শিলাবৃষ্টিসহ ঝড়ে কালীগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের মাঠে সহা¯্রাধিক হেক্টর জমির উঠতি ইরি ধানসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সোমবার বিকালে বয়ে যাওয়া এ ঝড় ও শিলা বৃষ্টিতে সবথেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নে। এ ছাড়া শিমলা রোকনপুর ইউনিয়নের শিমলা ও পাতবিলা গ্রামের আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একই সাথে মাঠের ধান, পাট, কলা, আম, লিচু ও সবজির ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রচন্ড তাহদাহের মধ্যে বয়ে যাওয়া ঝড় বৃষ্টি কৃষক ও সাধারন মানুষসহ প্রাণীকুলের জন্য আশীর্বাদ হলেও উল্লিখিত এলাকায় ধানসহ ফসলের ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে কি পরিমান ক্ষতি হয়েছে তা মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত জানাতে পারেনি উপজেলা ও জেলা কৃষি অফিস। এদিকে কৃষকরা তাদের ক্ষতিগ্রস্থ জমিতে গিয়ে ফসল নষ্ট দেখে হতাশ হয়ে পড়েছে। অনেক কৃষ কাদছে তাদের জমি দেখে।
কৃষিকর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সোমবার বিকাল ৩টায় বয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ঝড় এবং সাথে শিলাবৃষ্টি বয়ে যায়। এতে য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের উপর দিয়ে বয়ে যায়। এ সময় পার্শবর্তী কোটচাঁদপুর উপজেলার এলাঙ্গী ইউনিয়ন ও কালীগঞ্জ উপজেলার শিমলা রোকনপুর ইউনিয়নের আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
কালীগঞ্জ ত্রিলোচনপুর ইউনিয়ের ছোট ঘিঘাটি গ্রামের স্কুল শিক্ষক এমদাদ হোসেন জানান, আমরা চার ভাই চলতি ইরি মৌসুমে ৮ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলাম। আজ অথবা কাল ধান কাটার কথা ছিল। কিন্তু সোমবার হঠাৎ বয়ে যাওয়া ঝড় ও শিলা বৃষ্টিতে আমাদের জমির ধান সব পড়ে গেছে। ধানের শীষ আছে কিন্তু একটি ধানও নেই। এখন ৮ বিঘা জমিতে এখন ৮ মন ধানও হবে না।
একই ইউনিয়নের বড় ঘিঘাটি গ্রামের স্কুল শিক্ষক মাইনুর রহমান জানান, দুই বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলাম। আজই কাটার কথা ছিল কিন্তু শিলা বৃষ্টিতে আমার জমির একটি ধান আর অবশিষ্ট নেই।
উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্য্যান নজরুল ইসলাম ঋতু জানান, বিকাল তিনটার একটু আগে আকাশে কালো মেঘ জমে বজ্রপাত শুরু হয়। কিছুক্ষণের মধ্যে ঝড়ো হাওয়া ও শিলাবৃষ্টিতে বাড়িঘরের উঠান ভরে যায়। শিলাবৃষ্টিতে আমার ইউনিয়নের মাঠে থাকা উঠতি পাকা ধান, কলা ও ফলসহ সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা বলতে পারেননি চেয়ারম্যান।
উপজেলার শিমলা রোকনপুর ইউনিয়নের পাতবিলা গ্রামের কৃষক আবদুল ওহাব জানান, শিলাবুষ্টিতে আমার এক বিঘা জমিতে এখন ৮ থেকে ১০ মন ধান পাওয়া যাবে। মাঠের বাকি জমিতেও ধানের একই অবস্থা। একই সময় মাঠের পাট, কলা ও সবজির ব্যবপক ক্ষতি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
শিমলা রোকনপুর ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মধাব চন্দ্র বিশ^াস জানান, সোমবারের শিলাবৃষ্টিতে ইউনিয়নের শিমলা ও পাতবিলা গ্রামের মাঠে প্রায় ২০ হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একই সাথে ২০ শতাংশ কলা ও পাট নষ্ট হয়েছে। কিছু কিছু জমির পাট গাছ শিলায় শতভাগ কাটা পড়েছে বলে যোগ করেন।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাহবুব আলম রনি জানান, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করছি। কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা এখনি বলা যাচ্ছে না। তবে উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের মাঠে পাকা ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
জেলা কৃষি কর্মকর্তা আজগার আলী জানান, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত মাঠে আছি। এখনি বলতে পারছি না কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে শিলাবৃষ্টিতে কিছু কিছু এলাকায় কৃষক এমন ক্ষতি হয়েছে যা বর্ণনা করার মত না বলে যোগ করেন এ জেলা কৃষি কর্মকর্তা।