বাংলাদেশের রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলা বিভাগের সড়ক-মহাসড়ক গুলোতে প্রতিবছরই বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত চার বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি প্রায় দেড় গুণ বেড়েছে। পদ্মা সেতু চালুর পর সড়কপথে যানবাহন যেমন বেড়েছে, গত ছয় মাসে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানিও বেড়েছে অনেক। চালকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা ও বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানোর প্রবণতা, দৈনিক চুক্তিভিত্তিক গাড়ি চালনা, লাইসেন্স ছাড়া চালক নিয়োগ, পথচারীদের মধ্যে সচেতনতার অভাব, ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করে ওভারটেকিং, বিরতি ছাড়াই দীর্ঘ সময় ধরে গাড়ি চালানো, ফিটনেস বিহীন গাড়ি চালানো বন্ধে আইনের প্রয়োগ না থাকা, সড়ক-মহাসড়কে মোটরসাইকেল ও তিন চাকার গাড়ি বাড়ানো, মহাসড়কের নির্মাণত্রুটি, একই রাস্তায় বৈধ ও অবৈধ এবং দ্রুত ও শ্লথ যানবাহনের একসঙ্গে চলাচল, রাস্তার পাশে হাটবাজার ও দোকানপাট এবং অশিক্ষিত ও অদক্ষ চালক, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব, এসব দুর্ঘটনার মূল কারণ। সড়ক নিরাপত্তার জন্য সরকার একের পর এক নির্দেশনা ও সিদ্ধান্ত দিয়েই যাচ্ছে। কিন্তু এগুলোর বাস্তবায়ন না হওয়ায় সড়কে বিশৃঙ্খলা চলছেই। এ কারণে প্রতিদিনই প্রাণ ঝরছে দেশের বিভিন্ন জেলার সড়ক-মহাসড়কে। বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন-বিক্ষোভ ও কোন কাজ হচ্ছে না। প্রায় প্রতিদিন দুর্ঘটনায় সড়কে পড়ছে লাশ। খালি হচ্ছে মায়ের কোল। কিন্তু অপ্রশস্ত মহাসড়কের কারণে সেতুর পূর্ণ সুফল মিলছে না। প্রতিদিনই যন্ত্রদানবের হত্যার শিকার হয়ে দেশের বহু জ্ঞানী, গুণী, বুদ্ধিজীবী, নিষ্পাপ শিশু থেকে বৃদ্ধ, স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী প্রাণ হারাচ্ছেন। দুর্ঘটনায় স্বজনরা হারাচ্ছেন তাদের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিদের। অনেকেই সড়ক দুর্ঘটনায় চিরতরে পঙ্গুত্ববরণ করছেন। রেহাই পাঁচ্ছেন না কেউ। কিছুতেই সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা যাচ্ছে না। এতে স্থানীয় বাসিন্দা, সড়ক দুর্ঘটনায় স্বজন হারানো পরিবার ও আহতদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে। সড়ক দুর্ঘটনা এক অনিবার্য নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশবাসীর জন্য। এমন কোনো দিন নেই, যেদিন দেশের কোথাও না কোথাও সড়ক দুর্ঘটনায় একাধিক ব্যক্তির প্রাণ যাচ্ছে না। প্রকৃতপক্ষে সড়ক দুর্ঘটনা শুধু একটি দুর্ঘটনাই নয়, এর আর্থিক ক্ষতি বিপুল। তবে মহাসড়কে যান চলাচলের সর্বোচ্চ গতি বেঁধে দিয়ে এবং গতি পরিমাপক যন্ত্র ব্যবহার করে চালকদের ওই নির্দিষ্ট গতি মেনে চলতে বাধ্য করা হলে দুর্ঘটনা অনেক কমে আসবে বলে মনে করি। তাছাড়া চালকদের দক্ষতার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে। মহাসড়ক নির্মাণ ও সংস্কারের কাজটি করতে হবে সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আইনের প্রয়োগ, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ চালক এবং সড়কে চলাচল উপযোগী ভালো মানের যানবাহন অবশ্যই প্রয়োজন। একইসঙ্গে জনগণকেও সচেতন হতে হবে। তবেই দেশের সড়ক গুলো হবে দুর্ঘটনা মুক্ত।