ফরিদপুরের মধুখালীতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের জায়গার মালিকানা নিয়ে বিরোধের জেরে ইউএনওর উপর এলাকাবাসীর হামলার ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৪ মে) রাত ও শুক্রবার (৫ মে) সকালে এ দুটি মামলা দায়ের করা হয় মধুখালী থানায়। দুটি মামলায় এক নম্বর আসামি করা হয়েছে ডুমাইন ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান ও মধুখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহ আসাদুজ্জামানকে।
মধুখালী থানা সুত্রে জানা গেছে একটি মামলা বাদী ইউএনও আশিকুর রহমান চৌধুরীর গাড়ি চালক সুমন শেখ। অপর মামলার বাদী মধুখালী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) প্রবীর কুমার বিশ্বাস। দুটি মামলায় ২৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আসামি দেখানো হয়েছে আরও দুইশ থেকে আড়াইশজনকে। মামলায় ডুমাইন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারমান শাহ মোহাম্মাদ আসাদুজ্জামান তপন, নিশ্চিন্তপুর গ্রামের মোঃ মাহাফুজ মোল্যা ছেলে মোঃ প্রিন্স মোল্যা, শুকুর আলী মৃধার ছেলে ইব্রাহিম মোল্য ও কবিরুল ইসলামকে আটক করেছে পুলিশ। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টা থেকে শুক্রবার সবাল ৬টা পর্যন্ত পুলিশ নিশ্চিন্তপুর গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে তল্লাশি অভিযান পারিচালনা করে। তবে বাড়িগুলি পুরুষ ও হামলায় অংশ নেওয়া নারীরা না থাকায় কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। গাড়ি চালকের সুমন শেখের দায়ের করা মামলায় সরকারি কাজে বাধা, ইচ্ছাকৃত ভাবে আঘাত করে জখম করা ও সরকারি সম্পত্তি ভাংচুর ও চুৃরির অভিযোগ আনা হয়েছে। এসআই প্রবীর কুমার বিশ্বাসের দায়ের করা মামলায় পুলিশের উপর হামলা, গাড়ি ভাংচুর করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহীদুল ইসলাম বলেন, গ্রামবাসীদের হামলায় চার পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এরা হলেন এসঅঅই প্রবীর কুমার বিশ্বাস ও কনস্টেবল মো. আলী হোসেন, মাহমুদ খান ও আবু হানিফ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সর্টগানের চারটি এবং ইউএনওর দেহরক্ষী আনসার সদস্যরা দুটি সিসার ও চারটি রাবার বুলেট ছুড়ে। ওসি বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া আসামিকে শুক্রবার আদালতে সোপর্দ করা হবে। তাদের রিমান্ড চাওয়া হবে কিনা এ বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে মধুখালী রেলগেট এলাকায় ইউএনওর উপর হামলার ঘটনার প্রতিবাদ ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয় ‘বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি মধুখালী উপজেলা শাখা’, ‘উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা পরিবার’ ও উপজেলা মদরাসা শিক্ষক সমিতির এর উদ্যোগে।
প্রসঙ্গত বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে নিশ্চিন্তপুর গ্রামে আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ শুরু নিয়ে এলাকাবাসী প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠেন। তারা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। ওই সময় ইউএনও ঘটনাস্থলে গেলে তার দেহরক্ষী আনসার সদস্যদের সাথে মানববন্ধনের ব্যানার নিয়ে নারীদের সাথে ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে আইরিন নামে এক নারী আহত হন। অভিযোগ আনসার সদস্য তাকে আগ্নেয়ান্ত্রের বাট দিয়ে আঘাত করায় এ ঘটনা ঘটে। পরে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে হামলা করলে ইউএনও, চালক, দেহরক্ষী, কাজের ঠিকাদার, চার নারী, চার পুলিশ সদস্যসহ মোট ১৫জন আহত হন।