আমার হজ সফরের প্রস্তুতি পর্বে বেশ কিছু বই-পুস্তকের সঙ্গে পরিচিত হই। তার মধ্যে যে দুটি বই আমার মনে দাগ কেটেছে তার নাম উল্লেখ না করে পারছি না। (১) আমাদের রুহানি পিতা হজরত হাফেজ্জী হুজুরের হেধন্য প্রবীণ উস্তাদ মাওলানা আবু তাহের মেসবাহের ‘বাইতুল্লাহর মুসাফির’। (২) স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও রুহানি পিতা মওলানা ভাসানীর স্নেহেরধন্য প্রবীণ অধ্যাপক মুহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন খানের ‘চোখের জলে প্রেমের হজ’। ‘হজ’ প্রেমে আকীর্ণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। ইসলামের অন্যতম রোকন। কিন্তু সেই প্রেমের হজের মজা পাই না কেন ভাবতে ভাবতে রুকনে ইয়ামেনিতে বসে এক ইলহামি বাণী মনে উদয় হয় ‘খোদার মেহমান হাজী সকল, রাজা-বাদশাহ শুধু রাজার’, ‘মাজাজি’ সব মেহমান নিয়ে সরগরম এ কাবার বাজার। খোদার প্রেমে নেই মনোযোগ তাওয়াফ নিয়ে ব্যস্ত সবাই, ভুলে গেছে হাজী সকল কোথায় বিকায় প্রেমের সদাই। মুলতাজিমের পেছনে বসে কান্নাকাটি কর যদি হাতিম পাশে বসে কাঁদো বইবে খোদার প্রেমের নদী। বর্তমানে আমাদের হƒদয়ে প্রেমের নদী বইছে না বলেই বিশ্বে যত সমস্যা। সব সমস্যা সমাধানের জন্যই নবী-রাসূল (আ.)-দের আগমন ঘটেছিল। তারা বিভিন্ন কর্মনীতি, ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে মানবতাবোধ জাগিয়ে তুলেছিলেন। কিন্তু এখন আমরা তাদের পথ থেকে দূরে সরে সেই ইবাদত-বন্দেগিকে রুটি-রুজির হাতিয়ারে পরিণত করেছি। যে হজ করে এসে মানুষ সাধু হয়ে যওয়ার কথা এখন সেই হজ করে মানুষ সাধু না হয়ে সাধু সাজে আর মানুষকে হজের নামে ধোঁকা দেয়। আমি নিজে দেখেছি হজের সফরে মিনা-মুজদালিফা ও আরাফাতে ইবাদত-বন্দেগির বদলে অন্যসব বৈষয়িক বস্তু নিয়ে কী রকম ব্যস্ত থাকেন হাজীরা। এ ভুলগুলো শোধরানো যাদের দায়িত্ব তারা আরও বেশি ভুলে নিমজ্জিত, তাই শোধরাতে পারে না। এবারের হজের উসিলায় আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সবাইকে মাফ করে দিয়ে নবুয়তি নূরে আলোকিত করে শান্তির পৃথিবী গড়ার খাদেম বানিয়ে তুলুন। আমিন।