কালীগঞ্জ উপজেলায় চলতি শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় শত শত নলকূপে পানি উঠছে না। এ ছাড়া হাজার হাজার টিউবওয়েলে পানি কম উঠছে। পানির স্তর নেমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। খবার হোটেল ব্যবসায়িরা ও পড়েছে পানির অভাবে মহাসংকটে। ইরি ধানের মাঠে সেচকাজে মাত্রাতিরিক্ত ভুগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করায় এমনটি হয়েছে। চলতি শুষ্ক মৌসুমে কালীগঞ্জ উপজেলার বেশিরভাগ বিল-ঝিল, জলাশয় ও পুকুর-নদীর পানি শুকিয়ে গেছে। বিশেষ করে জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত ১০ নদী ও ২টি নদের প্রায় ৯০ শতাংশ পানি শুকিয়ে গেছে। ফলে কৃষকরা নদীর মাঝে ও পাশে ধান চাষ করছে।
জেলার ছয় উপজেলায় প্রায় অর্ধ লক্ষাধীক নলকূপে পানি কম উঠছে। পানির শ্রমিকরা বলছেন, সাধারণত ২২ থেকে ৩০ ফুট মাটির নিচে পানির স্তর পাওয়া যায়। কিন্তু এখন নলকূপ স্থাপন করতে গিয়ে ৪০ থেকে ৫০ ফুট নিচেও পানির লেয়ার মিলছে না। যে কারণে পানির লিয়ার পাওয়া যাচ্ছে না ও নতুন করে মানুষ টিউওয়েল পুতছে না। কৃষকের অনেক ধান ক্ষেতের স্যালো মেশিনে ও পানি উঠছে না। অনেক স্যালো মেশিন চানি উঠতে উঠতে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন বলছে, তাদের অনুমতি নিয়ে জেলায় ১৭০ টির মতো গভীর এবং ৭ হাজার ৯২১টি অগভীর নলকূপ রয়েছে। তবে তাদের অনুমতি ছাড়া ব্যক্তি উদ্যোগে জেলার বিভিন্ন এলাকায় আরও কয়েক হাজার গভীর ও অগভীর নলকূপ রয়েছে। এসব নলকূপ থেকে নিয়ম না মেনে যত্রতত্র পানি উত্তোলন করায় পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে বাসা বাড়ির অগভীর নলকূপে। পানি নিয়ে কাজ করা জেলা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বিএডিসি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রায় ৮ মাস বৃষ্টি না হওয়ায় পানির প্রাকৃতিক উৎসগুলো ক্রমেই শুকিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি হালকা বৃষ্টি হলেও তা কোনো প্রভাব ফেলেনি। এরমধ্যে অতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে ইরিধানের জমিতে সেচ দেওয়া এবং গরমের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ধীরে ধীরে জেলার নলকূপগুলোর এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া নিয়ম রয়েছে এক কিলো মিটারের মধ্যে গভীর নলকূপ স্থাপন করা যাবে না। কিন্তু সেই নিয়ম না মেনে যত্রতত্র ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করায় এমন সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে গৃহস্থালীর কাজে যেমন অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে তেমনি গৃহপালিত পশু-পাখির বিশুদ্ধ পানির উৎসেরও সংকট দেখা দিয়েছে। জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যক্তি উদ্যোগে যারা বাড়িতে নলকূপ বসিয়েছেন তারা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরামর্শ নিলে শুষ্ক মৌসুমে পানির এমন সংকট হত না।
কালীগঞ্জ উপজেলার ১১ টি ইউনিয়নের মধ্যে অধিকাংশ বাসাবাড়ি, হোটেল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কৃষকের ধানক্ষেতসহ বিভিন্ন স্থানের নলকুপে পানি উঠা বন্থ হয়ে গেছে। শৈলকুপাতেই রয়েছে ৩৭ হাজার ৫০০ নলকূপ। যার ভেতরে এই মুহূর্তে বেশির ভাগ নলকূপে পানি কম উঠছে। এরমধ্যে অনেক টিউবওয়েল পানি না ওঠায় অকেজো হয়ে পড়েছে। অথচ উপজেলায় সরকারি নলকূপ রয়েছে মাত্র ১৫০০।
কালীগঞ্জ শহরের টিউবয়েল ব্যবসায়ী হাছান মিয়া জানান, তাদের শ্রমিকরা গ্রামঞ্চলে নলকূপ বসিয়ে থাকে। সাধারণত ২০ থেকে ২৪ ফুট মাটির নিচে পানির লেয়ার বা স্তর পাওয়া যায়। কিন্তু এখন নলকূপ স্থাপন করতে গিয়ে ৩৫ থেকে ৪০ ফুট নিচে পানির লেয়ার মিলছে। তবুও পর্যাপ্ত পানি উঠছে না। নলকুপ স্থাপন কারি শ্রমিক শাহাদ আলী বলেন,বর্তমানে নলকুপ স্থাপনের কাজ হচ্ছে না, কিন্তু পানি উঠছে না এমন অভিযোগ প্রতিদিন পাওয়া যাচ্ছে। ভারি বর্ষা না হলে আগের মতপানি পাওয়া সম্ভব না।
জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম জানান, জেলাজুড়ে কত হাজার বেসরকারি বা ব্যক্তি উদ্যোগে নলকূপ রয়েছে তা আমাদের পরিসংখ্যানে নেই। তবে সরকারি ভাবে জেলায় ১৬ হাজার গভীর ও ১৭ হাজার অগভীর নলকূপ রয়েছে। এসব নলকূপে পানির স্বাভাবিক অবস্থা রয়েছে।