আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে লেবুর বাম্পার ফলন হয়েছে মৌলভীবাজারে। সোমবার মৌলভীবাজারে লেবু বাগানগুলোতে সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার লেবু বাগানগুলোতে উঁচু-নিচু পাহাড়ি টিলায় রয়েছে সারিবদ্ধ ভাবে কাগজি, চায়না, পাতি, কাটা, আদা সহ বিভিন্ন জাতের লেবুর বাগান। এসব বাগানজুড়ে গাঢ়সবুজ লেবু ঝুলে রয়েছে। এতে চাষিদের মন আনন্দে ভরে উঠছে।। চাষিরা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাগান থেকে লেবু সংগ্রহ ও বাজারজাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে লেবুর ভরা মৌসুমে সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে অবৈধভাবে লেবু আসায় ন্যায্যমূল্য মিলছে না বলে অভিযোগ করেন চাষিরা। এ কারণে তারা লোকসানের মুখে পড়েছেন।
লেবু চাষি সামছুল হক জানান, উৎপাদনের শুরুতে রমজান মাস চলে আসায় কাগজি লেবুর চাহিদা বেশি থাকায় শ্রীমঙ্গল, কুলাউড়া, জুড়ী, বড়লেখা ও সদর উপজেলার আড়তজুড়ে লেবুর সরবরাহও ছিল প্রচুর। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পাইকার ও আড়তদারদের মধ্যে বেশ ভালো বেচাকেনা হয়। খরার পরও এবার লেবুর ভালো উৎপাদন হওয়ার কথা জানিয়ে জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার লেবু ও আনারস আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য মো. কামরুল হাসান জানান, প্রতিদিন কম করে হলেও ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকার লেবু বিক্রি হচ্ছে। এতে চাষিরাও অনেকটা খুশি।
তবে লেবু চাষিদের অভিযোগ, এখন লেবুর উৎপাদন ও ব্যবসার ভরা মৌসুম। কিন্তু সীমান্তপথে ভারতীয় লেবু বাজারে ব্যাপকভাবে আসা শুরু করেছে। এতে স্থানীয় বাজারে দেশীয় কাগজি লেবুর দাম অনেকটা কমে গেছে। এতে এ অঞ্চলের চাষিরা তাদের উৎপাদিত লেবুর ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না। ফলে লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছেন।
চাষিরা জানান, সার-কীটনাশকসহ বিভিন্ন উপকরণের দাম বেশি হওয়ায় আমাদের উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। কিন্তু ভালো ফলন হয়েছে। দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছিল। তবে ভরা মৌসুমে ভারতীয় লেবু দেশের বাজারে প্রবেশ করায় চাষীরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে লেবু চাষাবাদ ছেড়ে দেয়ার কথাও জানান অনেক চাষি।
ভারতীয় লেবু দেশের বাজারে ঢুকে পড়ার কথা স্বীকার করে শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন জানান, এ উপজেলার সীমান্ত এলাকা প্রায় অরক্ষিত থাকায় ভারতীয় লেবু এখান দিয়ে দেশে ঢুকে পড়েছে। বিষয়টি জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে নিয়ে সমাধানের চেষ্টা চলছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর জেলায় এক হাজার ৭০২ হেক্টর জমিতে ২৭ হাজার ২৩২ মেট্রিক টন লেবুব উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু কৃষি অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের আন্তরিক প্রচেষ্টা, চাষীদের আগ্রহ ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে লেবু চাষ করা হয়েছে। ফলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার মেট্রিক টন বেশি লেবু উৎপাদিত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।