যশোরের কেশবপুর পৌর এলাকার হাবাসপোল লক্ষীখোলার মাঠে কৃষক আবদুল গনির ২৬ শতক জমির ব্রি- ২৮ জাতের ধান সম্পূর্ণ ছত্রাকবাহী ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে শীষে চিটা ধরে নষ্ট হয়ে গেছে। এ কৃষকের কান্না যেন কিছুতেই থামছে না। শুধু ওই কৃষকই নয় এ উপজেলার অধিকাংশ ব্রি- ২৮ ও ভারতীয় রড মিনিকেট জাতের ধানে এ রোগ দেখা দিয়েছে। এ ছত্রাকজনিত ব্লাস্ট রোগ ধানে ছড়িয়ে পড়ায় প্রায় ১ হাজার হেক্টরের ধান নষ্ট হওয়ার পথে। এদিকে, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পাকা ধান কেটে নিতে। যে ধানগুলো এখনও সবুজ সে জমিতে ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হবে। তা না হলে আশপাশের এলাকায় এরোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। কিন্তু কৃষি অফিসের এ পরামর্শ কৃষকরা শুনছে না বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। চলতি মৌসুমে কেশবপুরে পৌর এলাকাসহ ১১টি ইউনিয়নে ১৪ হাজার ৪‘শ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়। এরমধ্যে হাইব্রিড ৫ হাজার ২৫০ হেক্টর, ব্রি- ২৮ জাতের ধান ১ হাজার ৪৫০ হেক্টর ও অবশিষ্ট জমিতে রড মিনিকেট, উফশীসহ অন্যান্য জাতের ধান আবাদ করা হয়। ধান রোপণ মৌসুমের শুরুতে কৃষি বিভাগ ব্রি-২৮ জাতের আবাদ করতে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করা হয়। কৃষকরা তা শোনেনি। এরপরও কৃষি বিভাগের পরামর্শে নিয়ম মেনে ছত্রাকনাশক স্প্রে করেনি কৃষকরা। এছাড়া, বৈরী আবহাওয়া ও অতিমাত্রায় ইউরিয়া সার প্রয়োগের ফলে ধানে ব্লাস্ট রোগ ছড়িয়ে পড়ে। সরেজমিনে কয়েকটি ইউনিয়নের মাঠে গিয়ে দেখা য়ায়, কৃষকরা তাদের আগাম জাতের ব্রি- ২৮ ধান কাটতে শুরু করেছে। ধানের গাছ দূর থেকে দেখলে মনে হচ্ছে পেকে সোনালী রঙ ধারণ করেছে। বাস্তবে ধানের গাছ শুকিয়ে চিটা হয়ে গেছে। আবার কিছু কিছু জমির ধানের শীষ ভেঙে গেছে। স্থানীয় কৃষকদের দাবি, ব্লাস্ট আক্রান্ত ব্রি- ২৮ জাতের ধানে ৯০ ভাগ চিটা হয়ে গেছে। সরকারি বিএডিসি অফিসের অনুমোদিত বীজ ডিলাররা এজাতের ধান রোপণে তাদেরকে উৎসাহিত করেছিল। কৃষক আবদুল গনি জানায়, চলতি মৌসুমে তিনি ২৬ শতক জমিতে ব্রি-ধান- ২৮ জাতের ধান রোপণ করেছিলেন। খেতের সমস্ত ধান চিটা হয়ে গেছে। ধান রোপণ থেকে শুরু করে কাটা পর্যন্ত তার প্রায় ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। একটি ধানও তার ঘরে উঠবে না। গরুর গড় হিসেবে ব্যবহার ছাড়া আর কোন উপায় নেই। মধ্রকুল গ্রামের কৃষক তাইজুল গাজী বলেন, আমি হতদরিদ্র দীনমজুর। এলাকার অনেকেই রড মিনিকেট ধান লাগিয়েছে। তাদের দেখে আমিও এ ধান রোপণ করি। শীষ বের হওয়া পর্যন্ত ধানে কোন রোগ ছিল না। হঠাৎ খেতে ব্লাস্ট দেখা দেয়। উপসহকারি কৃষি অফিসারকে বললেও তিনি মাঠে আসেনি। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার জানান, কৃষকদের ব্রি- ২৮ জাতের ধান না লাগানোর পরামর্শ দেয়া হয়। কিন্তু কৃষকরা শোনে না। এর বিপরীতে উফশী ৮১, ৮৪, ৮৬, ৮৮ ও ১০০ জাতের ধান ব্রি উদ্ভাবন করেছে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, দিনে গরম রাতে শীত এ রোগের প্রবনতা বৃদ্ধি পায়। তবে ব্লাস্টের পরিমান খুবই কম। এ রোগে আক্রান্ত জমির মালিকদের ছত্রাকনাশক প্রয়োগের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।