মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের ১৪ টি ইউনিয়নের মধ্যে মাদক কারবারিদের নিরাপদ স্থান হিসেবে আলোচনায় রয়েছে মালখনগর ইউনিয়ন। পুলিশের তালিকায় এ উপজেলায় বার বার মাদকে শীর্ষে অবস্থান করছে এ ইউনিয়ন। মালখানগর চৌরাস্তা এখন মাদকের হাট হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
দুঃখ প্রকাশ করে অনেকে জানান, এখানে মাদক কারবারি ও সেবনকারী ওপেন সিক্রেট। পুলিশ, সাংবাদিক, সমাজসেবক, জনপ্রতিনিধি কেউ কোন গুরুত্ব দিচ্ছেন না। আগামী প্রজন্ম ধ্বংস হলে তারপর গুরুত্ব দিবে নাকি? এলাকাবাসীর একটি অংশ চায় এখান থেকে মাদক নির্মূল হোক, কিন্তু এ কাজটি করবে কারা! পুলিশতো দেখেও দেখে না। তারা আরো জানান এলাকার কিছু অংশ প্রতিবাদ করতে চাইলেও অনেকে এগিয়ে আসে না। আবার অনেকে মাদক কারবারিদের সাথে জরিত হয়ে সুবিধা নিচ্ছে। বর্তমানে এখানে নিরাপদ স্থান পেয়ে বিভিন্ন এলাকার মাদক ব্যবসায়ীরা এ ইউনিয়নে এসে বাসা, ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে অবৈধ মাদক ব্যবসা চালাচ্ছেন দেদারছে। মালখানগর চৌরাস্তার আশপাশে মাদকের বড় ডিলার সুমনের বাড়িতে সকাল ৬ টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। সে বরাবর একটা সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। চৌরাস্তায় বেশ কিছু সিসিটিভি ক্যামেরা সাটানো, ফুটেজ দেখে প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
জানা যায় উপজেলার কাজীরবাগ গ্রামে মো. জাফর এর বাড়ির ২য় তলা বিল্ডিংয়ের নিচ তলায় প্রায় ৬ মাস যাবৎ ভাড়া নিয়ে মাদক এবং ঢাকা থেকে মেয়ে নিয়ে এসে দেহ ব্যবসা করছেন হারাধন (৫৫) ও তার স্ত্রী শিরিন (৪০), হারাধনের বাড়ি উপজেলার রশুনিয়া ইউনিয়নে সে হিন্দু ও একজন গাড়ী চালক, অন্তরালে মাদক ব্যবসা, তার স্ত্রী শিরিন মুসলিম টঙ্গীবাড়ি উপজেলার বেতকা বাড়ী, তার বাসায় হেরোইন ও ইয়াবা বিক্রি করে এবং মেয়ে এনে দেহ ব্যবসা করে। গত দুই মাসে তার বাসায় অনেক ঘটনা ঘটেছে। এলাকাবাসী বাড়িওয়ালা জাফরকে অনেকবার বিষয়গুলো অবহিত করেছেন। কিন্তু তিনি কর্ণপাত করনে নাই।
শুক্রবার (৭ এপ্রিল) বিকালে জাফরের বাড়ির ভাড়াটিয়া শিরিন ও হারাধন বাসায় বসেই হেরোইন ও ইয়াবা বিক্রি করছে। এলাকাবাসী কয়েকজন এক ব্যাক্তিকে আটক করে এক পুড়িয়া হেরোইনসহ সে নাকি রিক্সা চালক। সে স্বীকার করে ৮শত টাকা দিয়ে শিরিনের নিকট থেকে কিনেছে। শিরিন ও হারাধনের নিকট থেকে সে মাঝে মাঝে সংগ্রহ করে এমনটা জানান। তখন সেখান থেকে কামাল মিয়ার ছেলে বাবু স্থানীয় ইউপি সদস্য এম এ সাইদকে খবর দেয়। সে এসে দেখেন শত শত মানুষ ভীর করছে, ভাড়াটিয়ার গেট লাগানো। তখন তিনি থানায় ফোন দেন এবং পুলিশ তার ৩০ মিনিট পর ঘটনাস্থল চলে আসে এসআই ফয়জুরসহ।
এ বিষয়ে ইউপি সদস্য এম এ সাইদ জানান, ঘরের দরজা বন্ধ থাকায় খুলতে বলি। ভীতরে দেখি ইউনিয়ন যুব মহিলা লীগের আহ্বায়ক পারভীন আক্তার (৫৪) ও তার ছেলে জয় (২৬) মাদক ব্যবসায়ী মহিলাকে বডি তল্লাশী করছে। পারভীন মহিলার বুকের জামার ভীতর হাত ঢুকিয়ে টাকা বের করছে। সেখানে রনিসহ আরো কয়েকজন ছিলো। আমি বাইরে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে ভীতরে যাই। জিজ্ঞেস করি কিকি পাওয়া গেল, প্রথমে পারভীন ও তার ছেলে স্বীকার করে না, পরে ওখানে উপস্থিত রনি বলে আরো ইয়াবা ও হেরোইন পাওয়া গেছে এবং বেশ কিছু ভাগে মোচরানো টাকা পাওয়া যায়। কিন্তু পারভীন তার ছেলেকে দিয়ে টাকা, ইয়াবা ও হেরোইন পাস করে ছেলেকে বের করে দেয়। ছেলে কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে বলে ৪ পিস ইয়াবা ও ৩ পুড়িয়া হেরোইন পাওয়া গেছে। অনেকগুলো হেরোইন, ইয়াবা ও টাকা তোমরা উদ্ধার করলা এখন তোমরা কম দেখাচ্ছ। ঠিক আছে পুলিশ কাছাকাছি আসছে তাদের কাছেই তোমরা বলো। এ কথা বলায় পারভীন ও তার ছেলে আমাকে মারতে আসে সেখানে উপস্থিত ছিলো বাবুল কাজী ও আবদুল কাদিরসহ অনেকে তারা থামিয়ে দেয়। এমন সময় পুলিশ মেইন রোডে এসে ফোন দেয় কিভাবে আসবে আমরা কয়েকজন পুলিশকে আগাতে যাই, এই সুযোগে পারভীন ও তার ছেলে মাদক ব্যবসায়ী শিরিন ও হারাধনকে পেছেনের গেট দিয়ে সরিয়ে দেয়। পরে এসআই ফয়জুর হোসেন ৪ পিছ ইয়াবা ও ৩ পুড়িয়া হেরোইন নিয়া যায় এবং পারভীনকে খবর দিয়ে যায় ২৪ ঘন্টার মধ্যে আসামি ও বাকি মালামাল নিয়া থানায় হাজির করতে।
এ বিষয়ে থানা সেকেন্ড অফিসার মো. ফয়জুর হোসেনের সাথে যোগাগোগ করে পাওয়া যায় নাই।
সিরাজদিখান থানা ওসি একেএম মিজানুল হক জানান, বিষয়টি আমি অবগত না, জেনে পরে জানাব।