ফরিদপুরের চরভদ্রাসন সরকারি কলেজ থেকে এ বছর এইচএসসি পাশ করা এক অসহায় কলেজছাত্রী (১৮) প্রেম ভালোবাসা ও বিয়ের প্রলোভনে পড়ে ধর্ষনের শিকার হওয়ার পর অন্তঃস্বত্ত্বা, ভ্রুননষ্ট ও নগ্নছবি গনমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল (ছবি সংরক্ষিত) হওয়ার মত ঘটনায় ওই ছাত্রী ন্যায় বিচার প্রাপ্তীর দাবীতে প্রথমে ইউএনও কার্যালয়ে অভিযোগ দায়ের করে সাতদিন ঘুরাঘুরির পর অবশেষে গত মঙ্গলবার রাতে চরভদ্রাসন থানায় একটি মামলা হয়েছে। চরভদ্রাসন মামলা নং-০৫, তাং-১১/৪/২০২৩খ্রি.।
জানা যায়, উপজেলা পরিষদের দক্ষিন পাশে পূর্ব বিএস ডাঙ্গী গ্রামে কলেজ ছাত্রীর অসহায় পরিবারের বসবাস। ওই ছাত্রীর প্রভাবশালী প্রতিবেশী গৌরাঙ্গী বিশ্বাসের ছেলে হৃদয় বিশ্বাস (২২) গত এক বছর ধরে প্রেম ভালোবাসার সম্পর্ক করে কলেজ ছাত্রীর সাথে শারীরীক সম্পর্ক গড়ে তোলে। মামলায় উল্লেখ, ২০২১ সালের ৩ অক্টোর বিকেল বেলায় আরেক প্রতিবেশী রিয়াদদের নির্জন বাড়ীতে নিয়ে ওই কলেজ ছাত্রীকে প্রথমবার ধর্ষন করার পর ছাত্রীর নগ্নছবি মোবাইলে ধারন করে রাখে হৃদয় বিশ্বাস। পরবর্তিতে ওই নগ্নছবি ভাইরাল করার হুমকী দিয়ে আবার কখনো কলেজ ছাত্রীকে বিয়ে করার প্রলোভন দিয়ে তাকে দিনের পর দিন বিভন্ন স্থানে নিয়ে ধর্ষন করতে থাকে। একপর্যায়ে মেয়েটি অন্তঃস্বত্ত্বা হয়ে পড়লে ধর্ষকের পরিবার ঘটনাটি জানতে পারেন। ধর্ষক পরিবার ওই ছাত্রীকে পুত্রবধু করে ঘরে তুলে নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে দুই দফায় মোট ৫টি ট্যাবলেট বা বড়ি খাওয়াইয়ে কলেজছাত্রীকে গর্ভপাত করেন। এরপর থেকে ধর্ষক বা ধর্ষক পরিবার কলেজছাত্রী সাথে আর কোনো যোগাযোগ রাখে নাই বলে অভিযোগ।
বুধবার সকালে নির্যাতিত কলেজছাত্রী যুগান্তরকে জানায়, “তার পিতা উপজেলায় নাইটগার্ড পদে একজন সরকারি চাকুরী করতেন। গত চার বছর ধরে ব্রেইন ষ্ট্রোক রোগাক্রান্ত হয়ে অসুস্থ পিতা শয়্যাশায়ী রয়েছেন। তাই অভিভাবকহীন একজন অসহায় মেয়ে হিসেবে কোনো উপায় না পেয়ে আমি গত ২৫ মার্চ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করি। ইউএনও, এ ঘটনাটি নিয়ে তার কার্যালয়ে ধর্ষকের পিতাকে উপস্থিত রেখে দুই দফায় শুনানী কার্যক্রম করেছেন। এসব শুনানী কালে উপস্থিত সমাজপতি ও গন্যমান্যরা মিলে কলেজ ছাত্রীর মন্দস্বভাব সহ নির্যাতিত যুবতীকেই বেশী দোষারূপ করাতে কলেজছাত্রী আরও ভেঙে পড়ে বলে জানায়। এরপর প্রায় সাত দিন ইউএনও কার্যালয়ে অভিযোগটি ঝুলিয়ে রেখে সবাই মিলে আপোষ-মিমাংষার চেষ্টা তদবির করে ব্যার্থ হওয়ার পর অবশেষে গত ১০ এপ্রিল অভিযোগটি চরভদ্রাসন থানায় হস্তান্তর করেন ইউএনও”।
এ ব্যাপারে সাবেক (বদলি হয়েছেন) উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানজিলা কবির ত্রপা বলেন, “আসলে মেয়েটির লাইভ ফিরিয়ে আনার জন্য এবং তাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য বা আপোষ-মিমাংষার স্বার্থে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু ধর্ষকের পরিবার বার বার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে সবাইকে হয়রানী করেছেন”।
আর চরভদ্রাসন থানার অফিসার ইনচার্জ সেলিম রেজা বেলন, “ইউএনও অফিসে সাতদিন কালক্ষেপন করার ফাঁকে আসামীপক্ষ কলেজছাত্রীর ভাইরাল করা নগ্নছবিগুলোর ফেসবুক আইডি ডিএক্টিভ করে ফেলেছে। এতে মামলায় একটু জটিলতা সৃষ্টি করেছে”। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চরভদ্রাসন থানার এসআই মোর্শেদুল আলম জানান, “ ইতোমধ্যে আমরা আসামীদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান পরিচালনা করেছি, কিন্তু আসামিরা গাঁ ঢাকা দিলেও তাদের আটকের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি”।