রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার জয়নগর ইউনিয়ন পরিষদে পুকুর নিয়ে শালিস বৈঠকে উত্তেজনার ঘটনা ঘটেছে, কৃষক লাঞ্চিত করার বিচারের দাবিতে চেয়ারম্যান অবরুদ্ধ অতপর পলায়নের ঘটনা ঘটেেেছ। এ বিষয়ে ওই এলাকায় উভয় পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোন মূহুর্তে বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
জমি মালিক নারিকেল বাড়ীয়া গ্রামের নিয়াজ মোর্শেদ, নোনামাঠিয়াল গ্রামের সাইদ হোসেন, সেলিম রেজা জানান, দুর্গাপুর উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের বাগমারা বিলের বিগত ৮ বছর পূর্বে জমি ৭২জন জমি মালিকদের কাছে থেকে প্রতি বিঘা হাজার টাকা মূল্যে ৬০ বিঘা জমি লীজ নিয়ে পুকুর খনন করেন বাগলপাড়া গ্রামের রেজাউল করিম। পুকুর খননের ১বছর পরে রেজাউল করিম রেজা মৃত্যু বরন করলে তার মেয়ে জামাই পারিলা গ্রামের রফিকুল ইসলামের পুত্র সোহেল রানা পুকুরগুলিতে মাছচাষ করে আসছে। যে জমির লীজের মেয়াদ উত্তীর্ন হবে বর্তমান সালের আগামী ৩১ চৈত্র।
পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য দুর্গাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও দাউকান্দি বিশ^দ্যিালয় কলেজের অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক, প্রভাষক আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মতিন ও জয়নগর ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মিজানুর রহমান পুকুরের ৭২জন জমির মালিকদের মধ্যে নোনামাটিয়াল গ্রামের রফিকুল, নাসিম, বাগলপাড়া গ্রামের টিটু তেকাটাপাড়া গ্রামের খায়রুল সহ ১০/১৫জন পুকুর মালিকদের নিয়ে গোপনে আলোচনায় বসে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে জমির মালিকদের কাছ থেকে বিঘা ৫৫হাজার টাকা চুক্তি মূল্যে লীজ গ্রহীতা হিসেবে হরিরামপুর গ্রামের প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা মৎস্য ব্যবসায়ী আবদুল হালিমের নামে চুক্তিপত্র তৈরী করে স্বাক্ষর নিতে থাকে।
এরই মাঝে গত ২০ দিন পূর্বে ৬০ বিঘা জমির ৭২জন মালিকদের মধ্যে প্রায় ৪০/৪৫জন জমির মালিক এক জায়গায় উপস্থিত হয়ে বৈঠক করে জমির মালিক নারিকেল বাড়ীয়া গ্রামের আলহাজ¦ মো. আজিজুর রহমানকে সভাপতি করে পুকুর লীজ প্রদান নামক কমিটি গঠন করেন। এরপর বর্তমানে পুকুরে মাছচাষকারী মৎস্য ব্যবসায়ী সোহেল রানা’কে পুকুর লীজ নিবে কি না জানতে চাইলে সোহেল রানা লীজ নিতে সম্মতি প্রদান করে। প্রতি বিঘা ৬০ হাজার টাকা চুক্তিমূল্যে ৪৭ জন পুকুর মালিকের আনুমনিক ৪২/৪৫ বিঘা জমি বর্তমান মৎস্যচাষী সোহেল রানার নামে চুক্তিপত্র তৈরী করে দিয়ে ১বছরের নগদ অর্থ গ্রহন করে সকলে স্বাক্ষর করে দেন। এরপর জমি লীজ দেওয়া কৃষক ও লীজ নেওয়া সোহেল রানার ওপর বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে অধ্যক্ষ মোজাম্মেল, প্রভাষক আঃ মতিন ও ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান।
এক পর্যায়ে এই জটিলতা নিরসনের জন্য ইউপি চেয়ারম্যানের আহব্বানে ৭২জন জমির মালিক (আজ) ২ এপ্রিল সকাল ১১ টার দিকে জয়নগর ইউনিয়ন পরিষদে ডাকলে সেখানে ৬১জন মালিক উপস্থিত হয়। ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাধান বৈঠকে প্রতিনিধিত্ব করে প্রভাষক আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মতিন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক শেখ ফিরোজ সহ আরো অনেকে। বৈঠকে সোহেল রানার কাছে লীজ প্রদানকারী ৬০ জনের মধ্যে উপস্থিত ৫২ জন জমির মালিকদের ওপর ক্ষিপ্ত মেজাজে কথাবার্তা বলতে থাকেন শালিসদার গন। একপর্যায়ে সোহল রানার কাছে লীজ দেওয়া জমির মালিক নারিকেল বাড়ীয়া গ্রামের আমজাদেও পুত্র জাহিদুল ইসলাম প্রতিবাদ করলে চেয়ারম্যানের সাঙ্গপাঙ্গরা তাকে মারতে উদ্যত্ত হয় এবং ধাক্কাধাক্কি করে বৈঠক কক্ষ থেকে বের করে দেয়। এ সময় উবয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এরপর জাহিদুল ইসলামকে লাঞ্চিত করার প্রতিবাদ জানিয়ে লাঞ্চিতকারীদের ধাওয়া করলে তারা দৌড়ে চেয়ারম্যানের নিকট গিয়ে দাঁড়ায়। এ সময় জাহিদুল ইসলামকে লাঞ্চিতকারী চেয়ারম্যানের সাঙ্গপাঙ্গদের বিচারের দাবীতে সোহেল রানার নিকট লীজদাতা জমির মালিকরা সকলে বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়া হলরুমের সামনে অবস্থান নিয়ে চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানকে অবরুদ্ধ করে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ইউপি চেয়ারম্যান নিজগ্রাম জয়নগর থেকে ফোন করে কিছু লোকজন নিয়ে এসে উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে মোটর সাইকেল নিয়ে পলায়নের ঘটনা ঘটেছে। এনিয়ে ওই এলাকায় চরম উত্তজনা বিরাজ করছে। এ বিষয়ে পুকুর লীজ কমিটির সভাপতি আলহাজ¦ আজিজুর রহমান বলেন, পুকুর লীজ দেওয়া নিয়ে আজ বিবাদমান জটিলতার মিমাংশার জন্য চেয়ারম্যানের আহবানে বৈঠকে বসা হয়েছিলো। কিন্তু বৈঠক চলাচালীন সময়ে হট্রগোল বাঁধলে এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের সাথে যোগাযোগের করলে তিনি বলেন, আমার ইউনিয়নের দুই মৎস্য ব্যবসায়ী আবদুল হালিম ও সোহেল রানা’র মাঝে পুকুর লীজ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে জটিলতা সমাধানের জন্য আজ ২ এপ্রিল রোববার সকাল ১১টায় ইউনিয়ন পরিষদে সমঝোতা বৈঠক শুরু করি। বৈঠক চলাকালীন সময়ে উভয় পক্ষের জমির মালিকগনের মধ্যে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে আমি উভয় পক্ষকে বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান করে দেওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতি দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করি। এখানে ইউপি চেয়ারম্যানকে কেউ অবরুদ্ধ করেনি বা পালানোর কোন ঘটনা নেই। এটি গুজব। আমার জরুরী কাজ থাকায় সেখান থেকে দ্রুত চলে এসেছে। এ বিষয়ে দুর্গাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও দাউকান্দি বিশ^দ্যিালয় কলেজের অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, কাউকে চাপাচাপি করাতো দূরের কথা আমি পুকুর লীজ বিষয়ে কারো সাথে আমার কোন কথা হয়নি।
এ বিষয়ে দুর্গাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজমুল হক এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, পুকুরের জমির মালিকরা দুই পক্ষের কাছে পুকুর লীজ দেওয়া নিয়ে জয়নগর ইউনিয়ন পরিষদে মিমাংশা বৈঠকে হট্রগোল হয়েছে এমন কথা কথা শুনেছি। তবে এ বিষয়ে কোন অভিযোগ পায়নি।