কিৎসাবিজ্ঞানের উন্নয়নে বর্তমানে অসংখ্য রোগের প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে আছে টিকা। তবে কিছু মানুষ কুসংষ্কার, ভুল ধারণার কারণে টিকা এড়িয়ে চলেন। এতে শুধু ওই ব্যক্তি হুমকির মুখে পড়েন না, তার আশপাশের মানুষগুলোও ঝুঁকিতে থাকেন। সারাবিশ্বে অসংখ্য প্রাণঘাতি রোগের হাত থেকে রক্ষা করছে টিকা এবং এদের ব্যবহার যে নিরাপদ তা প্রমাণিত। স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনের আলোকে জানানো হল টিকা নিয়ে প্রচলিত কয়েকটি ভুল ধারণা সম্পর্কে।
যে জন্য টিকা সে রোগের ভয়: যুক্তহীন হলেও কিছু মানুষ মনে করেন যে রোগের জন্য টিকা নেওয়া হচ্ছে, সেই রোগই তাদের আক্রমণ করবে। অথচ টিকার কারণে ওই রোগের আক্রান্ত হওয়ার কোনো প্রমাণ নেই। যুক্তরাষ্ট্রের ‘সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’য়ের দেওয়া তথ্য মতে, মাত্র ১ থেকে ৫ শতাংশ শিশুর ক্ষেত্রে টিকা নেওয়ার পরও ওই রোগের প্রতিরোধ ব্যবস্থা তাদের শরীরে গড়ে উঠতে ব্যর্থ হয়। ফলে যে রোগের জন্য টিকা নেওয়া হল, প্রতিরোধ ব্যবস্থা না থাকায় সেই রোগটিতেই শিশুটি ভবিষ্যতে আক্রান্ত হতে পারে। তবে তা কখনই টিকার জন্য হয় না। বরং তাদের শরীরে টিকা কাজ করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে তা হয়। শিশুকে প্রতিবন্ধী বানায়: ১৯৯৭ সালে অ্যান্ড্রু ওয়েকফিল্ড নামক একজন ব্রিটিশ সার্জন তার এক গবেষণায় টিকা আর প্রতিবন্ধী হওয়ার মধ্যে সম্পর্ক তুলে ধরেন। পরে তার ওই গবেষণা বাতিল ঘোষণা করা হয়, এমনকি তার লাইসেন্সও বাতিল করা হয়। তবে ঘটনা ছড়িয়ে পড়া থামানো যায়নি। ফলে সাধারণ মানুষ শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধকতা আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে টিকা বর্জন করতে শুরু করেন। পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে সেই ভুল সংবাদ আজও সত্য হিসেবে বিদ্যমান। টিকার কারণে কখনই টিকা গ্রহণকারী প্রতিবন্ধী হননা। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে: অনেক মানুষ মনে করেন সন্তানকে টিকা দিলে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যাবে এবং রোগের জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা হারাবে। একজন সচেতন মানুষের জন্য এই খবর হাস্যকর হলেও, যিনি বিশ্বাস করেন তার বিশ্বাসের দৃঢ়তা অবাক করার মতো। একটি শিশু একসঙ্গে প্রায় ১০ হাজার টিকা গ্রহণ করার ক্ষমতা রাখে। এই ক্ষমতার উৎস হল তার শরীরে থাকা ‘অ্যান্টি-বডি’। আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এ সময় দুর্বল হয় না। কারণ শরীরের প্রতিটি কোষ এ সময় ক্রমাগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আর টিকা সেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করে। পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার ভয়: এই ভয়ে টিকা বর্জনকারী মানুষের সংখ্যই হয়ত সবচাইতে বেশি। এদের কাছে টিকা একটি অপ্রাকৃতিক বিষয় এবং তাদের বিশ্বাস টিকায় থাকা রাসায়নিক উপাদান বিষাক্ত হতে পারে। টিকা নিয়ে প্রচলিত এই কুসংস্কারগুলো মানুষের রোগাক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। প্রতিটি টিকা অসংখ্য পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণিত যে তা মানুষের শরীরে প্রয়োগ করা নিরাপদ। মানবদেহকে রোগ থেকে বাঁচানোই টিকা তৈরির একমাত্র উদ্দেশ্য। তারপরও অনিশ্চয়তায় থাকলে চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করে তারপরই সিদ্ধান্ত। তবে মনগড়া যুক্তি আকড়ে ধরে থেকে টিকা বর্জন করা আর সন্তানকে রোগের মুখে ঠেলে দেওয়া একই কথা।