মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। মহাবিশ্বের কেবল এই পৃথিবীতেই মানুষের বাস। মানুষের জীবন ধারণের জন্য যা যা প্রয়োজন তার সবই সৃষ্টিকর্তা এই পৃথিবীতে সৃষ্টি করেছেন। স্রষ্টা মানুষকে দিয়েছেন বিবেক, বুদ্ধি, জ্ঞান ও চিন্তার স্বাধীনতা। চারদিকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চরম উন্নতি সত্ত্বেও এখন মানুষের জীবনে শান্তি নাই। শান্তিময় জীবন যাপনের জন্য মানুষের মাঝে সাম্য, ভ্রাতৃত্ব, ঐক্য এবং মানবিকতা প্রয়োজন। তাহলে সমাজে, রাষ্ট্রে এবং বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে। সুতরাং শান্তিপূর্ণ জীবন-যাপনে যুদ্ধ কখনোই কারো কাম্য হতে পারে না। তবুও বিভিন্ন কারণেই ঘটে যুদ্ধ। কখনো তা দেশের অভ্যন্তরে কখনো আবার দেশের সাথে দেশের যা পরিণত হয়েছে বিশ্বযুদ্ধে। পৃথিবীর বয়স দিনদিন বেড়ে যাচ্ছে, কিন্তু যুদ্ধ কমেনি। যুদ্ধ যেমন বেড়েছে, তেমনি আগের যুদ্ধের চেয়ে বেড়েছে ভয়াবহতা। বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ যুদ্ধ চান না। শান্তিই তাদের আরাধ্য। দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে, বিশ্বের নানা প্রান্তে এখনো যুদ্ধ চলছে। যুদ্ধে লিপ্ত দেশগুলোর মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। বহু মানুষ হতাহত হচ্ছেন, ঘর-বাড়ি হারাচ্ছেন অনেকে। মাতৃভূমি ছেড়ে লাখো মানুষকে বেছে নিতে হচ্ছে শরণার্থীর জীবন। করোনা মহামারী বিশ্ব অর্থনীতিকে যতটা না ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, তার চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এই যুদ্ধের মূল কারণ ন্যাটোর পূর্বমুখী সম্প্রসারণ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ১৯৪৯ সালে সামরিক জোট ন্যাটো প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ছিল সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের আগ্রাসন থেকে পশ্চিম ইউরোপের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ইউক্রেন চায় ন্যাটোতে যোগ দিতে, কিন্তু রাশিয়া এর বিপক্ষে। কারণ রাশিয়া আশঙ্কা করছে, ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দিলে ন্যাটো বাহিনী তার সীমান্তে পৌঁছে যাবে। ফলে রাশিয়ার নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে। তাই জাতীয় নিরাপত্তার ব্যাপারে পুতিন প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। যুদ্ধ শুধু বিবদমান দেশগুলোকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে না। বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলেও এর মন্দ প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব কম-বেশি পুরো বিশ্বেই পড়েছে। তাদের যুদ্ধের খেসারত শুধু ইউরোপকেই দিতে হচ্ছে না, বাংলাদেশের মানুষকেও এর মাশুল গুনতে হচ্ছে। যুদ্ধের প্রভাবে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে দেশে দেশে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা দিনেদিনে বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম। মানবতার বিজয় হোক সেটাই আমাদের চাওয়া। যুদ্ধে টেকসই কোন সমাধান মেলে না। যুদ্ধ মানবসভ্যতাকে পশ্চাদগামী করে, যুদ্ধ দেশ এবং দশের উন্নয়নে বাধা প্রদান করে। মানুষ যুদ্ধ না, শান্তি চায়। মানুষের শান্তির আকাক্সক্ষা চিরন্তন। বিশ্বনেতাদের মানুষের এই আকাঙ্খাকে উপলব্ধি করতে হবে। আমরা চাই নিরাপদ এবং ভ্রাতৃপ্রেমে আবদ্ধ একটি বিশ্ব, যেখানে থাকবে না মানুষের প্রতি মানুষের ঘৃণা।