বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য পেতেও পদে পদে ভোগান্তি। নানা অব্যবস্থাপনায় সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অনেকে। অথচ দারিদ্র্য বিমোচনে বড় ভূমিকা রাখতে পারে এমন উদ্যোগ। 'পণ্য বিতরণে কোনো শৃঙ্খলা নেই এবং নিতেও ভোগান্তি পোহাতে হয়। বিভিন্ন ’অভিযোগের কথা জানিয়েছেন টিসিবির পণ্য কিনতে আসা ক্রেতারা। মধ্যরাত থেকে অপেক্ষায় থাকার পরও পণ্য না পাওয়া, এক ওয়ার্ডের বাসিন্দা অন্য ওয়ার্ডে তালিকাভুক্ত হওয়া, ডিলারদের স্বজনপ্রীতি ও অসদাচরণসহ নানান রকমের অভিযোগের কথা উঠে আসে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রভাবে হিমশিম খাওয়া মানুষের কাছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্যের ওপর আগ্রহ বাড়ছেই। আগে স্বল্প আয়ের মানুষ টিসিবির পণ্য কিনলেও এখন সরকারি, বেসরকারি চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী সবাই এখান থেকে পণ্য কিনছেন। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে টিসিবির ট্রাকে পণ্য কিনতে ভোগান্তি জেনেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে বাধ্য হচ্ছেন এসব মানুষ।
বাজারে চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, চিনি থেকে শুরু করে প্রায় সব নিত্যপণ্যের দাম ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সীমিত আয়ের মধ্যবিত্ত মানুষ। এদিকে প্রতিদিনই পণ্য না পেয়ে অনেক ক্রেতাকে ফিরে যেতে হচ্ছে। তাই টিসিবির কার্যক্রমে আঙুল তুলছে সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, অনেক স্থানে ট্রাকে পণ্য বিক্রি না করে বাইরে খোলা বাজারে বিক্রির ঘটনা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। আবার অনেকের বিরুদ্ধে বরাদ্দকৃত পণ্যের চেয়ে কম পণ্য বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। জেলা প্রশাসন বা স্থানীয় সরকারের কোনো পক্ষ থেকে ট্রাক সেলের কার্যক্রমটি মনিটরিং করা হচ্ছে না। ফলে ডিলাররা তাদের ইচ্ছামতো পণ্য বিক্রি করছে। ট্রাক সেল প্রতিদিন সকাল ১০টার মধ্যে শুরু করার কথা থাকলেও অনেক জায়গায় দুপুর গড়িয়ে যায়। ফলে নগরীর সবক’টি ট্রাক সেল পয়েন্টে ক্রেতাদের দীর্ঘ লাইনের সৃষ্টি হচ্ছে। এসব পণ্য ক্রয় করতে ভোক্তাদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। অথচ পণ্যগুলো বিক্রির আগে প্যাকেট করে রাখলে জনগণের এ ভোগান্তি হতো না। আবার পণ্য শেষ হওয়ার কথা বলে বিক্রি কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ক্রেতারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কাক্সিক্ষত পণ্য পাঁচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। বাজারমূল্যের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম দামে তেল, চিনি, পেঁয়াজ ও মসুরের ডাল কেনার জন্য বিভিন্ন স্পটে স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের ঘনিষ্ঠ পরিচয়ে প্রতিদিন পণ্য কিনতে লাইনে ‘ভাড়াটে’ লোক দাঁড় করিয়ে পণ্য সংগ্রহ করে নিচ্ছে একটি চক্র। পরে এসব পণ্য বেশি দামে (বাজারমূল্যের চেয়ে কিছুটা কম দামে) পাড়া-মহল্লার মুদি দোকানে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে বলে জানা যায়। টিসিবির পণ্য নিতে আসা অধিকাংশ ক্রেতা বয়োবৃদ্ধ ও মহিলা। তাই ডিলাররা কোনো জবাবদিহি ছাড়াই নিজেদের ইচ্ছে অনুযায়ী পণ্য বিক্রি শুরু ও বন্ধ করেন। বেশিরভাগ ডিলারই টাঙানো ব্যানারে লিখেন না তাদের ফোন নম্বর। কখন পণ্য বিক্রি শুরু হবে জানতে ফোন করারও উপায় থাকে না ক্রেতার। তাদের স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে শিকার হন ডিলারদের অসদাচরণের। সাধারণ মানুষের ভোগান্তিকে পুঁজি করে কোনো কোনো ডিলার দাম বেশি রাখছেন। তবে পণ্য বিতরণে ডিলারদের আরও দায়িত্বশীল হবার আহ্বান করছি।