কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে প্রেম সন্দেহের ঘটনা নিয়ে মুসলমান ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১১ জন আহত হয়েছে। এরমধ্যে নারীসহ মুসলমান সম্প্রদায়ের ৭ জন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের ৪ জন আহত হয়। আাহতদের সকলকে ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এতে উভয় পক্ষেই মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে। মুসলমান সম্প্রদায়ের আহতরা হলেন- ফুলবাড়ী উপজেলার ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের দক্ষিণ রাবাইতারী বসুনীয়া পাড়ার হাছেন আলী (৪২), তার দুই ছেলে জনি আলম (১৯) ও আহমেদ রনি (১৮), স্ত্রী হোসনে আরা (৩৫), হাছেন আলীর বড়ভাই শমশের আলী (৫০), ফজলে রহমান (৪৫). তার ছেলে হুমায়ুন আহমেদ রিপন (২১)। অপরদিকে হিন্দু সম্প্রদায়ের আহতরা হলেন- ফুলবাড়ী উপজেলার ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের দক্ষিণ রাবাইতারী গ্রামের উকিল চন্দ্র সরকার (৪৫), তার দুই ভাই সুনীল চন্দ্র সরকার (৫০), মুকুল চন্দ্র সরকার (৩৫) ও অপর আহত হলেন শুভাশীষ সরকার (২৬)। মুসলামান সম্প্রদায়ের আহতদের মধ্যে আহমেদ রনি জানান, শনিবার বিকেল ৪ টার দিকে আমার প্রতিবেশি হিন্দু সম্প্রদায়ের সুবল চন্দ্র সরকারের ছেলে শুভাশীষ সরকার আমাকে ফোন ও ম্যাসেজের মাধ্যমে বাড়ির পাশ^বর্তী গাবের তল নামক স্থানে জরুরী কথা আছে বলে ডেকে নেয়। আমি তার ডাকে সাড়া দিয়ে ওই জায়গাায় আসলে তারা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আমাকে রড, হাতুড়িসহ লাঠি সোটা দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করে। আমার চিৎকার শুনে আমাকে রক্ষার জন্য আমার পিতাসহ পরিবারের অন্যান্য লোকেরা ছুটে আসলে তারা তাদেরও এলোপাতাড়ি মারধর করে প্রায় ৭ জনকে গুরুতর আহত করে। হামলার সূত্র সম্পর্কে আহমেদ রনি জানান, শুভাশীষ সরকারের সম্পর্কের বোন ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের দক্ষিণ রাবাইতারী গ্রামের উকিল চন্দ্র সরকারের মেয়ে নবম শ্রেণিরছাত্রী অনন্যা সরকার অন্তু আমার ছোট বোনের বান্ধবী। ছোটবোনের সুবাদে প্রতিবেশি ছোটবোন হিসেবে আমি মাঝে মধ্যে অনন্যা সরকার অন্তুর সঙ্গে কথা বলতাম। আমার কথা বলার বিষয়টি শুভাশীষ সরকার প্রেম সন্দেহের সঙ্গে দেখতো। এরমধ্যে শুক্রবার আমার বান্ধবী বিথী সরকারের বিয়ের দাওয়াতে আমি যাই। ওই দাওয়াতে অনন্যা সরকার অন্তু তার পরিবারসহ যায়। আমরা দাওয়াত খাওয়ার পর একই অটোরিকশা যোগে সবাই মিলে বাড়ি ফিরে আসি। এ বিষয়টি শুভাশীষ সরকার অনন্যা সরকার অন্তুর সঙ্গে আমার প্রেম সম্পর্ক সন্দেহের সঙ্গে দেখার কারণে এই অপ্রীতিকর ঘটনাটি ঘটেছে বলে আহমেদ রনি জানান। আপরদিকে শুভাশীষ সরকার জানান, আমার কাকাতো বোন অনন্যা সরকার অন্তুকে প্রেম নিবেদন করতেন আহমেদ রনি। শনিবার দুপুরের দিকে অনন্যা সরকার অন্তু প্রাইভেট পড়ার জন্য গেলে তাকে আহমেদ রনি প্রেম নিবেদন করে। এ বিষয়টি অন্তু আমাদের জানায়। পরে আমি আহমেদ রনিকে ফোনে ডেকে নিয়ে তাকে বোঝাতে গেলে বাক বিতন্ডার এক পর্যায়ে তারা হামলা চালায় ও এ সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। এ প্রসঙ্গে অনন্যা সরকার অন্তু জানান, আমি আমার পরিবারের সদস্য মিলে বিথী সরকারের বিয়ের দাওয়াতে যাই। আমরা দাওয়াত খাওয়ার পর অটোরিকশা যোগে বাড়ি আসি। আমাদের অটোরিকশায় আহমেদ রনিও ছিল। শনিবার আমি দুপুর আড়াইটায় প্রাইভেটের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হই। ওই সময় আমাকে রাস্তায় আহমেদ রনি একটি লেটার ও একটি গোলাপ দিতে চাইলে আমি লেটারটি গ্রহণ করেনি। পরে লেটারটি আহমেদ রনি নিজেই ছিড়ে ফেলে এবং গোলাপটি আমাকে জোড়পূর্বক দেয়। এ ব্যাপারে ফুলবাড়ী থানার সাব ইন্সপেক্টর এনামুল হক রোববার জানান, মুসলমান ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনায় অনন্যা সরকার অন্তুর বাবা উকিল চন্দ্র সরকার বাদী হয়ে ফুলবাড়ী থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলা তদন্ত স্বাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে মুসলমান সম্প্রদায়ের পক্ষে এখনো মামলা দায়ের হয়নি।