দিঘলিয়ায় বোরো ধানের বাম্পার ফলনের আশা কৃষকের। খুলনার দিঘলিয়া উপজেলায় চলতি মৌসুমে কৃষকেরা ব্যাস্ত সময় পার করছেন তাদের রোপা ধানের পরিচর্যায়। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে মাঠে পানি সেচ, জমির আগাছা পরিস্কার ও বালাই নাশক ওষুধ প্রয়োগে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। তবে মাঝ পথে বিদ্যুতের ও জ¦ালানি তেল ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে কৃষকদের কিছুটা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিকমতো থাকলে সুষ্ঠুভাবে ধান ঘরে তুলতে পারবে। তবে লোকসান ঠেকাতে আগামী বোরো ধান ক্রয় মৌসুমে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার দাবি জানান তারা। কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে দিঘলিয়া উপজেলায় এবার ৪ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে। যা গত বছরের চেয়ে ২৫০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের উৎপাদন কম হচ্ছে। বোরো আবাদ না বেড়ে কমে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে দিঘলিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ কিশোর আহমেদ এ প্রতিবেদককে জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর বোরো চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মিশন ও ভিষণ বাস্তবায়নে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তার শীলা এর পৃষ্ঠপোষকতা ও নির্দেশনায় খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ব্যবস্থাপনায় অনেক পতিত জমিতে বোরো চাষ করা হয়েছে। কিন্তু দিঘলিয়ায় অনেক মাছের ঘেরে বোরো মৌসুমে বোরো ধান রোপন করা হতো। কিন্তু অনেক মাছের ঘের মালিক মাছের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় ঘেরে মাছ রেখে দিয়েছে। পাশাপাশি অনেক চাষের জমি আবাসস্থল গড়ে তোলার জন্য বালি ভরাট করার কারণে আবাদি জমি ব্যাপকভাবে কমে যাচ্ছে। তাই ফসলী জমি ঠেকাতে এ জনপদের ভূমি ব্যবসায়ীদের জন্য কঠোর নীতিমালার কঠোর প্রয়োগ প্রয়োজন। দিঘলিয়ায় চাষ হওয়া ধানের মধ্যে ব্রি-ধান ২৮, ব্রি-ধান ৫০, ব্রি-ধান ৬৭, ব্রি-ধান ৭৪, ব্রি-ধান ৮৯, ব্রি ধান-৯২, বঙ্গবন্ধুসহ হাইব্রিড ধান চাষ হয়েছে। হাইব্রিড ধানের মধ্যে রয়েছে হীরা, এসএল ৮ এইচ, দানায় দানায় ছক্কা, সিনজেনটা ১২০৩ ও ১২০৫, এসিআই-১, ব্যাবিলন, ইস্পাহানি, শক্তি, ময়না (লাল তীর), সুবর্ণ-৩ উল্লেখযোগ্য। উপজেলায় চলতি মৌসুমে চাষিদের মধ্যে বোরো চাষের ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা পরিলক্ষিত হয়েছে। শীতের প্রকোপ উপেক্ষা করে কৃষকরা কোমর বেঁধে মাঠে নেমে বোরো ধানের জমি তৈরি ও ধানের চারা রোপন করেছে। কৃষকরা জানান, প্রতিবছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়ে থাকে। এ মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। ফলে শীত এবং কুয়াশার প্রকোপ অনেক কম থাকায় বোরো ধানের চারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কম। কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটলে এবছরও বোরো ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছেন তারা। দিঘলিয়ার দেয়াড়া গ্রামের কৃষক শেখ হায়দার আলী এ প্রতিবেদককে বলেন, গভীর নলকূপ দিয়ে আমাদের চাষাবাদ করতে হয়। সবাই একসাথে জমিতে চারা রোপণে ও জমি প্রস্তুতে নলকূপের ওপর কিছুটা চাপ পড়েছে। মাঝ পথে বিদ্যুৎ ও ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির করণে কিছু সমস্যা হয়েছে। উপজেলা কৃষি দপ্তর থেকে বীজ ও সার পাইনি। হাইব্রিড ধানের চারা হাট থেকে কিনে এনে লাগিয়েছি। এ মাঠের মধ্যে আমার ধান আল্লাহ পাকের ইচ্ছায় খুব ভালো হয়েছে। আমি আমার জমির সময় উপযোগী চাহিদা পূরণ করেছি। আমার জমিতে বাম্পার ফলন হবে ইনশাআল্লাহ। গোয়ালপাড়া গ্রামের কৃষক আউব আলী বলেন, বিঘাপ্রতি জমি চাষ করতে খরচ পড়ে ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা। এরমধ্যে সার, কীটনাশক, জমি চাষ-রোপণ, পানি সেচ, ধান কাটা-মাড়াই রয়েছে। বিঘাপ্রতি ফলন হয় ২৫-৩০ মণ। বর্তমান বাজারে ধানের দাম ১১০০ টাকা থেকে ১৩০০ টাকা করে। যাদের নিজস্ব জমি আছে তাদের কিছুটা লাভ থাকে। কিন্তু যারা বর্গাচাষি তাদের কিছুই থাকে না। এতে প্রতিবছর আমাদের লোকসান গুনতে হয়। সরকার যদি সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনে তাহলে ন্যায্য দাম পাওয়া যাবে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ কিশোর আহমেদ এ প্রতিবেদককে জানান, চলতি বছরে বোরো মৌসুমে ২ হাজার ১০০ জন কৃষকের প্রত্যেককে ২ কেজি করে হাইব্রিড ধানের বীজ ও ১ হাজার ক।ষকের প্রত্যেককে ৫ কেজি করে ধান বীজ, ১০ কেজি করে ডিএপি ও ১০ কেজি করে পটাশ সার প্রণোদনা সহায়তা বিতরণসহ বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি বছর বাম্পার ফলন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এ কৃষি কর্মকর্তা।