বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের ঐতিহাসিক গৌরবময় দিন পয়লা মে। সারাবিশ্বে প্রতি বছর যথাযথ মর্যাদা ও গুরুত্বের সাথে উদযাপিত হয়ে আসছে মে দিবস। পৃথিবীর কোটি কোটি শ্রমিক জনগোষ্ঠীর কাছে এ দিনটি একদিকে যেমন খুবই তাৎপর্যময় ও গুরুত্বপূর্ণ তেমনি অনেক বেশি আবেগ ও প্রেরণার। ইতিহাসের পাতায় মে দিবস উজ্জ্বল হয়ে থাকলেও শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম এখনো শেষ হয়নি। অথচ দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে এই অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকদের রয়েছে বড় ভূমিকা। ১৮৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে শ্রমের ন্যায্য দাবি প্রতিষ্ঠিত করার আন্দোলনে আত্মাহুতি দান করেছিলেন শ্রমিকরা। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ১৮৯০ সাল থেকে এই দিবসটি বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে। আমাদের দেশেও বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ১৮৭২ সাল থেকে বাংলাদেশে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মাধ্যমে মে দিবস পালিত হয়। বাংলাদেশে মে দিবসে সরকারি ছুটি কার্যকর আছে। প্রতি বছর মে দিবস উদযাপনের মধ্য দিয়ে শ্রমিকরা একদিকে যেমন তাদের অধিকার আদায়ে রক্তাক্ত ইতিহাসকে স্মরণ করে যেমন স্বপ্ন দেখে তাদের ষোলআনা অধিকার প্রাপ্তির। কিন্তু আজও বাংলাদেশের শ্রমিকদের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়নি।
আমাদের দেশের শ্রমিকেরা বিভিন্ন সেক্টরে তাদের শ্রম দিয়ে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিচ্ছেন। শুধু দেশেই নয় দেশের বাইরে বিশাল সংখ্যক প্রবাসী শ্রমিক জনগোষ্ঠী অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে দেশে অর্থ পাঠিয়ে দেশকে সমৃদ্ধ করছেন।আমাদের দেশে বর্তমানে শিশুশ্রমের ব্যাপক ব্যবহার চলছে। এছাড়াও মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করানো হচ্ছে শিশুদের দিয়ে। আর এসব শিশু শ্রমিকেরা নানাভাবে বিভিন্ন সময় মালিক শ্রেণি ধারা নির্যাতিত হয়। বাংলাদেশে শতকরা ৮০ ভাগ কৃষকের বসবাস হলেও কৃষকের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। দেশের রপ্তানি আয়ের এর ৭০% আয় হয় যে তৈরি পোশাক শিল্পে অথচ গুরুত্বপূর্ণ এ শিল্পের শ্রমিকদের মানবেতর জীবন যাপন করতে হয়। মালিক শ্রেণির শোষণের ফলে অসহায়ের মতো গার্মেন্ট শ্রমিকদের জীবন দিতে হয় বিভিন্ন সময়। বাংলাদেশের এই বিশাল সংখ্যক শ্রমিকের ভাগ্যোন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতি বছরই আমাদের দেশে মে দিবস পালিত হলেও এদেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে যারা সবচেয়ে বড় অংশীদার তাদের অধিকারের কথাগুলো সরকার থেকে শুরু করে আমরা সবাই ভুলে যাই। ফলে মে দিবস আসে মে দিবস চলে যায় কিন্তু শ্রমিকদের ভাগ্যের উন্নয়ন হয় না।
মে দিবস পৃথিবীতে বঞ্চনা ও শোষণ থেকে শ্রমজীবী মানুষের মুক্তির বার্তা নিয়ে এসেছে তা তখনই প্রতিষ্ঠিত হবে যখন শ্রমিক শ্রেণি তাদের মৌলিক অধিকার ফিরে পাবে। তাই মালিকদের উপলব্ধি করতে হবে এবং শ্রমিকদের ঠকিয়ে শিল্পের বিকাশ বা মুনাফা অর্জন করা যাবে না। শ্রমিকরা দেশের সম্পদ, তাদের কারণে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রয়েছে। এ কারণে তাদের অবহেলার চোখে দেখার কোনো সুযোগ নেই। আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের কাজের ও জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। অসংগঠিত খাতের লাখ লাখ শ্রমিকের জীবনের সমস্যাগুলো দূর করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। সবার জন্য বেঁচে থাকার মতো নূন্যতম মজুরি নিশ্চিত করতে হবে। সব খাতেই শ্রমিকদের জন্য ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার দিতে হবে। শ্রম আইন যাতে বাস্তবায়িত হয় তার প্রতি কঠোর নজরদারি থাকতে হবে।