সূর্যমুখী ফুলের চাষ শুরু হয়েছে বান্দরবানে। এর বীজ থেকে উৎপাদিত তেলের দাম বেশি হওয়ায় সূর্যমুখী চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। প্রথমবারের মতো বাগান করে ব্যাপক ফুলের উৎপাদন হওয়ায় খুশি চাষিরা। বর্তমানে পুরো জেলার পাহাড়ের আশপাশে ও সমতলভূমিতে এ ফুলের আবাদ করে সাড়া ফেলেছেন কৃষকরা। এজন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছে নানা সহায়তা। সূর্যমুখী তেলের দাম অনেক, তাই বান্দরবানের বিভিন্ন উপজেলায় এর সূর্যমুখীর চাষ বেড়েছে। অন্যান্য ফসল চাষে যে পরিমাণ শ্রম আর অর্থ বিনিয়োগ হতো, তার চেয়ে সূর্যমুখী চাষ সহজ ও লাভজনক। বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার রেপারপাড়ি আবাসিক এলাকার কৃষক মো. শাহীন বলেন, আগে আমার পতিত জমিতে আলু, বেগুন, শিমসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করতাম, তবে এবার চাষে একটু ভিন্নতা এনেছি। কৃষি অফিসের সহযোগিতায় প্রথমবারের মতো চাষ শুরু করেছি সূর্যমুখী ফুলের। এতে আমার জমির যেমন সৌন্দর্য বেড়েছে, তেমনি আমারও ভালো লাগছে। ডলুঝিড়ি এলাকার চাষি মো. আবাদুর রহিম বলেন, সূর্যমুখী ফুলের চাষ এবারই প্রথম, তবে এ ফুলের চাষ করার ক্ষেত্রে তেমন পরিশ্রম প্রয়োজন হয় না। তিনি আরও বলেন, বাজারেও এ ফুলের বীজ থেকে তৈরি তেলের চাহিদা ও দাম ভালো থাকায় ভালো লাগছে। সূর্যমুখী চাষের সঙ্গে আলু, শিমসহ আরও দুই-তিন রকমের সাথী ফসল চাষ করেছি, এক কথায় আমি আমার জমিতে একের ভেতর কয়েক ফসলের আবাদ করেছি। একসময় চাষিরা পাহাড়ের আশপাশে ও সমতলভূমিতে ক্ষতিকর তামাক চাষ করে শেষ পর্যায়ে ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এবার প্রথমবারের মতো সূর্যমুখীর চাষ করে বর্তমানে অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন হচ্ছে অনেক চাষির। ডলুঝিড়ির চাষি হুমায়ন বলেন, আমি একসময় তামাক চাষ করতাম, তামাক চাষে অনেক পরিশ্রম করার পরও শেষে লোকসান গুণতে হতো। তাই এবার তামাক চাষ ছেড়ে দিয়ে কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় প্রথমবারের মতো সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছি। সূর্যমুখী চাষে পরিশ্রম কম আর লাভ বেশি হওয়ায় এবার এক বিঘা জমিতে চাষ করেছি। আগামীতে আরও তিন-চার বিঘা জমিতে চাষ করার ইচ্ছে আছে। লামা উপজেলার আখিরাম ত্রিপুরা পাড়ার চাষি প্রীতাম ত্রিপুরা বলেন, প্রতি বছর তামাক চাষ করতে করতে জীবনের বহু ক্ষতি করেছি। তামাকের কারণে নিজের শরীর-স্বাস্থ্য নষ্ট হয়েছে। অনেক পরিশ্রম করেও ফসল তোলার পর হাতে আর টাকা থাকত না। তাছাড়া তামাক চাষে নিয়মিত শ্রম দিতে হতো। এতে যে পরিমাণ শ্রম দিতাম, সে তুলনায় লাভের থেকে ক্ষতি বেশি হতো, অন্যদিকে এবার সূর্যমুখী চাষ শুরু করেছি, আশা রাখছি, কম পরিশ্রমে ভালো লাভ হবে। সূর্যমুখী ফুলের বীজ থেকে তৈরি তেল বাজারের অন্যান্য তেলের চেয়ে ভালোমানের ও কোলেস্টরেলমুক্ত আর এর পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। ফলে সূর্যমুখীর তেলের দামও বেশি। এদিকে পার্বত্য এলাকায় ক্ষতিক্ষর তামাক চাষ নিরুৎসাহিত করে বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখীর আবাদ বাড়াতে কৃষকদের নানা ধরনের পরামর্শ ও সহায়তা দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, এবার বান্দরবান জেলার সাতটি উপজেলায় প্রথমবারের মতো কৃষি বিভাগের সহায়তায় ৩৫০ জন চাষি সর্বমোট ৩১.৫ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। আর এক বিঘা জমিতে সূর্যমুখী আবাদের জন্য একেকজন কৃষককে এক কেজি করে সূর্যমুখীর হাইব্রিড বীজ ও ২০ কেজি করে সার দেওয়া হয়েছে। বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক এম এম শাহ্ নেয়াজ বলেন, সারাদেশে বর্তমানে ভোজ্য তেলের সংকট দেখা দিয়েছে। এ সংকট নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আমরা তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে জোর দিয়ে বান্দরবান জেলায় প্রথমবারের মতো সূর্যমুখী ফুলের চাষ শুরু করেছি। সূর্যমুখীর বীজে তেলে উৎপাদন ছাড়াও এর ফুলের সৌন্দর্যের একটি বিশেষ দিক রয়েছে। তাই কৃষকরাও চাষ করতে আগ্রহী হচ্ছেন। বর্তমানে ব্যাপকহারে সাড়া পাঁচ্ছি। আশা করছি, আগামীতে জেলা জুড়ে অন্যান্য ফসলের সঙ্গে সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী হবেন কৃষকরা।