কোমলমতি শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বর্তমানে খুব প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। শিশুর সুরক্ষা বা নিরাপত্তা বলতে বোঝায় বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে যৌন নিপীড়ন, পাঁচার, শিশু শ্রমিক এ বিষয়গুলি থেকে শিশুদের নিরাপদ রাখার ব্যবস্থাকে। এছাড়াও যে সব শিশুরা পিতামাতার যত্ন অথবা বিকল্প যত্ন থেকে বঞ্চিত, পথনিবাসী শিশু ও দারিদ্র্যের ভ্রƒকুটিযুক্ত শিশু ও যে শিশুরা জুলুম ও দাদাগিরির শিকার তাদের সাহায্যের ব্যাপার নিশ্চিত করতে হবে। শিশুদের বেড়ে ওঠা যদি নিরাপদ না হয় তবে আগামী দিনের তার প্রভাব হবে অত্যন্ত নেতিবাচক এমন আশঙ্কাই স্বাভাবিক। শিশুরা জাতির ভবিষ্যৎ, তারাই ভবিষ্যতে এ জাতিকে নেতৃত্ব দেবে। এটা সম্ভবত সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত এমন একটি বাক্য, যার বিপরীতে আমাদের করণীয় কী, এ কথা আমরা অনেকেই জানি না। প্রতিটি শিশু শারীরিক ও মানসিকভাবে বিশেষ যতেœর দাবিদার। জাতিসংঘ ঘোষিত শিশু অধিকার সনদেও এ বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। আদর-যতেœ, সঠিক দিকনির্দেশনা ও বিদ্যমান পারিপার্শ্বিক অবস্থার বিরূপ প্রভাবে অনেক শিশু প্রত্যাশিত লক্ষ্য অর্জন থেকে বিচ্যুত হচ্ছে। ইউনিসেফ এর তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৩০টি দেশ জুড়ে প্রতি বছর অন্তত তিন লক্ষ শিশুকে মারাত্মক অস্ত্র হাতে সৈনিক হিসেবে ব্যবহার করা হয় এবং এ পর্যন্ত যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার প্ররিণতিতে অন্তত ২০ লক্ষ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সারা বিশে^ পচিশ কোটি শিশুশ্রমিক প্রাণান্তরকর পরিশ্রম করে বাঁচে। প্রতিবছর বারো লক্ষ শিশু পাঁচার হয়ে যায়। চার কোটি অবহেলিত শিশু স্বাস্থ্য ও সামাজিক যত্ন থেকে বঞ্চিত হয়। শিশুদের কল্যাণ, সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিত করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘শিশু আইন, ১৯৭৪’ প্রণয়ন করেন। পরবর্তীতে জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০১৩ সালে শিশু আইন যুগোপযোগী করা হয়। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশের বেশি শিশু। তার মধ্যে অনেক শিশুর পরিবার খুবই দরিদ্র। এই দরিদ্র পরিবারের শিশুদের মধ্যে রয়েছে শ্রমজীবী শিশু, গৃহকর্মী, ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশু, প্রতিবন্ধী শিশু, পথশিশু, বাল্যবিয়ের শিকার শিশু এবং চর, পাহাড় আর দুর্গম এলাকায় বসবাসরত শিশু। সুতরাং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য এসব প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুর জন্য বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। শিশু অধিকার লঙ্ঘনের নানা বিষয়ে আইনের আরো কঠোর প্রয়োগ প্রয়োজন গণমাধ্যমসহ সামাজিক সংগঠনগুলোর এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের কতর্ব্য হওয়া দরকার সার্বিক শিশু পরিস্থিতি আমলে নেয়া এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।