হিমালয়ের পাদদেশে দিনাজপুর অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়ার উপযুক্ত পরিবেশ থাকায় চা ভাল উৎপাদন ভাল হওয়ায় পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারীর সাফল্যের পর দিনাজপুরের চিরিরবন্দরেও চা চাষ শুরু হয়েছে। ফলে আগামীতে এ চা চাষ বদলে দিতে পারে দিনাজপুরের অর্থনৈতিক উন্নয়ন। চা চাষ তৈরি করেছে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত। শতাধিক নারী পুরুষ এর কর্মসংস্থান হয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখতে শুরু করেছে এ অঞ্চলের চা-চাষিরা।
কৃষি নির্ভর জেলা দিনাজপুরে জলোচ্ছ্াস, ঝড়সহ প্রাকৃতিক তেমন কোন বড় ধরনের দুর্যোগ নেই,এখানকার মাটিও উর্বর। ধান-লিচু ভুট্টাসহ ফসল উৎপাদনও বেশী হয়। দেশের খাদ্য ঘাটতিতে যথেষ্ট অবদান রাখছে দিনাজপুর। এরপরেও ধান-লিচু-ভুট্টার পাশাপাশি সমতল ভূমিতে চা চাষের আগ্রহ দিনদিন বেড়েই চলেছে। পতিত জমি ছাড়াও অনেকে ধান ও ভুট্টার জমিতেও এই চা চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। উপজেলার সাতনালা ইউনিয়নের আতিকুর নামে এক কৃষক “মরিয়ম টি বাগান” নামে একটি চা বাগান করে চাষাবাদ শুরু করেছেন।
মরিয়ম টি বাগানের মালিক এম আতিকুর রহমান বলেন, কৃষির জেলা দিনাজপুর হলেও এখানকার কৃষকরা অনেকটা অবহেলিত। কৃষি শ্রমিকরাও যাতে বেকার না থাকে সে চিন্তা ও ভাগ্য উন্নয়নের চিন্তা থেকে ২০২০ সালে চায়ের বাগান শুরু করি প্রথমে প্রায় ৫ একর জমিতে শুরু করি এখন প্রায় ১০ একর জমির উপর চা বাগান করেছি। তিনি আরো বলেন, এখানে চা বাগান করে স্থানীয় শতাধিক নারী পুরুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। তবে কাছাকাছি ফ্যাক্টরী না থাকায় বেশ ঝামেলা পোহাতে হয়। তারপরও বেশ আগ্রহ নিয়ে কাজ করছি।
মরিয়ম টি বাগানের চা শ্রমিক দিলাপ কুমার বলেন, অন্তত ২ বছর ধরে এ বাগানে চায়ের পাতা তুলি। চা বাগানে কাজ করে মুজুরিটা তুলনামূলক কম।
চা শ্রমিক লতা রানি বলেন, আগে কৃষি জমিতে কাজ করতাম, আমার স্বামী কাজে যেতে নিষেধ করত। এখন আমার স্বামীসহ দুজনে মরিয়ম টি বাগানে কাজ করি। কৃষিকাজ তো সবসয় থাকে না, আগে কাজ না থাকলে বাসায় বসে থাকতে হত। এখন বাড়ির পাশে চা বাগান হওয়ায় দুজনে মিলে চা বাগানে কাজ করে আমাদের সংসারে অনেকটা অভাব দূর হয়েছে।
চা শ্রমিক অনিকা রায় বলেন, চা বাগানটি বাসার কাছে হওয়ায় খুব ভালো হয়েছে আগে বাসায় বসে থাকতাম কোন কাজ করতাম না। এখন বাসার কাছে চা বাগান হওয়ায় এখানে কাজ করে ইনকাম করে সংসারে কাজে লাগাতে পারছি। বাচ্চাদের লেখা পড়ার খরচ দিতে পারছি।
উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, উপজেলায় দুইটি ইউনিয়নে প্রায় ১২ একর জমিতে চা চাষ হচ্ছে। সুগন্ধী ধান-লিচুর জন্য এ উপজেলার নাম ডাক থাকলেও এখন চা পাতার ফলন বেশ ভালো হচ্ছে। চা বাগান গুলোতে স্থানীয় শতাধিক নারী পুরুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে বিশেষ করে নারি শ্রমিকরা বেশি কাজ করছে। চিরিরবন্দর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জোহরা সুলতানা বলেন, চিরিরবন্দরের কৃষিতে নতুন মাত্র যোগ হয়েছে চা চাষ। আমাদের উপজেলার সাতনালা ও ফতেজংপুর দুটি ইউনিয়নে প্রায় ১২ একর জমিতে চায়ের চাষ হচ্ছে। কৃষি অফিস থেকে সব ধরনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে চা চাষিদের।
উল্লেখ্য উত্তর অঞ্চলের সমতল ভুমি দিনাজপুরে বীরগঞ্জ উপজেলায় ২০১৪ সালে প্রথম ক্ষুদ্র পর্যায়ে চা চাষ শুরু হয়। ধীরে ধীরে এর পরিধি বেড়ে চিরিরবন্দর উপজেলায় এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে।