মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশে রোজা শুরু হচ্ছে। বাংলাদেশে রমজান এলেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ে। সেখানে এবার রোজার আগেই বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়তি। রমজানে চাহিদা বাড়ে এমন পণ্যের আমদানিও গত বছরের তুলনায় কমেছে। রমজানের প্রায় দেড় মাস বাকি থাকলেও গত দুই সপ্তাহে মুরগি ও ডিমের দাম শতকরা ২৫ ভাগ বেড়েছে। প্রতিদিনই তা ক্রমাগত বাড়ছে। দুই সপ্তাহ আগে মুরগির প্রতি ডিমের দাম ছিল নয় টাকা। এখন তা ১২ টাকা। এক কেজি বয়লার মুরগির দাম ছিল ১৬০ টাকা। তা বেড়ে হয়েছে ২১০ টাকা। একইভাবে সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। গত বছর রমজানে ছোলার দাম ছিল প্রতি কেজি ৭০ টাকা। এখন রোজা শুরুর আগেই কেজি ৯০ থেকে ৯৫ টাকা। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তথ্য অনুযায়ী, গত নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে এক লাখ ২৫ হাজার ৭০৫ মেট্রিক টন। এক বছর আগে একই সময়ে সয়াবিন তেল আমদানির পরিমাণ ছিল দুই লাখ ২৩ হাজার ৩৮৪ মেট্রিক টন। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে পণ্য আমদানির জন্য পর্যাপ্ত লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খোলা হয়েছে। তাই সংকট তৈরি হবে না। একই আশ্বাস দিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীও ভোক্তাদের একসঙ্গে বেশি পণ্য না কেনার আহ্বান জানাচ্ছেন। এলসি খোলার পর বাইরে থেকে পণ্য আমদানি করতে এক থেকে দেড় মাস সময় লাগে। গত তিন মাসে ছোলার আমদানি কমেছে শতকরা ৫০ ভাগ। তবে চিনির আমদানি স্বাভাবিক আছে। গত ডিসেম্বর থেকেই রমজানকেন্দ্রিক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির এলসি খোলা শুরু হয়। তবে ডলার সংকটের কারণে নিত্যপণ্য আমদানি বিল পরিশোধে দেরি হচ্ছে আর এলসি খোলায়ও জটিলতা দেখা দিয়েছে। অক্টোবর-ডিসেম্বরে এলসি খোলার হারও কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের শেষ চার মাসে অপরিশোধিত চিনির এলসি আগের বছরের চেয়ে ২৮ শতাংশ কমেছে। এ ছাড়া অপরিশোধিত সয়াবিন তেল ৪৭ শতাংশ, সয়াবিন ৮৩ শতাংশ, অপরিশোধিত পাম তেল ৯৯ শতাংশ, ছোলা ৪৭ শতাংশ ও খেজুর আমদানির এলসি খোলা কমেছে ৩০ শতাংশ। কি পরিমাণ এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) আসছে, কোনগুলো আগে খোলা দরকার, কোনগুলো এখন খোলা দরকার নেই- বাংলাদেশ ব্যাংকের সে ব্যাপারে নির্দেশনা প্রয়োজন। সুতরাং মূল বিষয় হচ্ছে ডলার কি পরিমাণ আছে, ব্যাংকগুলো তাদের চাহিদার বিপরীতে কি পরিমাণ পাঁচ্ছে তা নিয়মিত সপ্তাহভিত্তিতে তদারকি করা দরকার। করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সবাইকে দেখিয়ে দিয়েছে আমদানি নির্ভরতায় পণ্যের সংকট কতটা তীব্র হতে পারে। এমন পরিস্থিতি মোকাবেলায় যতোটা সম্ভব আমদানি নির্ভরতা কাটানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশে নিত্যপণ্য আমদানিতে যত ধরনের প্রষ্ঠপোষকতাই প্রদান করা হোক না কেন, অসাধু ব্যবসায়ীদের তৎপরতা বন্ধে পদক্ষেপ নেয়া না হলে ভোক্তারা এর সুফল পাবে না। রমজানের শুরুতে যাতে ভোগ্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা তৈরি না হতে পাড়ে সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে তৎপর হতে হবে।