জামালপুরের সরিষাবাড়ী ও সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর উপজেলার প্রায় ২০ গ্রামের মানুষের যাতায়াতের রাস্তায় জিয়া খালের উপর ২৫ বছর আগে নব্বই দশকে নির্মিত বিএনপির করা পিলারের উপর ব্রীজ নির্মান শুরু করছে আওয়ামী লীগের ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম মানিক। এতে ২৫ বছরের যাতায়াতের দূর্ভোগের শেষ হবে। দ্রুত পূর্ণনির্মাণ করার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান কতৃপক্ষ।
পোগলদিঘা ইউনিয়ন পরিষদ সুত্রে জানা যায়, পোগলদিঘা ইউনিয়নের টাকুরিয়ায় জিয়া খালের ওপর এ ব্রীজের নির্মাণকাজ শুরু হয় নব্বই দশকে। বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে আশপাশের ২০ গ্রামের মানুষের চলাচলের দূর্দশা ঘোচাতে এ ব্রীজের কাজ শুরু হয়। কিন্তু কোনো অজানা কারণে পিলার স্থাপনের পরপরই হাফ ডাউন অবস্থায় বন্ধ হয়ে যায় এ ব্রীজের নির্মাণকাজ। পেয়ারক্যাপ পর্যন্ত কাজ হলেও বাকি কাজ শেষ হয়নি। ফলে দীর্ঘদিন ধরে এই ব্রীজের নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় দুই উপজেলার ২০ গ্রামের বসবাসরত মানুষ ফসল আনা-নেওয়া, স্কুল-কলেজ, হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্থানে চলাচলের জন্য চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে।
এতে করে সরিষাবাড়ী উপজেলার টাকুরিয়া, মালিপাড়া, ব্রাহ্মনজানী, মানিক পটল, বিন্নাফৈর, চর সরিষাবাড়ী, কাজিপুর উপজেলার মনসুরনগর, শালগ্রাম, মাজনাবাড়ী, সহ ২০টি গ্রামের হাজারো মানুষ সরিষাবাড়ী শহরে বিভিন্ন প্রয়োজনে চলাচলে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। শুকনো মৌসুমে পায়ে হেটে খালটি পার হলেও দূর্ভোগে পড়তে হয় বন্যায়। কখনো নৌকা আবার কখনো বাঁশের সাকোই ছিলো একমাত্র ভরসা। বর্ষা মৌসুমে পানি বৃদ্ধি পেলে এই জনপদের মানুষের প্রায় ৬-৭ কিলোমিটার পথ ঘুরে চলাচল করতে হতো। এতে বাড়তি সময়ের পাশাপাশি পোহাতে হতো চরম দূর্ভোগ। তবে বর্তমানে ঐ সব পিলারের উপর লোহা ও কাঠ দিয়ে ব্রীজের নির্মানের উদ্যোগ নেয় পোগলদিঘা ইউনিয়নের নৌকা প্রতিকের নির্বাচিত চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম মানিক।
টাকুরিয়া গ্রামের কৃষক আবদুল গফুর বলেন, নির্মাণ কাজ শুরুর সময় ব্রীজের আমাদের আশার আলো হলেও পরবর্তিতে তা গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। আমাদের স্বপ্ন, স্বপ্নই রয়ে গিয়েছিলো। তবে দীর্ঘ ২৫ বছরেরও বেশি সময় পর ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম মানিক ব্রীজটি করার উদ্যোগ নিয়ে করে দিয়েছেন।
শিক্ষার্থী লিখন বলেন, বন্যার সময় এই খালে পানি থাকার কারণে আমাদের অনেকটাই বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। কখনো কখনো খালটি সাতরে পার হতে হতো আবার কখনো ভিজে স্কুলে যেতে হতো। কিন্তু এখন আর কেন চিন্তা নেই।
স্থানীয় ইউপি সদস্য শামসুল হক বলেন, আমাদের এই চরাঞ্চলের মানুষের আয়ের একমাত্র উৎসই হচ্ছে কৃষি কাজ। আমাদের রবিশস্যসহ অন্যান্য ফসল ভালো ফলন হলেও এই খালের উপর ব্রীজ না থাকায় চলাচলে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। কৃষি পণ্য বাজারে নিয়ে নায্য দামে বিক্রি করতে পারেনি। কেউ অসুস্থ হলে তাকে হাসপাতালে নেয়ার মতোও কোন পরিস্থিতি ছিলো না। তবে এখন ব্রীজটি ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে করে দেয়ায় মানুষের ভোগান্তির অবসান হয়েছে।
পোগলদিঘা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আশরাফুল আলম মানিক বলেন, এলাকাবাসীর মাধ্যমে বিষয়টি আমি জানতে পারি। দুই উপজেলার প্রায় ২০ গ্রামের মানুষের যাতায়াতের কথা চিন্তা করে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সহযোগিতায় আপাতত চলাচলের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে লোহার এ্যাঙ্গেল ও কাঠ দিয়ে ব্রীজ তৈরি করে দিয়েছি। পাশাপাশি উপজেলা এলজিইডির কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে কীভাবে এখানে পূর্ণাঙ্গ ব্রীজ নির্মাণ করা যায় তার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।