আনারস একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসলও। আমাদের দেশে মূলত সিলেট, মৌলভীবাজার, টাঙ্গাইল, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্যাপকভাবে আনারস চাষ হয়। তবে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে উৎপাদিত আনারস দেশখ্যাত।
রসে ভরপুর শ্রীমঙ্গলের আনারসের জুড়ি জেলা ভার। শ্রীমঙ্গলের বিন্তৃর্ণ অঞ্চলে আনারস জন্মে। উপজেলার বিষামণি, মাইজদিহি, হোসেনাবাদ, এমআর খান, নন্দরানী, বালিশিরা, নূরজাহান, ডলুছড়া, সাতগাঁও, মোহাজেরাবাদসহ প্রতিটি এলাকার প্রচুর আনারস চাষ হয়। ভর মৌসুমে প্রতিদিন কাকডাকা ভোর থেকে শত শত ঠেলাগাড়ি আনারস নিয়ে শ্রীমঙ্গলের বাজারে আসে। এখানে থেকে আনারস চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
শ্রীমঙ্গলে এখন সারাবছরই কম-বেশি আনারস উৎপাদিত হয়ে থাকে। এবার রমজান মাসে প্রচুর আনারস বাজারে আসছে। দামও ভাল। কৃষকরাও খুশি। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব আনারস যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এবার রমজানে আনারসের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সরবরাহ ভাল থাকায় পাইকারী ও খুচরা কেনাবেচাও হচ্ছে ভাল।
স্থানীয় কৃষি অফিস সুএ জানায়, শ্রীমঙ্গলে ৪০৯ হেক্টর জমিতে হানিকুইন, জায়েন্টকিউ ও কেলেন্ডার জাতের আনারস চাষ হয়েছে। এরমধ্যে হানিকুইন সবচেয়ে বেশি ও জনপ্রিয় একটি জাত। দেখতে সুন্দর ও খুবই সুস্বাদু। এবার আনারস চাষীরা যথাসময়ে প্রয়োজনীয় সেচ ও আন্ত:পরিচর্যা করায় ফসল আগাম এসেছে। পবিত্র রমজান মাসে বাজারজাত করতে পারায় বাজারমূল্য বেশি পাঁচ্ছে এবং ফলনও বাম্পার হয়েছে।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপণ্ডপরিচালক মোঃ সামছুদ্দিন আহমদ বলেন, উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে আমরা চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছি। উপণ্ডসহকারী কৃর্ষি কর্মকর্তারা এসব বাগানে নিয়মিত দেখভাল করছেন। তিনি আরো জানান, বর্তমানে জেলায় ১২১০ হেক্টর জমিতে আনারস চাষ হচ্ছে। তিনি বলেন, বিদেশ থেকে আমরা ‘এমভি-২’ নামে একটি আনারাসের ভ্যারাইটি আনার চেষ্টা করছি। এটি চাষ করতে পারলে আনারস উৎপাদনে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শ্রীমঙ্গলের মাটি, আবহাওয়া ও জলবায়ু আনারস চাষের বিশেষ উপযোগী হওয়ায় এখানে উঁচুনিচু পাহাড়ি টিলায় প্রচুর আনারসের চাষ হয়। তবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় পচনশীল এ ফল যখন একসঙ্গে পাকতে শুরু করে তখন কৃষকদের নামমাত্র মূল্যে অনেক সময় ফল বিক্রি করে দিতে হয়। এছাড়াও অনেক আনারস পঁচে নষ্ট হয়।
স্থানীয় কৃষি অফিস জানায়, আনারস সংরক্ষণের জন্য শ্রীমঙ্গলে একটি হিমাগার স্থাপন জরুরি। এছাড়াও শ্রীমঙ্গলে সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে কোনো জ্যাম, জুস, জেলিসহ কোন টিনজাত শিল্প গড়ে উঠেনি। এখানে টিনজাত শিল্প গড়ে উঠলে স্থানীয় বেকার মানুষের কর্মসংস্থানসহ এলাকার চাহিদা মিটিয়ে টিনজাত পণ্য বিদেশেও রপ্তানি করা যেত।