থানা পুলিশের কতিপয় অফিসারকে ম্যানেজ করে প্রায় প্রতিদিন রাতে বরিশালের বিভিন্নস্থান থেকে নিষিদ্ধ জাটকা ঢাকাসহ বিভিন্নস্থানে পাঁচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ক্ষেত্রে নিরাপদ স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বরিশাল সদর উপজেলার তালতলী বাজার এলাকা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কাউনিয়া ও এয়ারপোর্ট থানার কতিপয় অসাধু অফিসারকে ম্যানেজ করে এসব জাটকা পাঁচার করা হচ্ছে। ফলে ইলিশ রক্ষায় সরকারের মহতি উদ্যোগ অনেকটাই ম্লান হতে বসেছে। সূত্রমতে, ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য গত ১ মার্চ থেকে আগামী ৩১ এপ্রিল পর্যন্ত নয় ইঞ্চির কম সাইজের ইলিশ (জাটকা) শিকার, সংরক্ষণ, পরিবহন ও বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে মৎস্য অধিদপ্তর। নিষেধাজ্ঞার সময়ে নদণ্ডনদীতে নজরদারি করে মৎস্য বিভাগ, কোস্টগার্ড, নৌপুলিশ এবং র্যাব সদস্যরা। তবে নদী ঘেরা বরিশালের বিশাল জলসীমায় সরকারি এসব সংস্থার পক্ষে পুরো এলাকা নিখুঁতভাবে তদারকি করা সম্ভব হচ্ছেনা। এ সুযোগে জেলার হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা সংলগ্ন মেঘনা, সদর উপজেলার চন্দ্রমোহন, লাহারহাট-ভেদুরিয়া, কীর্তনখোলা, কালাবদর, ইলিশা, আড়িয়ালখাঁ, বাবুগঞ্জের সন্ধ্যা এবং সুগন্ধাসহ প্রায় সব নদণ্ডনদীতেই কমবেশি চলে জাটকা নিধন।
বরিশাল নগরীর ইলিশ মোকামে অসংখ্য আড়তদার অভিযোগ করেন, নামমাত্র মূল্যে কতিপয় অসাধু মৌসুমী জেলেদের কাছ থেকে জাটকা ক্রয় করে বরিশাল সদর উপজেলার তালতলী এলাকার মাছ ব্যবসায়ী শাকিন সিকদার, নঈম ওরফে নইয়া, মিরাজ ওরফে ডানো মিরাজ, ছিদা নিজাম, সেলিম, নাসির মোল্লা বিশেষ রুট ব্যবহার করে দেশের বিভিন্নস্থানে পাঁচার করছেন। সূত্রে আরও জানা গেছে, মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার বাগড়জা গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য দিলু মিয়া ও বর্তমান ইউপি সদস্য কবির বাগ নিজেদের তত্ত্বাবধায়নে জেলেদের কাছ থেকে জাটকা সংগ্রহ করে উল্লিখিত ব্যবসায়ীদের কাছে ট্রলারযোগে তালতলী বাজারে পৌঁছে দিচ্ছেন।
সূত্রমতে, গত ১০ মার্চ সন্ধ্যায় নৌ-পুলিশ ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাসহ কয়েকটি টিম যৌথভাবে হিজলা উপজেলার মেঘনা নদীর অভয়াশ্রমে অভিযান পরিচালনার জন্য প্রস্তুতি নেয়। এ সময় ওই এলাকার কয়েকশ’ জেলে একত্র হয়ে অভিযান পরিচালনাকারী টিমের ওপর হামলা চালায়। এতে নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ বিকাশ চন্দ্র দে সহ বেশ কয়েকজন আহত হয়। এর আগে গত ৬ মার্চ সকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তালতলী বাজার এলাকায় কোস্টগার্ডের বিশেষ অভিযানে ৫৬০ কেজি জাটকাসহ দুইটি অটোরিকশা জব্দ ও চালকদের আটক করা হয়। ১৮ মার্চ বরিশালের বাবুগঞ্জ এলাকা থেকে ট্রাকভর্তি ২১ ড্রাম জাটকা জব্দসহ সোহেল সরদার ও মিরাজের ভাইয়ের ছেলে আবদুর রহমান রিমন আটক করা হয়। আটকের পর রিমন চক্রের সকল সদস্যর নাম প্রকাশ করেন।
এ ব্যাপারে জাটকা পাঁচারকারী চক্রের মূলহোতা শাকিন সিকদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা তালতলী বাজারে মাছের আড়ত চালাই। তবে আমরা জাটকা পাঁচারের সাথে সম্পৃক্ত নই। তিনি আরও বলেন, আমাদের ব্যবসায়ীক প্রতিপক্ষের লোকজনে আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এয়ারপোর্ট থানার ওসি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, থানার কোন অফিসারের বিরুদ্ধে জাটকা পাঁচারের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।