রংপুরের কাউনিয়া উপজেলায় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে স্লোগান দেওয়া নিয়ে এক কর্মীকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) সন্ধ্যায় আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এ- অপারেশন) সুলতানা রাজিয়া।
আটকরা হলেন; সাবেক ইউপি সদস্য মোজাম্মেল হক (৫৩), কাউনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব (৪৫), মাইদুল ইসলাম হুজুর (৫০), আওয়ামী লীগ কর্মী আবদুল গফফার ও ইউপি সদস্য মফু সালাম (৪৮)।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। তবে মামলা প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সোমবার (২৪ এপ্রিল) বিকেলে হারাগাছে কাউনিয়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে এলে নেতাকর্মীরা শ্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যান আনারুল ইসলাম মায়া ও ভাইস চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক গ্রুপের মধ্যে স্লোগান দেওয়াকে কেন্দ্র করে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। তখন বাণিজ্যমন্ত্রী দ্রুত অনুষ্ঠান শেষ করে চলে যান।
রাত আটটার দিকে খানসামারহাটের ইমামগঞ্জ স্কুল এ- কলেজের মাঠে আওয়ামী লীগের দুপক্ষের মধ্যে আবারও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই সোনা মিয়া নামে আওয়ামী লীগের এক কর্মী নিহত হন। নিহত সোনা মিয়া উপজেলার হারাগাছের নাজিরদহ এলাকার মৃত আবদুল খালেকের ছেলে। তিনি হারাগাছ ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য।
নিহতের ভাতিজা আলমগীর হোসেন জানান, বিকেলে বাণিজ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে স্লোগান দেওয়া নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। এ নিয়ে রাত ৮টার দিকে চাচা সোনা মিয়াকে ইমামগঞ্জ স্কুলের সামনে একা পেয়ে আওয়ামী লীগের আবদুর রাজ্জাকের পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র দিয়ে বেধড়ক মারপিট করে। এতে মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ঘটনাস্থলে চাচার মৃত্যু হয়।
এদিকে ঘটনা জানাজানি হলে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের ১০ জন আহত হয়েছেন।
সংঘর্ষের পরপরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রংপুরের পুলিশ সুপার ফেরদৌস আলী চৌধুরীসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তারা গিয়ে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।
রংপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এ- অপারেশন) মোছাৎ সুলতানা রাজিয়া জানান, বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সংঘর্ষের পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারজনকে পুলিশি হেফাজতে নেয়া হয়েছে।
এদিকে সংঘর্ষে নিহত সোনা মিয়ার জানাজা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটায় হারাগাছ ইউনিয়নের ইমামগঞ্জ স্কুল এ- কলেজ মাঠে তার জানাজা হয়। এতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আনারুল ইসলাম মায়া, সাধারণ সম্পাদক আবদুল হান্নানসহ উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। জানাজা শেষে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে একটি বিক্ষোভ বের করেন।