প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর বৃহস্পতিবার থেকে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচলের ঘোষণা দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এরমধ্যেই নিয়মতান্ত্রিকভাবে মোটরসাইকেল চলাচলে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বুধবার বেলা ১১টার দিকে পদ্মা সেতুর মুন্সিগঞ্জের মাওয়াপ্রান্তের টোলপ্লাজা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান সেতু সচিব মো. মনজুর হোসেন। তিনি বলেন, মোটরসাইকেলের জন্য একটি ডেডিকেটেড লেন তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। প্রতি ১৫ সেকেন্ডে একটি ও প্রতি মিনিটে চারটি মোটরসাইকেল টোল দিতে পারবে। তবে ডেডিকেটেড লেন ছাড়াও চাপ বেশি হলে অন্য বুথে যানবাহন ফাঁকা থাকলে যাতায়াত করতে পারবে। সেতু সচিব আরও বলেন, পদ্মা সেতুর ওপর সব যানবাহনের গতি ৬০ কিলোমিটার। তাই মোটরসাইকেলের গতিও ৬০ কিলোমিটার রাখা হয়েছে। মোটরসাইকেল চলাচলের জন্য সার্ভিস লেন থাকবে। যেসব শর্ত দেওয়া হয়েছে চালকরা যেন যেসব মেনে চলেন। তাহলে কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটবে না। ঈদযাত্রা নিরাপদ হবে। যারা বাড়ি ফিরবে তারা স্বাচ্ছন্দ্যে যেতে পারবেন। নিয়মমাফিকভাবে চলতে পারলে ঈদপরবর্তী সময় মোটরসাইকেল চালু রাখা হবে জানিয়ে সেতু সচিব বলেন, যদি কোনো যানবাহন অতিরিক্ত গতিতে যায় তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থাকবে। তারা তাদের মতো করে ব্যবস্থা নেবে। সবাই যদি নিয়ম মেনে চলে তবে সাময়িক মোটরসাইকেলের এ চলাচলের বিষয়ে সরকারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হবে। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম, নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আবদুল কাদের, নির্বাহী প্রকৌশলী রজ্জব আলী প্রমুখ।
শিমুলিয়া ঘাটে মোটরসাইকেলের ঢল: ঈদযাত্রায় দেশের দক্ষিণবঙ্গগামী যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। কেউ নিজস্ব গাড়ি, বাস কিংবা মোটরসাইকেলে ছুটছেন গ্রামের বাড়ি। তবে পদ্মা সেতু দিয়ে ২০ এপ্রিলের আগে চলাচলের অনুমতি না থাকায় ফেরিঘাটে যেতে হচ্ছে মোটরসাইকেলকে। ফলে ছুটির প্রথম দিনেই মোটরসাইকেলের উপচেপড়া ঢল নেমেছে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়াঘাটে। বুধবার ভোর থেকেই শিমুলিয়া ৪ নম্বর ফেরিঘাটে জড়ো হতে থাকেন মোটরসাইকেল আরোহীরা। ভোর ৬টায় থেকে শিমুলিয়া থেকে মাঝিকান্দির উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া প্রতিটি ফেরিতেই মোটরসাইকেল ও যাত্রীদের উপস্থিতি পরিপূর্ণ দেখা যায়। সকাল ৯টায় সরেজমিনে দেখা যায়, ৪ নম্বর ঘাটের পন্টুন থেকে অ্যাপ্রোচ সড়ক পর্যন্ত মোটরসাইকেলের দীর্ঘ সারি। একটি ফেরি আসার সঙ্গে সঙ্গে যে যেভাবে পারছেন ফেরিতে উঠছেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র রোদের তাপে ঘাটে থাকা মোটরসাইকেল আরোহীরা ভোগান্তিতে পড়ছেন। যাত্রীরা জানান, বৃহস্পতিবার থেকে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চালু হবে। তবে ছুটি শুরু হওয়ায় ভোগান্তি এড়াতেই বাড়ির পানে বুধবারই ছুটছেন তারা। ঢাকা থেকে যশোরগামী মোটরসাইকেল আরোহী ইব্রাহিম হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চালু হবে। কিন্তু বুধবার ছুটি শুরু। ছুটিতে ঢাকায় বসে থেকে লাভ নেই। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে পারাটাই উত্তম। তাই আজ চলে যাচ্ছি। আরেক মোটরসাইকেল আরোহী সাম মোয়াজ্জেম বলেন, ছুটির প্রথম দিনে ভোরে সেহরি খেয়ে রওনা হয়েছি। যেন যানজট কিংবা ভোগান্তি এড়িয়ে বাসায় যেতে পারি। কিন্তু ঘাটে এসে দেখলাম বিপুলসংখ্যক মোটরসাইকেলের উপস্থিতি। এজন্য ঘাটে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ফেরির সংখ্যা যদি বাড়ানো হয় আমাদের উপকার হতো। বরিশালগামী মোটরসাইকেল আরোহী রুনা বেগম বলেন, সবার সঙ্গে ঈদ করবো। এজন্য আজই চলে যাচ্ছি। মাত্র পাঁচ দিনের ছুটি পেয়েছি। এ পুরো সময়টাকে পরিবারের সঙ্গে কাটাতে চাই। ইয়াকুব হোসেন বলেন, রোদের মধ্যে আমাদের কিছুটা ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে। কিন্তু পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদের ভাগাভাগি করতে যাচ্ছি। তাই এ কষ্টটা খারাপ লাগছে না। এ বিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) শিমুলিয়াঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) জামাল হোসেন বলেন, আজও শিমুলিয়া-মাঝিকান্দি নৌরুটে দুটি ফেরি দিয়ে মোটরসাইকেল পারাপার করা হচ্ছে। ঈদের ছুটি শুরু হওয়ায় আজ চাপ বেশি। আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করছি যাত্রীদের নির্বিঘ্নে পারাপারের। তিনি আরও বলেন, নতুন করে ফেরি বাড়ানো হবে না। কারণ বুধবার থেকে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলবে। প্রতি তিন ঘণ্টা পরপর ফেরি ছাড়ার কথা থাকলেও আমরা শিমুলিয়া থেকে মাঝিকান্দি মোটরসাইকেল নামিয়ে দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ফিরিয়ে আনছি। ৬টা থেকে ৯টার মধ্যে তিনটি ট্রিপ হয়েছে। আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করছি।