ করতে পারছেন না। অনেকে সামনে রমজান উপলক্ষে আরও মূল্য বেড়ে যাবে- এই ভয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পণ্য বাসায় মজুত করে রাখছে; এতে জোগান ও চাহিদার ভারসাম্যহীনতার কারণে অনেকেই অর্থ থাকা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় পণ্য পেতে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে। ভোক্তাদের অভিযোগ ছাড়াও স্বপ্রণোদিত হয়ে বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, পচা-বাসি বা মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রি, ভেজাল পণ্য তৈরি, ওজন ও পরিমাপে কারচুপি এবং নির্ধারিত দামের অধিক দামে পণ্য বিক্রিসহ সংঘটিত ভোক্তাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধে অভিযোগ আসলে বাজার অভিযান পরিচালনা করা হয়। পাশাপাশি সবগুলো অভিযোগের নিষ্পত্তিও করা হয়। ভোক্তা অধিকারবিরোধী কার্য প্রতিরোধ এবং ভোক্তা অধিকার লঙ্ঘনজনিত বিরোধে নিষ্পত্তিতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ভূমিকা নিঃসন্দেহ প্রশংসনীয়। আগামী দিনে অধিদপ্তরের কার্যক্রম আরও জোরদার হলে ভোক্তারা হয়রানি ও প্রতারণা থেকে রক্ষা পাবে বলে আমরা আশাবাদী এবং জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কমিটির কার্যক্রম নিয়মিত তদারকি ও পর্যবেক্ষণ করা গেলে তৃণমূলের ভোক্তারাও উপকৃত হবেন, এছাড়াও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন কার্যকরে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে আসতে হবে এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। যাতে সরকার আমাদের দেশে এ আইন প্রয়োগে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন।