আসন্ন বরিশাল সিটি কর্পোরেশন (বিসিসি) নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার পর থেকেই নৌকার মাঝি বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাতের পক্ষে নগরীতে প্রতিদিনই আনন্দ মিছিল ও শোডাউন বের করা হচ্ছে।
বর্তমান মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বিরোধীদের সাথে শোডাউনে যোগ দিচ্ছেন বরিশাল-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রীর অনুসারীরা। অপরদিকে দীর্ঘদিন ধরে বর্তমান মেয়রপন্থিদের কারণে কোণঠাসা অবস্থায় থাকা ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে এসে মাহিন্দ্রা (ত্রি-হুইলার) স্ট্যান্ড, মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড, বরিশাল থেকে ভোলাগামী স্পীড বোট ঘাট, নথুল্লাবাদের কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনাল ও রূপাতলী বাসটার্মিনাল নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন। নগরীর বিভিন্নস্থানে গত দুইদিন ধরে সাটানো হচ্ছে ব্যানার, ফেস্টুন ও বীলবোর্ড।
এদিকে গত ১৫ এপ্রিল দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার পর বর্তমান মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারীরা কিছুটা চুপচাপ থাকলেও এখন তারাও নগরীতে পাল্টা মোটরসাইকেল মহড়া বের করেছেন। এ সময় তারা সাদিক আব্দুল্লাহর পক্ষে বিভিন্ন শ্লোগান দিয়েছেন। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পাল্টাপাল্টি মহড়া ও বর্তমান মেয়রের অনুসারীদের সা¤্রাজ্য দখলের ঘটনায় পুরো নগরীজুড়ে উত্তাপ ছড়িয়ে পরেছে। এনিয়ে আওয়ামী লীগের ওই দুটি গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে যেকোন সময় বড়ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা করছেন সচেতন নগরবাসী। যার প্রভাব পরতে পারে আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের নতুন প্রার্থীর ওপর।
সূত্রমতে, ইতোমধ্যে ব্যানার লাগানোকে কেন্দ্র করে নগরীর দক্ষিণ আলেকান্দার বৈদ্যপাড়া এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের দুই গ্রুপের মধ্যে মারামরির ঘটনাও ঘটেছে। বরিশাল সরকারি বিএম কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি মঈন তুষার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন ঘোষণার মধ্যদিয়ে নগরবাসীকে অভিশাপমুক্ত করেছেন। নগরবাসী আজ আনন্দে আত্মহারা হয়ে উল্লাস করছেন। ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান বিপ্লব বলেন, নগরবাসী যে জিম্মিদশার মধ্যেছিলো প্রধানমন্ত্রী তা বুঝতে পেরে পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিত্ব আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতকে মনোনয়ন দিয়েছেন। আগামী ১২ জুনের নির্বাচনে নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন উপহার দেওয়া হবে।
চুলচেরা বিশ্লেষণ ॥ মাত্র এক মেয়াদেই মেয়র পদের দৌঁড়ে ছিটকে পরার পর বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে নিয়ে নগরীতে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। স্থানীয় আওয়ামী লীগ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করেন মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ। ফলে আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া প্রার্থীর পক্ষে সাদিক আব্দুল্লাহ কী ভূমিকা পালন করবেন, তা নিয়েও চলছে আলোচনা।
বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আফজালুল করিম বলেন, আমরা সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর পক্ষে মনোনয়ন চেয়েছিলাম। কিন্তু দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী তার ফুফাতো ভাই আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতকে নৌকার মনোনয়ন দিয়েছেন। এখন আমরা নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবো। আরেক সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আনিস উদ্দিন শহীদ বলেন, নেত্রী যাকে মনোনয়ন দিয়েছেন আমরা তাকে বিজয়ী করতে কাজ করবো।
নগরীর একাধিক আওয়মী লীগের বর্ষীয়ান নেতা বলেছেন, সাদিক আব্দুল্লাহর রাজনৈতিক অপরিপক্কতার কারণে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ সাদিক আব্দুল্লাহ ও তার বাবা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি’র আজ্ঞাবহ হতে গিয়ে কেন্দ্রের বার্তা ধারণ করেনি। যে কারণে প্রার্থীতা নির্বাচন আর কেন্দ্রের মনোনয়নে ভিন্নতা এসেছে।
তবে মনোনয়ন বোর্ডের বর্ষীয়ান দুই নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নগরীর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ রাখতে গিয়ে খোঁদ আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভাজন এবং প্রশাসনের সাথে প্রকাশ্য বিরোধই সাদিক আব্দুল্লাহর মনোনয়ন দৌড়ে বাদ পড়ার কারণ। তারা আরও বলেন, যেহেতু তার (সাদিক) দলের পদ-পদবী নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি, তাই সাদিক আব্দুল্লাহর অবস্থান পুনরুদ্ধারের এখনও সুযোগ রয়েছে। তবে ঠিক কি কারণ মনোনয়ন হারিয়েছেন তা সুনির্দিষ্ট করে কেউ না বললেও যেসব কারণে সাদিক আব্দুল্লাহ সমালোচিত ছিলেন তা এখন আলোচনায় উঠে আসতে শুরু করেছে।
যেভাবে আলোচনায় সাদিক আব্দুল্লাহ ॥ ছাত্র রাজনীতি বা অন্য কোনো অঙ্গসংগঠনের রাজনীতির মাধ্যমে রাজনৈতিক অঙ্গনে যাত্রা শুরু হয়নি সাদিক আব্দুল্লাহর। তবে মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতি শুরুর লক্ষ্যে ২০১৫ সালের ২৯ জানুয়ারি ওয়ার্ড পর্যায়ের প্রায় অর্ধশত নেতাকর্মীকে নিয়ে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা ভ্রমণে যান সাদিক আব্দুল্লাহ। পরেরদিন ৩০ জানুয়ারি রাতে কুয়াকাটার হোটেল সি ভিউয়ের ১ নম্বর কক্ষে গুলিবিদ্ধ হন তার (সাদিক) সফরসঙ্গী বরিশাল জেলা মৎস্য আড়তদার সমিতির যুগ্ম-সম্পাদক নিরব হোসেন টুটুল (বর্তমানে টুটুল মহানগর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক)। গুলিবিদ্ধ টুটুলের একটি পা কেটে ফেলতে হয়। তবে কে কীভাবে গুলি করেছে টুটুলকে তা আজ পর্যন্ত জানা যায়নি। নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, একই কক্ষে অবস্থান করছিলেন সাদিক আব্দুল্লাহ। ওই ঘটনার পরপরই আলোচনায় আসেন সাদিক।
হিরণপন্থিদের উৎখাত ॥ ২০১৪ সালে তৎকালীন সংসদ সদস্য শওকত হোসেন হিরণের মুত্যুর পর দলে তৎপরতা বাড়ান সাদিক আব্দুল্লাহ। শওকত হোসেন হিরণের স্ত্রী জেবুন্নেছা আফরোজ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে মহানগর আওয়ামী লীগের পুনর্গঠিত কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হন সাদিক। ২০১৮ সালে মেয়র নির্বাচিত হয়ে দলের অভ্যন্তরে হিরণপন্থিদের বিরুদ্ধে এক ধরণের অভিযান চালানো শুরু করেন। হামলা, মারধর ও মামলা দিয়ে হিরণপন্থিদের রাজনৈতিক অবস্থান থেকে সরিয়ে রাখেন। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে মহানগরের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর তিনি আরও বেসামাল হয়ে পরেন এবং নগরীর কোনো কিছুই তার মতামত ছাড়া হতে দিতেন না।
বাসায়ই অফিস ॥ সরকারি বিধান ভেঙে মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ তার কালী বাড়ির বাসায় সিটি কর্পোরেশনের অফিসিয়াল কাজ করতেন। কাজের জন্য নগর ভবনের কর্মকর্তাদের ডেকে নিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত বসিয়ে রাখতেন। তার ডাকে সাড়া না দিলে কর্মকর্তাদের লাঞ্ছিত করা হতো। কর্পোরেশনের কর্মকর্তাদের তিনি গণমাধ্যমে কথা বলায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। একইসাথে তিনি নিজের পছন্দমতো গুটিকয়েক গণমাধ্যম ছাড়া অন্যকোনো গণমাধ্যমে বক্তব্য পর্যন্ত দিতেন না। তবে নিয়মিত তিনি ফেসবুক লাইভ করতেন।
কাউন্সিলরদের সাথে বিরোধ ॥ সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামালের সময়ে সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন বকেয়া থাকলেও সাদিক আব্দুল্লাহ এসে তা পরিশোধ করে নগর ভবনকে গতিশীল করেন। কিন্তু নগর ভবনে সাদিক আব্দুল্লাহর পাশাপাশি কর্তৃত্ব চালাতেন তার অনুসারী ছয়জন দলীয় নেতা। তারা হলেন-জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত, আতিকুল্লাহ মুনীম, মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রইজ আহম্মেদ মান্না, ১৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাজিব হোসেন খান, ২১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ সাইদ আহম্মেদ মান্না এবং মহানগর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক নিরব হোসেন টুটুল। সিটি কর্পোরেশনের একাধিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওই ছয়জনের বাহিরে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারও কথা বলার সুযোগ ছিলোনা। সাদিক আব্দুল্লাহ বিভিন্ন অভিযোগে আত্মপক্ষ সমর্থন করার সুযোগ না দিয়ে সিটি কর্পোরেশনের কমপক্ষে ৪০ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করেছেন। এসবের কারণে ২০২১ সালে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত ১০ জন কাউন্সিলর মেয়রের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য অবস্থান নেন।
নোটিশ ছাড়া উচ্ছেদ ॥ ২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর আপন মামা মফিজুল ইসলাম কামালের বিউটি রোডের নির্মাণাধীন ভবন নোটিশ ছাড়া ভেঙে ফেলা হয়। ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে কলেজ রোড এলাকার একটি দোতলা ভবন নোটিশ না দিয়ে ভাঙতে যায় সিটি কর্পোরেশন। সর্বশেষ ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে নোটিশ ছাড়াই বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান খানের বাড়ি ভাঙতে বুলডোজার পাঠিয়ে তোপের মুখে পরে পিছু হটে সিটি কর্পোরেশন। এ ছাড়া সাগরদীতে মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জসীম উদ্দিনের নির্মাণাধীন ভবন নোটিশ ছাড়া ভেঙে দেওয়া হয়।
এছাড়াও ১৯৪২ সালে জেলা পরিষদের ৩০ শতক জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত বরিশাল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব কার্যালয় কোন নোটিশ ছাড়াই ২০২৩ সালের ১০ জানুয়ারি মাঝরাতে বুলডোজার দিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় সিটি কর্পোরেশন।
জেলা প্রশাসনের সাথে দ্বন্ধ ॥ ২০২১ সালের ১৮ আগস্ট রাতে সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে ইউএনওর বাসভবনের সামনে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের ব্যানার অপসারণে গেলে ইউএনও মুনিবুর রহমান তা দিনে করার জন্য বলেন। এনিয়ে বাদানুবাদে ইউএনওর বাসভবনে হামলা চালায় মেয়রের অনুসারী ছাত্র ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। একপর্যায়ে হামলা ঠেকাতে ইউএনওর নির্দেশে গুলিবর্ষণ করেন আনসার সদস্যরা। এনিয়ে প্রশাসনের সাথে প্রকাশ্যে বিরোধে জড়িয়ে পরেন মেয়র। দায়ের করা হয় পাল্টাপাল্টি মামলা। এ ছাড়া ২০২৩ সালে জেলা পরিষদ নির্বাচনের দিন জিলা স্কুল কেন্দ্রে ভোট দিতে গিয়ে ইউএনও মুনিরুজ্জামানকে লাঞ্ছিত করেন মেয়র।
কারণে অকারণে ঘেরাও, ধর্মঘট ॥ ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি পুলিশের হাতে আটক ১ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহাগ হাওলাদারকে ছাড়িয়ে নিতে এবং সোহাগের দায়ের করা অভিযোগ মামলা হিসেবে গ্রহণের দাবিতে নগরীর কাউনিয়া থানা ঘেরাও করেন মেয়রের অনুসারী ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ওইদিন মামলা নিতে দেরি করায় রূপাতলী ও নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে বাস চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া বন্ধ করে দেওয়া হয় ঢাকা-বরিশালসহ ১২টি রুটের লঞ্চ চলাচল। চাপের মুখে পুলিশ মামলা নিলে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। ওই বছরের মে মাসে এয়ারপোর্ট থানায় দায়ের হওয়া চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেপ্তারকৃত রিপন বিশ্বাসকে ছাড়িয়ে আনতে মেয়রের অনুসারী মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ বাবুর নেতৃৃত্বে এয়ারপোর্ট থানা ঘেরাও করে ছাত্র ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা।
বাসস্ট্যান্ড দখলে নিতে হামলা ॥ নগরীর রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড মেয়রের অনুসারী শ্রমিক নেতা কাওছার হোসেন শিপন এবং নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রইজ আহম্মেদ মান্না এবং লঞ্চ টার্মিনাল পরিমল চন্দ্র দাসকে দিয়ে দখলে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। রূপাতলীতে শ্রমিক নেতা ও সাবেক কাউন্সিলর সুলতান মাহমুদকে তার কার্যালয়ে মারধর করেন রইজ আহম্মেদ মান্না, সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত, আতিকুল্লাহ মুনীম। এছাড়াও মেয়রের অনুসারিদের বিরুদ্ধে বাসায় ঢুকে কুপিয়ে জখম করা হয় আরিফুর রহমান সুমন মোল্লাকে। মেয়রের নির্দেশে এই হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ করেছেন, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর অনুসারী সুলতান মাহমুদ ও সুমন মোল্লা।
এছাড়াও সাদিক আব্দুল্লাহ দায়িত্ব গ্রহণের পর বালু পরিবহন, বাড়ির নকশার অনুমোদন বন্ধ করে দেন। কয়েকগুন বাড়িয়ে দেন হোল্ডিং ট্যাক্স। পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের দিয়ে সড়কে ময়লা ফেলে আন্দোলন ও ঝাড়-মিছিল করানোর অভিযোগ রয়েছে। এমনকি ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় সাবেক যুবলীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করানো হয়। এমনকি স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করারও অভিযোগ রয়েছে মেয়রের বিরুদ্ধে।
সূত্রমতে, সাদিক আব্দুল্লাহর বিরোধিতা করে মনোনয়ন প্রত্যাশী অন্যান্য প্রার্থীরা দলের হাইকমান্ডের কাছেও এসব বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। যাতে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর জনবিচ্ছিন্নতা, আওয়ামী লীগে বিভাজন সৃষ্টি, উন্নয়ন করতে না পারা, স্থানীয় প্রশাসনের সাথে দূরত্ব এবং নগরবাসীর ওপর অস্বাভাবিক কর আরোপের বিষয়টি তুলে ধরা হয়। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)’র জেলা সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম বলেন, বলপ্রয়োগ করে নগরী নিয়ন্ত্রণ, জনবিচ্ছিন্ন আচরণ এবং প্রশাসনের সাথে প্রকাশ্য বিরোধে জড়ানোই কাল হয়েছে সাদিক আব্দুল্লাহর।
উল্লেখ্য, ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১২ জুন বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে সাতজন প্রার্থী দলীয় ফরম জমা দিয়েছিলেন। এরমধ্যে গত ১৫ এপ্রিল মনোনয়ন বোর্ডের সভায় বর্তমান মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহকে সরিয়ে তার আপন চাচা পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিত্ব আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাতকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে।