দক্ষিণাঞ্চলের বৈচিত্রময় কৃষিতে সংযোজিত হয়েছে অপার সম্ভাবনাময় ভাসমান পদ্ধতির সবজি চাষ। বরিশাল বিভাগের অধিকাংশ এলাকা নিন্মাঞ্চল হওয়ায় বর্ষা মৌসুমের ছয় মাস পানিতে নিমজ্জিত থাকে বহু জমি। যে কারণে দানাশষ্যসহ সবজি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এসব দিক বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গবেষণা শুরু করে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছেন জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা।
পরীক্ষামূলকভাবে তারা ভাসমান পদ্ধতিতে বিভিন্নজাতের সবজি চাষ করে ইতোমধ্যে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছেন। পরীক্ষামূলক এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ শুরু করা হলেও বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে এর চাষাবাদ শুরুর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন গবেষকরা। তাদের এ গবেষনা সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হলে সবজি চাষে বিপ্লব ঘটবে বলে আশা করেছেন গবেষকরা।
ভাসমান প্রকল্প পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান তালুকদার বলেন, ভাসমান পদ্ধতির চাষাবাদে কীটনাশকের ব্যবহার নেই। যেকারণে উৎপাদিত সবজি নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত। এ ছাড়া আবাদি জমি কমে যাওয়ায় জলাধারের এ সবজি চাষের মাধ্যমেই তারা আশার আলো দেখছেন। তিনি আরও বলেন, ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদে জলাবদ্ধ এলাকায় বাঁশের মাচা তৈরি করে কিংবা সুতা দিয়ে মাচা তৈরি করে তাতে সবজি চাষাবাদ করা হয়। সহজেই সবজি চারাগুলো ওই মাচায় বেড়ে ওঠে। এ পদ্ধতিতে বারো মাসেই লাউ, তরমুজ, শিম, কুমড়া, ঝিঙ্গা, শশা, কাকরল, করল্লাসহ বিভিন্ন সবজির চাষাবাদ করা সম্ভব।
আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. বিমল চন্দ্র কুন্ডু বলেন, গবেষণার মাধ্যমে আধুনিক লাগসই ভাসমান কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে জলমগ্ন বা পতিত জমি ফসল আবাদের কাজে ব্যবহারের ওপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যাপক গুরুত্বারোপ করেছেন। যারমধ্যে দেশের দক্ষিণাঞ্চল ও হাওড় অঞ্চল অন্যতম। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশের ৭৭ উপজেলায় এ প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। দেশের জলমগ্ন এলাকাগুলো ফসলের আওতায় আনাই এ প্রকল্পের মুল উদ্দেশ্য।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গবেষণা শুরু করেন কৃষি বিজ্ঞানীরা। তারই ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে গবেষণায় ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছেন বরিশালের বাবুগঞ্জের রহমতপুর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা। তিনি বলেন, ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদের মাধ্যমে ফসলের সার্বিক উৎপাদন বাড়ার পাশাপাশি জলবায়ুগত পরিস্থিতিতে দেশের জলমগ্ন এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
পতিত জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষ ॥ জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে বোরো ধান চাষাবাদের পাশাপাশি জমির পতিত জায়গায় মিষ্টি কুমড়ার চাষ করে ব্যাপক সফলতার পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন কয়েক হাজার কৃষক।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা প্রতিটি এলাকার মাটি উর্বর হওয়ায় চাষিরা কুমড়ার বেশ ভালো ফলন পেয়েছেন। শুধু যে মিষ্টি কুমড়া এমনটা নয়; এ গাছের পাতাও শাক হিসেবে বিক্রি করা হয় স্থানীয় হাট-বাজারে। সূত্রে আরও জানা গেছে, বোরো ধান চাষাবাদের পাশাপাশি উঁচু পতিত জায়গা ফাঁকা না রেখে সাথী ফসল হিসেবে অল্পখরচে বেশি লাভবান করতে কৃষি অফিস থেকে চাষীদের মিষ্টি কুমড়া চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
কৃষক দীপক জয়ধর, বীরেন ভদ্র, সাধন মৃধাসহ অনেকেই জানান, পতিত জমিতে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করে ইতোমধ্যে তারা স্বাবলম্বী হয়েছেন। বর্তমানে বাজারে প্রতি মণ হাইব্রিড জাতের মিষ্টি কুমড়া নয়শ’ থেকে এক হাজার টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। আর প্রতিটি কুমড়া চার কেজি থেকে ১০ কেজি ওজনের হয়ে থাকে। যা পাইকারদের হাত ঘুরে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে চলে যাচ্ছে।
আগৈলঝাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দোলন চন্দ্র রায় বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন দেশের এক ইঞ্চি জমিও পতিত রাখা যাবেনা। তারই ধারাবাহিকতায় উপজেলার পতিত থাকা জমিতে অত্যন্ত কম খরচে মিষ্টি কুমড়া চাষ করতে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, চলতি বছর আগৈলঝাড়ায় ১৫ হেক্টর জমিতে বারোমাসী, বারি, মনিকাসহ স্থানীয় জাতের মিষ্টি কুমড়ার চাষ করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সবসময় কৃষকদের সহযোগিতা করা হয় জানিয়ে কৃষি কর্মকর্তা বলেন, আগামীতে মিষ্টি কুমড়া চাষ আরও বৃদ্ধি করতে কৃষকদের প্রণোদনার আওতায় আনা হবে।