কুল চাষ করে সফলতা পেয়েছেন শেরপুরের নালিতাবাড়ীর তিন তরুণ উদ্যোক্তা জামাল উদ্দিন, নবী হোসেন ও ইলিয়াস। তারা শুরুতে বুঝে উঠতে পারছিলেন না কিভাবে চাষ করবেন। কুল চাষের জন্য জমি খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী বেতকুড়ি গ্রামে গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ১৫ বিঘা জমি লিজ নিয়ে শুরু করেন কুল চাষ। পাশাপাশি এতে যুক্ত করেন উন্নত জাতের পেয়ারা ও লেবু। রোপণের ৯ মাসের মধ্যেই প্রথমবারের মতো তাদের গাছে ঝাঁকে ঝাঁকে কুল ধরেছে। তাদের বাগানে রয়েছে বল সুন্দরী, কাশ্মীরি, ভারতীয় কুল, আপেল কুল, বাউ কুল ও টক মিষ্টি কুল। এছাড়াও তাদের এই বাগানে কুলের পাশাপাশি উন্নতজাতের মাল্টা, পেয়ারা ও সিডলেস লেবুর গাছ রয়েছে। ১৮ লাখ টাকা খরচ করে এক বছরের মাথায় তাদের ৩ লাখ টাকার মতো লাভ হবে বলে আশা করছেন।
নতুন উদ্যোক্তাদের কথা মাথায় রেখে বাগানের পাশে উন্নতমানের কলম চারা গাছ তৈরি করছেন তারা। পাখিদের আক্রমণ থেকে কুল রক্ষার জন্য চারদিকে জাল দিয়ে বেড়া দেওয়া হয়েছে। তাদের বাগানের নাম রেখেছেন থ্রি স্টার নার্সারি। বর্তমানে বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ তাদের থ্রি স্টার নার্সারি দেখতে আসেন। উচ্চ ফলন দেখে অনেকেই তাদের এখান থেকে স্বল্প মূল্যে উন্নত জাতের চারা নিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে নার্সারীতে তিনজন শ্রমিক কাজ করছেন। এতে করে তাদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রধান উদ্যোক্তা জামাল উদ্দিন বলেন, ‘পরিকল্পনা মাফিক চেষ্টায় ও পরিশ্রমে সফল হওয়া যায় ও ভাগ্যবদল হয় সেটার বড় প্রমাণ আমি নিজেই। ইউটিউবে কুল চাষের ভিডিও দেখেই আমি এ কাজে অনুপ্রাণিত হয়েছি। সঠিক পরিচর্যার কারণে চারা রোপণের নয় মাসের মধ্যেই প্রত্যেকটি গাছ এখন কুলে পরিপূর্ণ।’
উদ্যোক্তা নবী হোসেন বলেন, ‘আমি স্কুলে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছি। শিক্ষকতার ফাঁকে আমি এ কাজে নিয়োজিত। আমাদের চাষকৃত কুল ও বিভিন্ন জাতের পেয়ারা, লেবু, মাল্টা খুবই উন্নত ও নতুন জাতের। এতে ফলন অনেক বেশি। আমরা কুল চাষের পাশাপাশি নাসার্রীর মাধ্যমে চারা তৈরি করছি। কেউ চারা ও পরামর্শ নিতে আসলে আমি তাদের পরামর্শ দেই। বিশেষ করে যারা বেকার রয়েছেন, আমি পরামর্শ দিবো এই কুল চাষে যেন বেকার ছেলেরা এগিয়ে আসে।’
বাগানে ঘুরতে আসা এমদাদুল হক বলেন, ‘এমন জায়গাতেও যে এভাবে কুল বাগান করা যায় এটা না দেখলে বিশ্বাস হতো না। আমিও পরিকল্পনা করছি সামনের বছরে বাগান করবো। বাগান দেখে আমার মনে হয়েছে কুলের রাজ্যে চলে এসেছি। এই বাগান থেকেই আমি পেয়ারা ও মাল্টার চারা সংগ্রহ করবো।’
শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক ড. সুকল্প দাস জানান, শেরপুর জেলার পাহাড়ি এলাকায় কুল চাষ করে বেকার যুবক-যুবতীরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে। কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা তাদেরকে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।