দীর্ঘদিন ধরে নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরাতা বিরাজ করছে। কোনোভাবেই নিত্যপণ্যের বাজার স্বাভাবিক হচ্ছে না। আসন্ন রমজানকে কেন্দ্র করে এখনই দাম বাড়তে শুরু করেছে। মুরগি ও ডিমের দামে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এক মাসে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ৪৮ শতাংশ, ডিমের দাম বেড়েছে ১৭ শতাংশ। বিক্রেতারা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এত দামে তারা ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করেননি। দাম বৃদ্ধি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, মানুষ তার খাবার তালিকা থেকে সস্তা প্রোটিনের উৎসটিতেও কাটছাঁট করছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২ হাজার ৩৩৫ কোটি পিস ডিম উৎপাদন হয়েছে। তবে খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বাভাবিক সময়ে এ দেশে প্রতিদিন ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার কোটি পিস ডিম উৎপাদন হয়। ব্রয়লার মুরগির উৎপাদনকারী খামারিরা বলছেন, বর্তমানে মুরগির উৎপাদন খরচ ১৪৮ টাকা সর্বোচ্চ। প্রতিটি ডিমের উৎপাদন খরচ দাঁড়িয়েছে ১১.১১ টাকায়। ব্রয়লার মুরগির কেজি এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৮০-২০০ টাকা। আর এক মাস আগে ছিল ১৪০-১৫০ টাকা। এই হিসাবে এক মাসে দাম বেড়েছে ৪৮ শতাংশের বেশি। ব্রয়লারের পাশাপাশি দাম বেড়েছে সোনালি মুরগিরও। ২৮০-২৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া সোনালি মুরগি এখন দোকানভেদে ৩২০ টাকা পর্যন্ত উঠছে। বাজারে সরবরাহ সংকটে থাকা লেয়ার মুরগির দাম ২৭০ টাকা থেকে হয়েছে ৩০০ টাকা কেজি, ডিমের দামও বাড়তি। বাজারে মুরগি ছাড়াও সব ধরনের মাংসের দামই বাড়তি। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭৫০ টাকায়। আর খাসির মাংস ১ হাজার ৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায়। চালের দামও কমছে না। সব ধরনের সবজির দাম চড়া। একেক সময় একেক অজুহাত তুলে বিক্রেতারা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। বাজারে পর্যাপ্ত পণ্যের সরবরাহ আছে। তা সত্ত্বেও বাজারে পণ্যের দাম বাড়ছে। মূলত এটা বাজার ব্যবস্থাপনায় সমস্যা। এ ব্যবস্থাপনায় এক ধরনের কালোবাজারি এবং অতিমুনাফা লাভের প্রত্যাশা লুকিয়ে আছে। প্রশ্ন হচ্ছে, সরকারের বেঁধে দেয়া দাম বাজারে কার্যকর হচ্ছে কিনা, কেউ উচ্চ লাভের আশায় মজুতদারি করেছে কিনা। এসব মনিটরিং করার দায়িত্ব সরকারের। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এসব মনিটরিং করছে। এ কথা ঠিক, যখন সংকট তৈরি হয় তখন অনেক সময় বড় করে সেটাকে দেখিয়ে কেউ কেউ সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করে। নিত্যপণ্যের দাম কারা বাড়ায় তা সবারই জানা। এটা সিন্ডিকেটের কারসাজি। নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে তাদের অজুহাতের শেষ নেই। তারা একেক সময় একেক অজুহাত দাঁড় করায়। তারা খাদ্যে ভেজালও দেয়। এই চিত্র বদলানো কঠিন। আমরা মনে করি, ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হলে চলবে না। তাদের কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণও করতে হবে। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সংখ্যা বাড়াতে হবে। এরা জনগণের স্বার্থের দিকে কখনোই নজর দেয় না। এরা বাজারসন্ত্রাসী। কীভাবে অসৎ উপায় অবলম্বন করে দ্রম্নত ধনী হওয়া যায় সেটাই তাদের প্রধান উদ্দেশ্য। বাজারে মূল্য তালিকা টাঙিয়ে যথাযথ তদারকির ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের অসহায় জনগণকে জিম্মি করে তারা পকেট কাটবে এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। বিক্রেতাদের মানসিকতার পরিবর্তন যতদিন না ঘটবে ততদিন নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির থাকবেই এবং দেশের জনগণও তাদের কাছে জিম্মি থাকবে। আমরা এই অবস্থা থেকে উত্তরণ চাই।