বিভিন্ন সময়ে চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়ার পরও দেশে রোগীর তুলনায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরে ঘাটতি রয়েছে। এ কারণে বিভিন্ন অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে। এটির সমাধান হওয়া জরুরি। জানা গেছে, দক্ষিণাঞ্চল তথা বরিশাল বিভাগে স্বাস্থ্যসেবা প্রায় ভেঙে পড়েছে। মূলত চিকিৎসক সংকটই এর প্রধান কারণ। জানা যায়, বরিশালে ৭৮০ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও সেখানে ৩১৫টি পদই শূন্য। অনুরূপভাবে পটুয়াখালীতে ২৫৯ পদের বিপরীতে শূন্য রয়েছে ১৪১টি, ভোলায় ২৪৭টির বিপরীতে ১১৮টি, পিরোজপুরে ১৯২টির মধ্যে ৭৭, বরগুনায় ১৮৬টির মধ্যে ১০১ এবং ঝালকাঠিতে ১৪৩টির মধ্যে ৬৯টি পদ শূন্য রয়েছে। এসব শূন্যপদে চিকিৎসক নিয়োগের দাবি দীর্ঘদিনের হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ কেন নেওয়া হচ্ছে না, তা বোধগম্য নয়। উল্লেখ্য, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র এবং কমিউনিটি ক্লিনিক বাদে বরিশাল বিভাগে মোট ১২৫টি হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে। বিরাজমান চিকিৎসক সংকটের কারণে এসব হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীরা যথাযথ সেবা পাচ্ছেন না, যা মেনে নেওয়া কষ্টকর। দেশে সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশাপাশি অনেক বেসরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে। তবে এসব প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা গ্রহণ যথেষ্ট ব্যয়ববহুল। বস্তুত দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও দরিদ্র মানুষের অসুখে-বিসুখে সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোই ভরসা। এসব হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রতিদিন অসংখ্য রোগীর আগাগোনা লক্ষ করা যায়, যার ব্যতিক্রম নয় দক্ষিণাঞ্চলের হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশার বিপরীতে এসব হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যদি পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসাসেবা না পাওয়া যায়, তাহলে তা পীড়াদায়ক বৈকি। স্বাস্থ্য ও উন্নয়ন একসূত্রে গাঁথা। সরকার স্বাস্থ্য খাতকে প্রাধান্য দিয়ে দারিদ্র্য দূরীকরণ, নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ সমতা, শিক্ষা, মাতৃস্বাস্থ্যসেবা, শিশুমৃত্যু হ্রাস ও পরিবার পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালনা করছে। তবে দেখা যাচ্ছে-সরকার যেভাবে চিন্তা করছে, বাস্তবে তার সঠিক প্রতিফলন ঘটছে না। এর অন্যতম কারণ স্বাস্থ্য খাতে বিরাজমান নানা অসংগতি ও দুর্নীতি। প্রচলিত ব্যবস্থায় স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে গিয়ে দেশের অন্তত ৬৭ শতাংশ মানুষ পকেট থেকে টাকা খরচ করতে বাধ্য হচ্ছে। এতে প্রতিবছর কমপক্ষে ৫ শতাংশ মানুষ সহায়-সম্বলহীন হয়ে পড়ছে, যা সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার পরিপন্থি। এ অবস্থার অবসানকল্পে দেশের সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোয় চিকিৎসক সংকট নিরসনের পাশাপাশি অন্যান্য অনিয়ম-অসংগতি দূর করার কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। আমরা আশা করি, বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।