তেঁতুলিয়া বনবিটের অধীনে প্রায় ৩২ একর জাগয়া জুড়ে সবুজ শ্যামল ইকোপার্কে পর্যটকদের আনাগুনা বাড়ছে। মিনি চিড়িয়াখানায় পর্যাপ্ত পশুপাশি না থাকায় দূদর্শা দেখে পর্যটকদের ক্ষোভ।
জানা যায় জেলা সামাজিক বন বিভাগের উদ্যোগে পরিচালিত তেঁতুলিয়া বনবিটের ইকোপার্কে সাড়ে দশ একর জায়গা জুড়ে বাউন্ডারী ওয়াল নির্মাণ করে ২০১১ সালে নানা ধরণের প্রাণি সংরক্ষণ ও প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়। এই ইকোপার্কে শুরুতে দিনাজপুর বন বিভাগ থেকে প্রথমে একজোড়া হরিণ আনা হয়। কিন্তু ভারসাম্যহীন পরিবেশ আর শীতের তীব্রতা এবং অপর্যাপ্ত পরিচর্চা আর নিরাপত্তা এবং খাদ্য অভাব বিরাজমান থাকায় তখন নারী হরিণটি বাচ্চা প্রসব করলেও হরিণের শাবকটি মারা যায় এবং মা হরিণটিকে অসুস্থ অবস্থায় দিনাজপুর রামসাগর ইকোপার্কে চিকিৎসার জন্য পুনরায় পাঠানো হয়। পরবর্তীতে আবার একজোড়া পুরুষ হরিণ আনা হয়। কিন্তু ০৩টি হরিণের মধ্যে গত নভেম্বর মাসে একদল কুকুরের আক্রমনে একটি হরিণের মৃত্যু হয়।
বর্তমানে এই মিনি চিড়িয়াখানায় দুটি হরিণ, একটি ময়ূর পাখি, ছোট খাজায় বন্ধি ২টি বানর ও দুটি খোরগোশ আছে। বনবিভাগের উদাসীনতার কারণে চিড়িয়াখানার প্রাণিগুলো পর্যাপ্ত খাবার আর যতেœর অভাবে হাড্ডিসার হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন বানর দু’টিকে ১০টি রুটি, খোরগোশকে পাতা কপি এবং হরিণগুলোকে ২ কেজি ভূষি খাওয়ানো হচ্ছে। এখানে কোন ছোট গাছপালা না থাকায় হরিণগুলো লতা পাতা খেতে পারছে না। এ ছাড়া ময়ূরটিকে খুদ খাওয়ানো হয়। এদিকে বানর ও খোরগোশকে দুটি ছোট খাজায় কোন গৃহস্থের বাড়ির মত মানবেতরভাবে বন্ধি করে রাখা হয়েছে। হরিণগুলোর জন্য কিছুটা খুলা জায়গা থাকলেও সেখানে সবুজ কোন ঘাষ বা ছোট গাছপালা নাই। ফলে চিড়িয়াখার প্রাণিগুলোকে প্রতিদিন পর্যাপ্ত খাবারের অভাবে পুষ্টিহীনতায় রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ছে।
সামাজিক বনায়ন দিনাজপুর রেঞ্জের অধীনে তেঁতুলিয়া শহরের মহানন্দা নদীর পাড় ঘেঁষে সবুজ শ্যামল গাছহাছালি আর ইটের বাউন্ডারি বেস্টিত পিকনিক কর্ণার সংলগ্ন এই ইকোপার্ক প্রতিনিয়ত পর্যটক আর দর্শনার্থীদের ভিড় ও আনাগুনা বাড়ছে। পঞ্চগড় জেলার মধ্যে একমাত্র মিনি চিড়িয়াখানাটি দেখার জন্য জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা এখানে আসেন। কিন্তু মিনি চিড়িয়া খানায় টিকিট করে ঢুকে পর্যাপ্ত প্রাণি না থাকা এবং খাচার ভিতরে দুর্দশাগ্রস্থ প্রাণিদের দেখে দর্শনার্থীরা মন খারাপ করেছে।
মঙ্গলবার রংপুর গঙ্গাচড়া সরকারি মডেল উচ্চবিদ্যালয় থেকে পিকনিকে আসা পর্যটক সৃষ্টি রায়, আফিয়া, সিন্থীয়া বলেন, তেঁতুলিয়া ইকোপার্কে ঘুরে খুব ভাল লাগল। কিন্তু পর্যটকদের জন্য এখানে আরও কিছ ু স্থাপনা, খেলনা স্লিপার, দোলনা, নাগরদোলা ও পানির ফোয়ারা-ঝর্না স্থাপন সহ চিড়িয়াখানায় বন্য প্রাণির সংখ্যা বাড়ানো দরকার।
স্থানীয় দর্শনার্থীরা জানান, পঞ্চগড় জেলার একমাত্র ইকোপার্কটিতে হরিণ সহ অন্যান্য প্রাণী যেমন বানর, মুয়ূর ও খোরগোশ দেখার জন্য দূরদূরান্ত থেকে শিশু-কিশোর নিয়ে প্রতিদিন অনেক পর্যটকরা দেখতে আসেন। যে কারণে পার্কটির উন্নয়নে বনবিভাগ ও সরকারের সুনজর দেয়া দরকার।
ইকোপার্কের ইজারাদার কাজী মোকছেদুর রহমান জানান-বনবিভাগের কাছে প্রায় ৬ লাখ টাকা দিয়ে পার্কটি ডেকে নিয়েছি। তখন বনবিভাগের রেঞ্জার সহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ বলেছিল এখানে আরও পশুপাখি আনা হবে এবং পার্কের উন্নয়নে কাজ করা হবে। কিন্তু ৬ হাজার টাকার কাজও করেনি।
এ ব্যাপারে বনবিট কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম বলেন, ইকোপার্কে প্রাণিগুলো ভাল আছে। বানর ও খোরগোশ দুটিকে বড় খাজায় ছাড়ার জন্য উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার পত্র দিয়েছি। অনুমতি আর বরাদ্দ পেলে বড় খাজায় উম্মুক্ত করার ব্যবস্থা করা হবে।