পবিত্র রমজান মাস ও ঈদ উপলক্ষে প্রবাসীদের বৈধ পথে রেমিট্যান্স তথা প্রবাসী আয় পাঠানোর পরিমাণ বেড়েছে। সদ্য সমাপ্ত মার্চ মাসে বৈধপথে ২০১ কোটি ৭৭ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। আগের মাসের চেয়ে যা ৪৫ কোটি ৭২ লাখ ডলার বেশি। গত ফেব্রুয়ারিতে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৫৬ কোটি ১২ লাখ ডলার।
এছাড়া ২০২২ সালের মার্চের তুলনায় রেমিট্যান্স বেড়েছে ৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ বা ১৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার। গত বছর মার্চে প্রবাসী আয় ছিল ১৮৫ কোটি ৯৭ লাখ ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, মার্চ মাসে ইসলামি ব্যাংকের মাধ্যমে আসে ৪৫ কোটি ৬১ লাখ ডলার, সিটি ব্যাংকের মাধ্যমে আসে ১৫ কোটি ৬৩ লাখ ডলার ও পূবালী ব্যাংকের মাধ্যমে ১২ কোটি ২৩ লাখ ডলার। এরপরই সোশ্যাল ইসলামি ব্যাংকের মাধ্যমে আসে ১০ কোটি ৭৫ লাখ ডলার, আল-আরাফাহ্ ইসলামি ব্যাংকের মাধ্যমে ৯ কোটি ৮৭ লাখ ডলার ও অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে ৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার। প্রবাসী আয় সংগ্রহে শীর্ষ তালিকায় হঠাৎ করে চলে এসেছে সোশ্যাল ইসলামি ও আল-আরাফাহ্ ইসলামি ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বিবরণী অনুযায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাস জুলাই-মার্চে মোট প্রবাসী আয় এসেছে ১ হাজার ৬০৩ কোটি ডলার। রমজান ও ঈদের কারণে আগের চেয়ে বেশি আয় পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা।
ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রমজান ও ঈদের কারণে আগের চেয়ে বেশি আয় পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। আবার জাকাতের তহবিলও আসছে। এ ছাড়া ডলার-সংকটের কারণে অনেক ব্যাংক বেশি দামে প্রবাসী আয় নিয়ে আসছে। এর প্রভাব পড়েছে প্রবাসী আয় আসার চিত্রে। ব্যাংকগুলো এখন প্রবাসী আয় সর্বোচ্চ ১০৭ টাকা দাম দিতে পারে।
প্রবাসী আয় বাড়াতে ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সেগুলো মধ্যে রয়েছে, বৈধ পথে প্রবাসী আয় পাঠানোর বিপরীতে নগদ প্রণোদনা ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২ দশমিক ৫ শতাংশ করা, প্রবাসীদের সিআইপি সম্মাননা দেওয়া, প্রবাসী আয় বিতরণ প্রক্রিয়া সম্প্রসারণ ও সহজ করা, অনিবাসী বাংলাদেশিদের জন্য বিনিয়োগ ও গৃহায়ণ অর্থায়ন সুবিধা দেওয়া, ফিনটেক পদ্ধতির আওতায় আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার অপারেটরকে বাংলাদেশের ব্যাংকের সঙ্গে ড্রয়িং ব্যবস্থা স্থাপনে উদ্বুদ্ধ করা ও রেমিট্যান্স পাঠাতে ব্যাংক বা এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর চার্জ ফি মওকুফ করা হয়েছে।
এছাড়া সেবার বিনিময়ে দেশে প্রবাসী আয় আনার ক্ষেত্রে ফরম ‘সি’ পূরণ করার শর্ত শিথিল করার ব্যবস্থা করা হয়। ঘোষণা ছাড়াই সেবাখাতের উদ্যোক্তা ও রপ্তানিকারকদের ২০ হাজার মার্কিন ডলার দেশীয় মুদ্রা দেশে আনার সুযোগ দেওয়া হয়।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এসব উদ্যোগের ফলে প্রবাসী আয় যেমন বাড়ছে। যে হারে প্রবাসে যাওয়া মানুষের সংখ্য বাড়ছে তাতে প্রবাসী আয় বৃদ্ধির ধারাকে আরও টেকসই করবে।
দেশে ডলার-সংকট শুরু হওয়ার পর থেকে প্রবাসী আয়ে গতি কম। সামনে অবশ্য বৈশাখ ও দুই ঈদের মতো উৎসব আছে। উৎসবে প্রবাসী আয় বেশি আসে। চলতি মাসেও ভালো পরিমাণ আয় আসার আশা করছেন ব্যাংকাররা।
স্বাভাবিকভাবে ঈদের সময় নগদ টাকার চাহিদা মেটাতে প্রবাসীদের দেশে অর্থ পাঠানোর তাগিদ থাকে। আর এ কারণে সারা বছরের মধ্যে ঈদের সময় রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স আসে। করোনাকালেও প্রবাসীরা জমানো অর্থ পরিবার-পরিজনের কাছে পাঠিয়েছে। ফলে ঐ সময়ও রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে এসেছিল।
সাউথইস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুদ্দিন মো. সাদেক হোসাইন আমাদের সময় ডটকমকে বলেন, ইদুল ফিতরকে সামনে রেখে পবিত্র রমজান মাসে প্রবাসীরা বাংলাদেশে থাকা তাদের পরিবার-পরিজনের সিয়াম সাধনা এবং উৎসবমূখর পরিবেশে ইদ পালনের জন্য অন্যান্য সময়ের তুলনায় সাধারণত বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়ে থাকেন। প্রতিবারের ন্যায় এ বছরও সেই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আমরা আশা করছি। আর এই রেমিট্যান্স দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।