ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ শহরের বাজার চাঁন্দিনাটি প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিত্যক্ত ঘোষনা করা হয়েছে সেটাও ১০ বছর পূর্বে। কিন্তু এখনও সেই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের নিচেই ব্যবসা করছেন দেড় শতাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ি। যে দোকান গুলোতে সব সময় খরিদ্দার থাকেন আরো কমপক্ষে তিন শতাধিক। যারা সকলেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কেনাবেচা করে থাকেন প্রতিদিন মকাল ছয় টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত।
এই চাঁন্দিনা ভবনের ছাদের কিছু অংশ ধসে পড়ে এক ব্যবসায়ির মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে। মাঝে মধ্যেই ভবনের ছাদের পলেস্তারা ধসে পড়ছে। মূল ভবনটিও যে কোনো সময় ধসে পড়তে পারে। সম্পূর্ণ ভবনটি ধসে পড়লে বড় ধরণের জীবনহানি ঘটতে পারে এমন আশঙ্কা ব্যবসায়িদের ও স্থানীয় পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগের। কিন্তু ব্যবসায়িরা বিকল্প কোনো জায়গা পাঁচ্ছেন না, ফলে ঝুঁকি নিয়েই ব্যবসা করে যাচ্ছেন। পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বার বার ভবনটি ছেড়ে দেওয়ার নোটিশ দিয়েছেন। ঝুকিঁপূর্ণ চান্দিনা ভবনটি খালি করে দেওয়ার জন্য নোটিশ দেওয়া হলেও আজো কেউ জায়গা ছাড়েনি। ব্যবসায়িরা বলছেন, তারা সবাই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ি। এখানে ব্যবসা করেই তাদের সংসারের পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে আছে। এখান থেকে সরে গেলে তাদের না খেয়ে থাকতে হবে এবং নতুন কোন জায়গা পাওয়া যাবে না ব্যবসা করার জন্য।
ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলা শহরের প্রধান কাঁচা বাজারটি ১৯৮৭-৮৮ অর্থ বছরে ভবন নির্মান করা হয় ব্যবসায়িক ও সাধারন ক্রেতাদের সুবিধার জন্য। হাট-চাঁদনী বলে পরিচিত এই চাঁন্দিনাতে দেড় শতাধিক দোকান রয়েছে। যার বেশির ভাগ, চিড়া-মুড়ি সবজী,চাউল,মুড়ি, ডিমের আড়ত, মুদি দোকান,পান সুপারিসহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক রয়েছে। এই চাঁন্দিনার দুই পাশে রয়েছে আরো দুইটি টিনসেডের চাঁন্দিনা। যার একটিতে আটা-ময়দা আর অপরটিতে মাছ ও মাংশ বিক্রি হয়। তৎকালীন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মরহুম রফি উদ্দিনের প্রচেষ্টায় প্রায় ৪৫ লাখ টাকা ব্যায়ে এই চাঁন্দিনা নির্মিত হয়।
ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরেছে। ছাদের পলেষ্টারা খুলে খুলে পড়ছে। ব্যবসায়িরা মাথা বাঁচাতে বাঁশের খুটি লাগিয়ে চাটাই দিয়ে আড়াল করে রেখেছেন। চাঁন্দিনার ব্যবসায়িরা জানান, এত ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসা করা যায় না। কেনাবেচা করলেও চিন্তা থাকে ছাদের দিকে। ব্যবসার প্রয়োজনে অনেক টাকা মার্কেটে ছড়ানো রয়েছে। এই ব্যবসা ছেড়ে দিলে টাকা গুলো ফেরত পাবেন না। যে কারণে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছেন।
ব্যবসায়িরা জানান, ২০১০ সালের ২৫ অক্টোবর দোকানে বসে ছিলেন চাউল ব্যবসায়ি অজয় কুমার। হঠাৎ ছাদের একটি অংশ ধসে তার মাথার উপর পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। এ সময় আরো দুইজন আহত হন। এখনও মাঝে মধ্যেই ছোট বড় দূর্ঘটনা ঘটছে।
ভবনটির ছাদের পাশ দিয়ে রেলিং করায় বৃষ্টির সময় পানি জমে থাকতো। যে কারণে অল্প সময়ে ভবনটি নষ্ট হয়েছে। এখানে দেড় শতাধিক দোকান রয়েছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়িদের এখানে ব্যবসা করেই সংসার চলে। কিন্তু বর্তমানে ব্যবসায়িরা আছেন জীবনের ঝুঁকিতে। এই চাঁন্দিনাটি ভেঙ্গে নতুন করে নির্মানের প্রয়োজন। ব্যবসায়িরা বলছেন তারা দীর্ঘদিন বড় বড় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কাছে ধর্না দিয়েছে, সে সময় তাদের কে বড় ধরনের প্রতিশ্রুত দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে অদ্যাবধি কোন প্রতিশ্রুত কাজেই আসেনি।
কালীগঞ্জ পৌরসভার কর্তৃক ২০১৩ সালের ২ মে একটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষনা করা হয় ও ব্যবসা না করার জন্য বলা হয়। আবার ব্যবসায়িদের ওই জায়গা থেকে সরে যেতে বলা হয়েছে, কিন্তু তারা যাননি। একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে তাদের তার পর তারা সরে যায়নি। কিন্তু বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় তারা যচ্ছেন না।
কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ বলেন, হাটচাদনির জায়গাটি ১ নং খতিয়ানের ডিসি অফিসের। যে কারণে একটু সমস্যা হচ্ছে। তিনি ও এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার চেষ্টা করে যাচ্ছেন দ্রুত হাটচাদনি টি নির্মান করার জন্য। ইতোমধ্যে তিনি ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলেছেন, জানিয়ে দেওয়া হয়েছে অর্থ সংগ্রহ করতে পারলে দ্রুত কালীগঞ্জ হাটচাদনি ভবনটির কাজ করা হবে।