রাজশাহী তানোর উপজেলার সাবেক ছাত্রলীগের সভাপতি থানা মোড়ে দীর্ঘ দিনের মোবাইল ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেনসহ তার ভাই বোনের উপর জমির বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় মা রেজিয়া বেওয়া বাদি হয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগ দায়ের করার পর থানার গেটে মায়ের কান্না আহাজারিতে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠে।
গত শনিবার রাতে উপজেলা গুড়ইল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রানপুর গ্রামের অবশরপ্রাপ্ত শিক্ষক আমিনুল ইসলামের পুত্র সাহানুর ওরফে মুকুলকে প্রধান আসামি করে ২১জনের নাম উল্লেখ করে অভিযোগ দায়ের করেন।
গত শনিবার দুপুরের দিকে থানার গেটে পুলিশের সামনে ঘটে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাটি। পুলিশের সামনে এমন হামলার ঘটনা দিনভর টক অব দ্যা তানোরে পরিনত হয়।
সেই সাথে পুলিশের একতরফা ভূমিকায় উঠেছে নানা প্রশ্ন। এমনকি হামলার একদিন অতিবাহিত হলেও রহস্য জনক কারণে মামলা রেকর্ড করেনি ওসি।
এতে করে মারাত্মক আহত দেলোয়ার বোন মমতাজ ও ভাই সওদাগর হাসপাতালে চিকিৎসা ধীন অবস্থায় আছেন। মামলা রেকর্ড ও পুলিশের নিরব ভূমিকায় চরম আতঙ্কে পড়েছেন তারা।
অভিযোগকারী দেলোয়ার হোসেনের মা রেজিয়া বেগম জানান, গত শনিবার বিবাদমান জমি নিয়ে ওসি থানায় সালিশ বিচার শুরু করেন। এর একপর্যায়ে কথাকাটাকাটি শুরু হলে থানা থেকে বের করে দেয়।
থানার গেটেই আমার দুই ছেলে ও এক মেয়েকে মেরে ফেলার জন্য দেশীয় অস্ত্র দিয়ে গরু পেটা করে পিটিয়েছেন প্রতিপক্ষ শিক্ষক মুকুল, সারোয়ারসহ সন্ত্রাসী রা।
যদি বিচার না করতে পারবেন তাহলে ওসি কেন কৌশল করে আমার ছেলে মেয়েকে মার খাওয়ালো। দেলোয়ারের মাথায় আটটি, মমতাজের মাথায় নয়টি ও সওদাগরের মাথায় সাতটি করে সেলাই দেওয়া হয়েছে।
শরীরের প্রতিটি জায়গায় মারাত্মক ক্ষত হয়ে আছে। আমি বয়োজ্যেষ্ঠ অভিযোগ নিয়ে কয়েক বার ওসির কাছে যাওয়ার পর তিনি নিয়ে দুরদুর করে তাড়িয়ে দিলেন। মনে হল আমি কোন মানুষ না। সে তো আমার ছেলের বয়সের।
আমি তো মা বয়সী। তারপরেও ওসি রেগে কথা বলছেন। থানার ভিতর থেকে তেড়ে এসে গেটে মেরে মাথা ফাটিয়ে দিল তাও মামলা হচ্ছে না, তাহলে কোন ঘটনায় মামলা হবে।
মার খাওয়ার পর আধা ঘন্টা মাথা ফাটা অবস্থায় রক্ত বের হলেও পুলিশের মন গলেনি। তারা উদ্ধারও করেনি, লোকজন উদ্ধার করে মেডিকেলে নিয়ে গেছে। সবাই রোজা ছিল।
অভিযোগে, উল্লেখ উপজেলার প্রানপুর মৌজার অন্তর্গত আরএস ৯৫ নম্বর খতিয়ানে ১৬ একর জমি রয়েছে। জমিগুলো ওয়াকফ এস্টেট। মুতাওয়াল্লি রেজিয়া বেগম।
এসব জমির মধ্যে কিছু জমি বিক্রি করেন প্রতিপক্ষ ভূমিগ্রাসী শিক্ষক মুকুল, সারোয়ার, আমিনুল, গংরা। এসব জমি দখল পেতে বিগত তিন মাস ধরে নানা ভাবে ষড়যন্ত্র করে আসছে।
গত শুক্রবার সদরের কিছু লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে দখল করতে যান। না পেরে পালিয়ে আসেন। এসব নিয়ে থানার ওসি কামরুজ্জামা মিয়া শনিবারে সালিশ বিচার বসান থানায়।
আহত ছাত্রলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন জানান, বিচারে কথাকাটাকাটি হবেই।কিন্তু ওসির সামনে কিভাবে অস্ত্র নিয়ে হামলা করে। তাহলে অবশ্যই ওসির ইন্ধন আছে।
তানাহলে থানার ভিতর ও গেটে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করেছে, মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে আমার মা অভিযোগ দিতে গেছে তাও নিতে গড়িমসি। ওসির জন্যও আমাদের উপর সন্ত্রাসী হামলা।
স্থানীয়রা জানান, আমাদের জীবনে শুনিনি থানায় সালিশ বিচারের নামে এভাবে মারপিট হয়। বিচার করতে না পারলে ওসি কেন বিচারে ডেকে মারপিট করালেন।
এখানে তো পরিস্কার ভাবে বোঝা যাচ্ছে ওসির ইন্ধন রয়েছে। অবশ্যই তিনি পক্ষপাত করছেন। মারপিটের জন্য সম্পূর্ণ রুপে ওসির ব্যর্থতা। থানার গেটে এমব মারপিট আমরা প্রথম দেখলাম।
এঘটনায় যদি মামলা না হয়, আসামি গ্রেপ্তার না হয় তাহলে তো কিছুই বলার নেই। তবে এওসি আসার পর আইনশৃঙ্খলা চরম অবনতি হয়েছে।
হামলাকারী শিক্ষক মুকুল ও সারোয়ার জানান, দেলোয়ার থানার ভিতরে ওসির সামনে চাকু মেরেছে, সিসিটভি চেক করলেই পাওয়া যাবে।
ওসি কামরুজ্জামান মিয়া জানান, সালিশ বিচার শেষের দিকে, এমন সময় দেলোয়ার উস্কানি মুলুক কথা বলা শুরু করেন। আমি সবাইকে থানা থেকে বের করে দিয়েছি।
থানার গেটের সামনে হামলা হয়েছে। এ ঘটনায় উভয়ে লিখিত অভিযোগ। দিয়েছে, তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আপনি বিচারে ডাকলেন আপনার সামনেই হামলা করে তিন জনের মাথা ফাটিয়ে দিল কি ব্যবস্থা নিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি জানান, অভিযোগ হয়েছে, তদন্ত না করা পর্যন্ত কিছুই বলা যাবে না।
প্রসঙ্গত, জমি জমা বিরোধের জের ধরে গত শনিবার দুপুরের দিকে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে থানার গেটে হামলার ঘটনা ঘটে।