মানুষের মধ্যে অস্থিরতা বেড়ে গেছে, কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করছে না। সামান্য কারণেই ঘটছে যখন খুনের মতো ঘটনা, অপরাধ প্রবণতা মানুষের জন্মগত কোন বিষয় নয়, সমাজ ও পারিপার্শ্বিক কারণে মানুষ অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠছে। ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অপহরণ, ডাকাতি, ভাড়ায় মানুষ খুন করা, ভাড়ায় জমি দখল করা, মাদক ব্যবসা ও সেবন, ভাড়ায় রাজনৈতিক দলের মিছিলে অংশগ্রহণ, রাজনৈতিক দলের হয়ে সংঘর্ষ, ছিনতাই করা মোবাইল ফোন বিক্রি, বিদেশে অবস্থানরত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ফোনে দাবি করা চাঁদা আদায় এবং ইভ টিজিংয়ের মতো অপরাধকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। এখন শুধু রাজধানী ঢাকা নয়, সারা দেশেই খুনখারাবির লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। সাধারণ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির যেমন অবনতি হচ্ছে, তেমনি সামাজিক অপরাধের ঘটনাও বাড়ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন যেসব ঘটনা ঘটছে তা দেশ ও দেশবাসীদের জন্য অশুভ ইঙ্গিত বহন করছে। বর্তমান সময়ে সরকার এবং বিরোধী দলের রাজনৈতিক সমাবেশ (শোডাউন) চলছে দেশব্যাপী সর্বত্র। এসব শোডাউনে সাধারণ জনগণের যে কি ভোগান্তি হয়, তা নিয়ে কেউই ভাবছে না। এর ওপর যেখানে সেখানে আতঙ্ক ছড়িয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নষ্ট করছে, এতে পালিয়ে থাকা জঙ্গিরা আরও বেশি চাঙ্গা হচ্ছে। জনমনে নেমে আসছে অশান্তি ও অস্থিরতা। তবে জানা যায়, দারিদ্র্যের আঘাতে মানুষ অপরাধী হয়ে ওঠে। কেননা সমাজে যারা সচ্ছল তাদের মত হবার বাসনায় আর্থিক মর্যাদা লাভের জন্য দারিদ্র শ্রেণীর কিছু লোক অপরাধ প্রবণ হয়ে পড়ে। সমাজে বিত্তবানদের টাকাণ্ডপয়সার প্রাচুর্য, দামি দামি বিলাস সামগ্রীর রূপ দেশের যুব সমাজকে আকৃষ্ট করে অপরাধপ্রবণ করে তোলে। দরিদ্র, বেকারত্ব, আর্থিক মর্যাদা লাভের আকাঙ্খা, শিল্পায়ন ও শহরায়ন ইত্যাদি অপরাধ প্রবণতার জন্ম দেয়। এছাড়াও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় যাবার লোভে বহুলোক অবৈধ কাজে জড়িয়ে পড়ছে। বাংলাদেশে প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণেও অপরাধীকে খুঁজে বের করে অনেক ক্ষেত্রে শাস্তি প্রদান করা সম্ভব হয় না। তাই দুর্নীতি ভয়াবহভাবে অপরাধ প্রবণতার জন্ম দেয়। অপব্যবহারের মাধ্যমে আর্থিক সুবিধা লাভের জন্য স্বজনপ্রীতি ও পক্ষপাতিত্বেও আশ্রয় গ্রহণ। প্রশাসন ব্যবস্থায় নেমে আসে অন্ধকারের ঘনঘটা। আবার অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসন দুর্নীতির কারণে সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারে না, ন্যায়বিচার থেকে নিরপরাধ লোক বঞ্চিত হয়, ফলে অযথা কাজে বিলম্ব ঘটিয়ে জটিলতা সৃষ্টি করে মিথ্যাচারের আশ্রয় নেয়। মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা মাদক সেবনের পয়সা যোগাড় করার জন্য চুরি, রাহাজানি, ডাকাতি, ছিনতাই ইত্যাদি অপরাধমূলক কার্যকলাপের সাথে জড়িয়ে পড়ে। অপরাধ দমন করতে হলে মাদক-ব্যবসায়ী ও পাঁচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বিধান করা আবশ্যক এবং দেশকে অন্যায় ব্যবহার থেকে মুক্ত করার তাগিদে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। দেশে সঠিক আইনের শাসন, সুস্থ রাজনৈতিক ধারা বজায়, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দেশপ্রেম ও গণতন্ত্র-চর্চা বাড়াতে হবে। কাজেই বিশেষ অভিযানটি এমন হওয়া উচিত, যার লক্ষ্য হবে অপরাধের মূলোৎপাটন করা, সাময়িকভাবে স্তিমিত করা নয়। মনে রাখতে হবে বিশৃঙ্খল সমাজে বসবাস করে উন্নত রুচি ও সংস্কৃতির অধিকারী হওয়া যায় না। তাই পরিকল্পিত ও বিন্যস্ত সমাজ গড়ে তুলতে হবে।