বর্তমানে আমাদের দেশে প্রতিনিয়তই বহু ধরনের দুর্ঘটনায় মানুষের প্রাণহানিসহ ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। এরইমধ্যে অগ্নিজনিত দুর্ঘটনা অন্যতম। গত কয়েক বছরে এ দুর্ঘটনায় প্রাণহানিসহ সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পুড়ে ছাই হয়েছে অগণিত মানুষের স্বপ্ন। বর্তমানে অগ্নিকাণ্ড নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। গার্মেন্ট কারখানা থেকে হাসপাতাল, কলকারখানা থেকে পার্ক, কোনো কিছুই রেহাই পাঁচ্ছে না আগুনের লেলিহান শিখা থেকে। ছোট আকারের অগ্নিকাণ্ড এখন সাধারণ ব্যাপার হয়ে গেছে। এক পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ২০১৮ সালে রাজধানী ঢাকা শহরেই ২,০৮৮টি অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটেছে। ২০০৫ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ১৭ বছরে অগ্নি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৩ হাজার এবং আহত হয়েছে ১২ হাজার ৩৭৪ জন মানুষ। এ ছাড়া পৃথিবীতে অগ্নি দুর্ঘটনায় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শহর ঘোষণা করা হয়েছে ঢাকাকে। বর্তমানে শুষ্ক মৌসুম। প্রচণ্ড শীত পড়লেও প্রকৃতি খুবই রুক্ষ-শুষ্ক। দেশে শুষ্ক মৌসুমে প্রচুর অগ্নি-দুর্ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। শুষ্ক মৌসুমে অগ্নি-দুর্ঘটনা এড়াতে জনসচেতনতা খুবই জরুরি বিষয়। বড় বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার ধরন ও তদন্ত প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায় বেশির ভাগ অগ্নিকাণ্ডের কারণই বৈদ্যুতিক গোলযোগ। অর্থাৎ নিম্নমানের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহারের কারণে সহজেই শর্টসার্কিট হয়ে আগুনের ঘটনা ঘটছে। আবাসিক ভবন ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানেও এখন আগুন লাগার প্রধান কারণ এ রকম নিম্নমানের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার। আবার গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে মৃত্যুর ঘটনা আমাদের দেশে একেবারেই সাধারণ। যানবাহনে মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার নিয়ে ঘুরে বেড়ানোও খুব সাধারণ একটি ঘটনা। মেয়াদোত্তীর্ণ একটি সিলিন্ডার একটি বোমার মতো মারাত্মক হয়ে থাকে। আগুন ধরে যখন ক্ষয়ক্ষতির পরিবেশ তৈরি হয় তখন ঘিঞ্জি পরিবেশ, দুর্বল ব্যবস্থাপনা, সরু রাস্তা দিয়ে উদ্ধারসামগ্রী পৌঁছাতে কষ্টসাধ্য হয়ে পরে, বিল্ডিং গুলোতে অগ্নিপ্রতিরোধের ব্যবস্থা না থাকায় ও ঢাকার আশপাশে ও মধ্যের নদী-খালের পানিশূন্যতা কারণে উদ্ধারকার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে সংঘটিত অগ্নিকাণ্ড থেকে প্রচুর পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়। দেশে পুকুর, জলাশয়, দিঘি খাল-নদী ভরাটের কারণে কোথাও আগুন লাগলে সাধারণ মানুষ বালতি কিংবা অন্যকোন পাত্রে পানি নিয়ে আগুন নেভানোতে সহায়তা করতে পারে না। অনেক সময় ফায়ার সার্ভিসের গাড়িকে ঘটনাস্থল হতে অনেক দূরহতে আগুন নেভানোর চেষ্টা করতে হয়। রাস্তার অভাবে গাড়ি ঘটনাস্থলে প্রবেশ করতে পারে না। আমাদেরকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে সচেতন হতে হবে। এজন্য ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। আমাদের সবাইকেই সচেতন হতে হবে। বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডের দুর্ঘটনাগুলোর অধিকাংশই প্রতিরোধ করা সম্ভব। উন্নতমানের বৈদ্যুতিক তার ব্যবহার এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও দক্ষ ইলেক্ট্রিশিয়ান দ্বারা ওয়্যারিংয়ের কাজ সম্পন্ন করা হলে শর্টসার্কিটজনিত দুর্ঘটনার হার হ্রাস পাবে। গৃহ নির্মাণের ক্ষেত্রে রাস্তা বড় রাখার বিষয়ে জনগণকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। অগ্নিজনিত দুর্ঘটনা রোধে আপাতত নিয়মকানুন মেনে চলা এবং সতর্ক থাকা প্রয়োজন। তাই আমরা যদি সচেতন না হই বা সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ না করি ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ অবস্থা অপেক্ষা করছে।