জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন বৃদ্ধা মনিমালা (৬২)। জীবনের চাকা সচল রাখতে প্রতিনিয়ত ঘুরিয়ে চলছেন পায়ে চালিত ভ্যানের চাকা। পুরুষের মত ভ্যান চড়ে চালাতে না পারলেও ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা মনিমালা মাল বোঝাই ভ্যানটি দুই হাতের সাহায্যে টেনে নিয়ে ছুটে চলেছেন গ্রাম থেকে গ্রাম এক হাট থেকে অন্য হাটে। ভ্যানের চাকা না ঘুরলে সংসারের চাকা যে ঘোরে না তার। একদিন মাল বিক্রি বন্ধ থাকলে অনাহারে অর্ধহারে থাকতে হয় তার পরিবারকে। অদম্য ইচ্ছার জোরে ভ্যান চালিয়ে সংসারের চাকা সচল রাখার চেষ্টা করছেন তিনি। অপর্যাপ্ত ও অনিয়মিত রোজগারে চলা একটা পরিবারের প্রধান হিসেবে মনিমালা সদস্যদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারপরও প্রায় ২৫ বছর ধরে ভ্যানে মাল বয়ে গ্রামগঞ্জে হাট বাজারে মাটির তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি করে বেড়াচ্ছেন তিনি। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের মৃত আশুতোষ কুমার পালের স্ত্রী মনিমালার সংগ্রামী জীবনের কথা। নলডাঙ্গা দুর্গাপুরে ছেলে-বৌমার সাথে পরের জমিতে ঘর করে থাকলেও মনিমালা কালীগঞ্জ পৌরসভার শিবনগর এলাকার একজন ভোটার। ২৫ বছর হলো স্বামীহারা হয়েছেন তিনি। তারপর থেকেই সংসারের বোঝা ঘাড়ে নিয়ে বয়ে বেড়াচ্ছেন। এক ছেলে এক মেয়েকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে অর্ধহারে দিন কাটান মনিমালা। এরইমধ্যে মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন শিবনগর এলাকায়। ছেলেকেও করিয়েছেন বিয়ে। নলডাঙ্গা বাজারের একটি ভাংড়ি দোকানের কাজ করে ছেলে একা সংসার চালাতে পারে না। যে কারণে মনিমালা ভ্যানে করে বিভিন্ন হাটে ও গ্রাম বাজারে মাটির তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি করে থাকেন। কালিগঞ্জ শহরে শুক্র ও শনিবার হাটের দিন হাসপাতাল সড়কে মুসলিম বেকারীর সামনের ফুটপাতে রাস্তায় এবং শনি ও মঙ্গলবার নলডাঙ্গা বাজারে মনিমালাকে মাটির তৈরি নানা রকম জিনিসপত্রের পরসা সাজিয়ে বসতে দেখা যায়। আবার ভাটপাড়া আনন্দবাগ,পাইকপাড়া, জগন্নাথপুরসহ অনেক গ্রামেভ্যানে করে ঘুরে ঘুরে মাটির জিনিসপত্রও তিনি বিক্রি করে থাকেন। বৈরী আবহাওয়া কিংবা শরীরের ক্লান্তি সবকিছুকে উপেক্ষা করে দিনের-পর-দিন মনিমালা নিজেই মাটির তৈরি জিনিসপত্র বোঝাই ভ্যান টেনে বিক্রি করছেন মাল।মাটির তৈরি ব্যাংক, হাড়ি, বাচ্চাদের খেলনার মতো ছোট ছোট জিনিসপত্র বাড়িতে বসে তিনি নিজেই তৈরি করে এবং ভাড়,মালসা,চাড়ির মতো মাটির তৈরি বড় জিনিসপত্র গুলো কিনে এনে বিক্রি করেন। হাটে কিংবা গ্রামে গ্রামে ঘুরে তিনি প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকার মতো মাল বিক্রি করে থাকেন তিনি।এতে করে তার লাভ হয় মাত্র ২০০ টাকা। দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতির এ সময়ে এত অল্প টাকা রোজগার করে সংসার চালাতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছেন বৃদ্ধা মনিমালা। দিনে দিনে শরীরের শক্তিও কমে আসছে। যার কারণে কপালে তার চিন্তার ভাঁজ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে।
শ্রমজীবি ষাটোর্ধ্ব মনিমালা আক্ষেপ করে বলেন,আমি একজন মহিলা মানুষ হয়েও বেঁচে থাকার তাগিদে কাজ করি। মাল বোঝাই ভ্যান টানতে খুব কষ্ট হয় আমার। কিন্তু অন্য কোনো উপায় যে নেই আর আমার হাতে।নিজের বলে কিছুই নেই ; মাথাগোঁজার ঠাঁইও নেই আমার। শুধুমাত্র বিধবা ভাতা ছাড়া আর কোনো সরকারি সাহায্য সহযোগিতা আমি পাই না। হাট বাজারে একটা স্থায়ী দোকান থাকলে আমাকে আর ভ্যান ঠেলে মাল বিক্রি করা লাগত না। দোকান যে করব সেই সামর্থ্য যে আমার নেই। সৃষ্টিকর্তা এভাবে যে কয়দিন চালাই সে কয়দিনই চলবো।