বছর দুই ধরে বাংলাদেশে পেঁয়াজের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে যাওয়ায় এখন আর ভারত কিংবা অন্য দেশ থেকে পেঁয়াজ নতুন করে আমদানি করতে হচ্ছে না। প্রতি বছর দ্বিগুণ লাভে পেঁয়াজ বিক্রি করায় এবার সকল প্রকার চাষ বন্ধ করে পেঁয়াজ চাষে ঝুঁকেছিলেন চাষিরা। এতে প্রমাণিত হয়েছে, প্রয়োজনীয় সহায়তা-সমর্থন থাকলে আমাদের কৃষকেরাও পারেন। পেঁয়াজের আমদানি নির্ভরতা বেশি থাকায় একসময় বাজারে অস্থিতিশীলতা থাকতো। কিন্তু এখন আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লেও দেশের বাজারে তার প্রভাব একেবারেই নেই। অনেকে বলছেন গত বছরগুলোতে আগাম মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি করে তারা লাভবান হলেও এবারের চিত্র উল্টো। এ বছর পেঁয়াজ আবাদে তাদের বাড়তি খরচ হয়েছে। এই মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রির টাকা দিয়ে চারা পেঁয়াজের আবাদ করবেন তারা। তবে বাজারে আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় তাদের বিনিয়োগের অর্থ তোলা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে বেশি দামে বীজ ও অন্যান্য উপাদান কিনে চারা পেঁয়াজ আবাদ করতে হচ্ছে। তাই পেঁয়াজের ভরা মৌসুমে কৃষকদের স্বার্থে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের দাবি তাদের। গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের উৎপাদন মৌসুমে যে ঘাটতি দেখা দিত, তা এখন হচ্ছে না। কৃষকরা এখন অনেক বেশি উৎপাদন করছেন। আশা করা যায় ভবিষ্যতে কখনই পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল হবে না। এজন্য তাদের বিভিন্ন প্রণোদনাও দেয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে বিভিন্ন প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষকদের সংরক্ষণের উপায়গুলো নিয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৬ লাখ টনের বেশি। যেভাবে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে, তাতে এবারও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে। তাই এই সময়ে কৃষক যাতে ন্যায্যমূল্য পান, সে জন্য সরকার আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে আমদানি বন্ধের পাশাপাশি বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাগুলোও কাটাতে হবে। ২০১৯ সালে উৎপাদন কম হয়েছে-এই অজুহাত দেখিয়ে ভারত আকস্মিকভাবে রপ্তানি বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশে পেঁয়াজের বাজারে করুণ অস্থিরতা দেখা যায়। বাজারে প্রতি কেজির দাম ২০০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতো। তাই এবার ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি না করার সিদ্ধান্তকে যথার্থ বলেই বিবেচনা করতে হবে। স্থানীয় উৎপাদন পর্যাপ্ত হওয়ায় দেশে পেঁয়াজের বাজারে একধরনের স্থিতিশীলতা লক্ষ করা যাচ্ছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। গত বছরের এ সময়ে দেশীয় পেঁয়াজের দাম ছিল ২৫ থেকে ৩৫ টাকা। গত বছরের তুলনায় দাম কিছুটা বাড়লেও সার্বিক বিবেচনায় এটাকে যৌক্তিকই বলতে হবে। দাম কিছুটা না বাড়লে কৃষকের উৎপাদন খরচ উঠে আসবে না। আমরা যদি দেশে উৎপাদিত পণ্য দিয়ে চাহিদা পূরণ করতে পারি, কৃষক ও ভোক্তা উভয়ই লাভবান হবেন। পেঁয়াজ চাষের এই সাফল্য ধরে রাখতে হলে সরকারের সহায়তা-সমর্থন বাড়ানো প্রয়োজন। একই সঙ্গে কৃষকদের ন্যায্য দাম পাওয়া নিশ্চিত করতে হবে। শিল্পায়ন ও নগরায়ণের কারণে আমাদের কৃষিজমি ক্রমেই কমে যাচ্ছে। ফলে কোনো বিশেষ কৃষিপণ্যের উৎপাদন বাড়ালে অন্যান্য পণ্যের জন্য নির্ধারিত জমি কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ অবস্থায় এক ইঞ্চি কৃষিজমিও যাতে বেহাত না হয়, সে জন্য সরকারকে সজাগ থাকতে হবে।