মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় এক দোকান মালিককে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে তুলে নিয়ে জঙ্গলে আটকে রেখে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ২ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করার অভিযোগ উঠেছে গজারিয়া থানার এএসআই সুমন মিয়ার বিরুদ্ধে। খবর পেয়ে এলাকাবাসী ওই এএসআই সহ পুলিশ সদস্যদের অবরুদ্ধ করে রাখে পরে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের সহযোগিতায় তাদের উদ্ধার করা হয়।এ ঘটনায় ওই এএসআইকে ক্লোজ করা হয়েছে বলে জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। ভুক্তভোগী ওই দোকান মালিকের নাম শাকিল ফরাজী (২৬)। সে গজারিয়া উপজেলার বাউশিয়া ইউনিয়নের মধ্য বাউশিয়া গ্রামের সিঙ্গাপুর প্রবাসী এমদাদুল হক ফরাজীর ছেলে বলে জানা গেছে। ভুক্তভোগী শাকিল ফরাজী বলেন, মধ্য বাউশিয়া বাস ¯ট্যান্ডে তার খাজা আজমেরী ভ্যারাইটিজ স্টোর নামে একটি দোকান আছে। বরিবার সন্ধ্যায় তিনি গজারিয়া থানার এএসআই সুমনের মাধ্যমে জানতে পারেন তার নামে নাকি নারায়ণগঞ্জে বন্দর থানায় একটি মাদক মামলা হয়েছে। বিষয়টির প্রতিবাদ করে সাথে সাথে তিনি গত কয়েক মাসের ভেতরে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় যাননি বলে জানান। এ সম্পর্কিত কাগজপত্র দেখতে চাইলে অপারগতা পোষণ করেন এএসআই সুমন। এদিকে সোমবার সকাল ৯ টার দিকে একটি সাদা রংয়ের প্রাইভেট কারে করে কথা বলার কথা বলে তাকে দোকান থেকে তুলে নেন এএসআই সুমন। এ সময় গাড়িতে তারা দু'জন ছাড়াও টিশার্ট পরিহিত এসআই পরিচয় দেওয়া এক ব্যক্তি, কনস্টেবল রফিকুল ও গাড়ির চালক ছিল।চালক গাড়িটিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন চর বাউশিয়া এলাকার নাবিস্কো কোম্পানির এক নির্জন বাগানে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়েই একটি পিস্তল দেখিয়ে তাকে ২ লক্ষ টাকা দিতে বলেন এএসআই সুমন। তার দাবিকৃত টাকা না দিলে মাদক মামলার আসামি হিসেবে তাকে ক্রসফায়ার দিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেয় সে। এ সময় তিনি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তার সাথে টাকা মোবাইল ফোন কেরে নিয়ে মারধর করে তাকে হ্যান্ডকাপ পড়ানোর চেষ্টা করা হয়। পরে স্থানীয় লোকজন কয়েকজন এগিয়ে আসলে তারা পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে তাকে উদ্ধার করে।
ভুক্তভোগী শাকিলের মা রোকসানা বেগম বলেন, নয়টার দিকে মাইক্রোবাসে পুলিশ শাকিলকে তুলে নেওয়ার পরে বিভিন্ন জায়গায় তারা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। দীর্ঘ ২/৩ ঘণ্টায় গজারিয়া থানাসহ বিভিন্ন জায়গায় তারা শাকিলের খোঁজ করেন।পরবর্তীতে তারা জানতে পারেন একটি জঙ্গলের ভেতরে শাকিল আটকে রাখা হয়েছে। স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় সেখান থেকে পুলিশের হাত থেকে শাকিলকে উদ্ধার করে তারা নিয়ে আসেন।
বিষয়টি সম্পর্কে গজারিয়া থানার এএসআই সুমন বলেন, তার এক বন্ধু নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানায় কর্মরত সেখানে শাকিলের নামে একটি মাদক মামলা হয়েছে। সে বন্ধু আজ গজারিয়া থানায় আসে এবং বিষয়টি নিয়ে তারা নিরিবিলি কথা বলার জন্য শাকিলকে নাবিস্কো গ্রুপের বাগানে নিয়ে যায় তারা। তবে আসামিকে আটক না করে তার সাথে কথা বলার জন্য তাকে নিরিবিলি জায়গাতে কেন নিয়ে যেতে হবে এমন প্রশ্নের উত্তরে কোন উত্তর দিতে পারেননি এএসআই সুমন। বন্দর থানার এসআই তার বন্ধুর নাম পরিচয় জানতে চাইলে তিনি অপারগতা পোষণ করে অন্য কাজে ব্যস্ত আছেন বলে জানান।এদিকে নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানা ও আশপাশের পুলিশ ফাঁড়িতে খবর নিয়ে জানা যায় এসআই আবুল কালাম নামে কেউ কর্মরত নেই। বিষয়টি সম্পর্কে মুন্সীগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান আল মামুন বলেন, এরকম একটা কথা আমিও শুনেছি। তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ হিসেবে এএসআই সুমনকে ক্লোজ করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি তার সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।