কৃষি প্রধান বাংলাদেশ, “কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে” মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এমন ঘোষনায় কৃষিখাতকে গুরুত্ব দিয়ে সারের ভর্তুকি প্রদান করেছেন সরকার। কিন্তু সংশ্লিষ্ঠ কৃষি বিভাগের উদাসীনতা ও অব্যবস্থাপনায় বাগেরহাটের চিতলমারীতে সার সিন্ডিকেট এর দৌরত্ম চরমে উঠেছে। ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের সার ডিলারদের মধ্যে দুর্নীতি ও অনিয়ম যেন দেখার কেউ নাই। গোডাউনের মজুদ সার বর্ধিতমূল্যে বিক্রিকরে চাষিদের কাছ থেকে প্রায় ৩৩লক্ষ টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে হাতিয়ে নিতে বেচা-বিক্রি শুরু করে দিয়েছে ডিলাররা।
একদিকে সরকারী নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সারের বাড়তি মূল্য নেওয়া হচ্ছে। অপরদিকে ইউনিয়ন ডিলাররা- চাষি ও সাব ডিলারদের সরকারী নির্ধারিত মূল্যের সার বিক্রির রশিদ প্রদান করছেন না। ফলে গোজা মিলের হিসাব নিকাশে সরকার কর্তৃক কৃষকের ভর্তুকীর সার বর্ধিতমূল্যে বিকিকিনি চলছে। এমনকি সাব ডিলারদের কোটার সার কালোবাজারে বিক্রি করার কারণে উপজেলার বিভিন্ন মুদি দোকানে লাইসেন্স বিহিন বিভিন্ন সার ও কীটনাশক বিক্রি হচ্ছে। এর ফলে সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে অপর দিকে সরকারি নীতিমালা লঙ্ঘন হচ্ছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সরকার ঘোষিত সর্বশেষ সারের বর্ধিত মূল্যের আগে মজুদকৃত সার প্রকার ভেদে প্রতিকেজি ২৭ থেকে ৩০ টাকা দরে খুচরা ও পাইকারী দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
গত ১০ এপ্রিল সরকার ঘোষিত প্রতিকেজি সার প্রকার ভেদে পাঁচ টাকা বাড়ানো হয়। তবে বাড়তি মূল্যে সার বিক্রি করতে পারবেনা, যদি কারো গোডাউনে ১০এপ্রিল নাগাত সার মজুদ থাকে এমন ডিলারগন।
১০ এপ্রিল ২০২৩ তারিখ উপজেলা কৃষি অফিসের হিসাব মতে চিতলমারীতে জয় অয়েল এজেন্সির সার মজুদ ছিলো: ইউরিয়া-৯৭০ বস্তা, টিএসপি-৪১২বস্তা,ডিএপি-৫১৪ বস্তা,এমওপি-১৩১বস্তা। সানজিদা এন্টার প্রাইজ, ইউরিয়া-২৪৭বস্তা, টিএসপি-৭২০বস্তা, ডিএপি-২০০ বস্তা,এমওপি-৭০বস্তা। শেখ ট্রেডার্স,ইউরিয়া-৯৪০বস্তা,টিএসপি-১১০২বস্তা,ডিএপি-১৫১বস্তা,এমওপি-৩১৩বস্তা। ভাইভাই ট্রেডার্স, ইউরিয়া-৫৯৮বস্তা, টিএসপি-৭৮০বস্তা, ডিএপি-৩১০বস্তা, এমওপি-১৩২। হাজরা ট্রেডার্স, ইউরিয়া-১০৮৪বস্তা, টিএসপি-৯৫৩বস্তা, ডিএপি-৩০৫বস্তা, এমওপি-১১১বস্তা। এন এস ট্রেডার্স, ইউরিয়া-১১৪০বস্তা, টিএসপি-৫১৮ বস্তা, ডিএপি-৩০৫বস্তা, এমওপি-২৩২বস্তা। জয় এন্টার প্রাইজ, ইউরিয়া-৯৫বস্তা, টিএসপি-৪০০বস্তা, ডিএপি-৩০০বস্তা এবং এমওপি-৯০বস্তা। ওই সারগুলি বর্ধিত দরের আওতায় বিক্রি করতে সরকারী বিধি নিষেধথাকা সত্বেও এই দুর্নীতি এবং অনিয়মের আশ্রায় নিয়ে প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে বর্ধিতমূল্য।ফলে সিন্ডিকেটের রোশানলে চাষীদের সার ক্রয়ে বাড়তি গুনতে হচ্ছে ৩২লক্ষ ৭৮ হাজার ৭৫০ টাকা।
কুরমনি গ্রামের চাষি সচিন বিশ^াস জানান আমি মাত্র কয়েক কেজি ডিএপি সারেরজন্য সার ডিলার কালাম শেখ এর দোকান, জীবন হাজরার দোকানসহ শেষে ডিলার মাও: সোহেল শেখের দোকানে গেলে সরকারী বরাদ্ধের সার নাই বলে জানিয়েছে।
কাননচক বাজারের সাব ডিলার আনিচ খান জানান ইউনিয়ন ডিলার নেকবারের কাছে বারবার সারের জন্য যাওয়া হলেও তাকে ফেরত দেয়া হয়েছে। পরে বেশী দামে ২বস্তা সার কিনে দোকান চালাচ্ছেন।বিষয়টি উপজেলা কৃষি অফিসারকে জানিয়ে কোন ফল হয়নি।আমার ওয়ার্ডের চাষিদের ঠিকমত সার দিতে পারছিনা।
দলুয়াগুণী বাজারের ওয়ার্ড ডিলার ফারুক জানান, জয়ওয়েল এর ডিলার পান্নু ফকির এর কাছথেকে বেশীদামে সার এনেছি। তিনি বাড়তি দামের আগের সার বিক্রি করছেন বাড়তি দামে। তার সামনে প্রমান দিতে পারবো তবে ক্যামেরর সামনে কথা বলতে রাজি হননি তিনি। তিনি আরো জানান সার ক্রয়ের কোন রশিদ দেন না তিনি।
এছাড়া চর বড়বাড়িয়া এলাকার ওয়ার্ড ডিলার সুকুমার বনিক জানান তিনি জয় এজেন্সির ডিলার পান্নু ফকির এর কাছ থেকে মাত্র ১বস্তা ইউরিয়া সার এনেছেন।১বস্তার দাম চেয়েছেন ১৩২০ টাকা দিয়েছেন ১৩০০টাকা। তবে কোন মেমো তাকে দেয়া হয়নি।
এব্যপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইয়েদা ফয়জুন্নেছা জানান, সরকারী বর্ধিত মূল্যের ডিলারদের গোডাউনে যে সকল সার মজুদ ছিলো তা বাড়তি মূল্যে বিক্রি করা হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সিফাত আল মারুফ জানান, আইনের বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই, আপনারা সহযোগিতা করুন। উপজেলা সার ডিলার সমিতির সভাপতি মাও: মো: সোহেল শেখ জানান ভাই মিথ্যা কথা বলবোনা। কমরেটেও বিক্রি করছি আবার বাড়তি রেটেও দাম নিচ্ছি।